Ajker Patrika

আঁধার হলেই পদ্মায় মহোৎসবে বালু লুট

  • প্রতিদিন ভোর পর্যন্ত প্রায় ৫০টি খননযন্ত্র (ড্রেজার) সক্রিয় থাকে।
  • প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এগুলো চালান মালিকেরা।
বেলাল হোসাইন, শরীয়তপুর
Thumbnail image
শরীয়তপুরে পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত অবৈধ খননযন্ত্রের সারি। সম্প্রতি জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকা থেকে তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা

শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় রাত নামতেই শুরু হয় পদ্মা নদীর বালু লুটের মহোৎসব। প্রতিদিন প্রায় ৫০টি খননযন্ত্র (ড্রেজার) সক্রিয় থাকে ভোর পর্যন্ত। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধসহ দুই উপজেলার ডান তীর রক্ষা বাঁধ। প্রশাসন বলছে, আটক-জরিমানা করেও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের থামানো যাচ্ছে না।

অবৈধভাবে বালু তোলার ফলে জাজিরার মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্টে দেড় মাস আগে পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার অংশ ধসে পড়ে। গত দুই-তিন মাসে নদীগর্ভে চলে গেছে পাইনপারা আহমেদ মাঝিকান্দি গ্রামের মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুলসহ তিন শতাধিক বসতভিটা। শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলছেন, অপরিকল্পিত খননের ফলে যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে নদীর গতিপথ। স্রোত এসে আঘাত হানতে পারে ডান তীর রক্ষা বাঁধে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, তীর রক্ষা বাঁধ বরাবর নড়িয়ার কেদারপুর সাধুর বাজার, চর আত্রা, নওপাড়া, ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা এবং জাজিরার কুণ্ডের চর, বাবুর চর ও সিডা চর এলাকায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু বাল্কহেডে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এ বালুই স্থানীয়ভাবে ভিট বালু নামে পরিচিত। বিভিন্ন নিচু এলাকা ভরাটের কাজে এগুলো ব্যবহার করা হয়। চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রভাবশালী মহলটি বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েও কোনো ফল পাননি। উল্টো প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকে। বালুখেকোরা স্থানীয়ভাবে প্রভাশালী হওয়ায় কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পান না। তাঁরা অভিযোগ করেন, শরীয়তপুর জেলায় তিনটি নৌ পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। এর মধ্যে নড়িয়ার সুরেশ্বর ও জাজিরার মাঝিরঘাট ফাঁড়ি দুটির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ফাঁড়ি দুটির নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

এ নিয়ে কথা হলে চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘জনবলসংকট থাকার পরও আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করি। তারপরও অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের থামানো যাচ্ছে না। তবে কিছুতেই পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া যাবে না। আমরা এই ব্যাপারে সোচ্চার আছি।’

অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে একজন জাজিরার সফি কাজীর মোড় এলাকার রফিক খাঁ। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি চারটা ড্রেজার চালাই। আমার সঙ্গে আছে উজ্জ্বল। বাবুর চর থেকে সুরেশ্বর পর্যন্ত অনেকেই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে দেলোয়ার খাঁর তিনটা, জসিম মল্লিকের ছয়টা, ফিরোজ খাঁর তিনটা ছাড়াও রিপন শেখ, আজহার শিকারি, সোহাগ, নুরুজ্জামান শেখ, শোভন খান, দিলু খানসহ অনেকের আলাদা আলাদা ড্রেজার রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে উজ্জ্বলই প্রশাসনসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, তাঁরা ড্রেজারসহ ২৫ জনকে আটক এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। তারপরও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের থামানো যাচ্ছে না। বাঁধ রক্ষার স্বার্থে তাঁদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে জাজিরার ইউএনও কাবেরী রায় বলেন, দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে ৫টি অবৈধ ড্রেজার জব্দ, ৪০ জনকে সাজা এবং প্রায় ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবুও তাঁদের থামানো যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত