Ajker Patrika

৬৪ শতাংশ অভিবাসী নারী কাজের চুক্তিপত্র পান না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
৬৪ শতাংশ অভিবাসী নারী কাজের চুক্তিপত্র পান না

৬৪ শতাংশ নারী অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে কাজের চুক্তিপত্র পান না বলে জানিয়েছেন অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বোমসা) পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন। আজ সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের জাতীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানান তিনি। 

সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মাহমুদা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কর্মজীবী নারীর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা, নারীপক্ষ-এর নির্বাহী কমিটির সদস্য রীনা রায় এবং মুক্ত নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মমতাজ আরা বেগমসহ নারী অধিকার বিষয়ক ১৫টি সংগঠন ও প্রবাস ফেরত নারী শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করা ৩ জন নারী তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অভিবাসী নারী শ্রমিকদের ‘বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের পথ’ শীর্ষক একটি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপন করা হয়। এতে দালালদের আইনের অন্তর্ভুক্ত করা এবং দূতাবাসের সেবা ও আইনি সহায়তাগুলো বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। 

মাহমুদা বেগম বলেন, ‘দালালেরা জানে কারা দুর্বল, তাঁদের ধরার চেষ্টা করে। বিভিন্ন দেশে তাঁদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নারী ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে যেসব সংগঠন তাদের একত্রিত হয়ে কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘করোনার কারণে ১ লাখ নারী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। এ সময় তাঁরা সবচেয়ে বেশি ‘মজুরি চুরির’ (ওয়েজ থেফট) শিকার হয়েছেন। দেশে নারীদের টাকা ছাড়া বিদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও ৫৮ শতাংশ নারী টাকা খরচ করে যাচ্ছেন। ৬৪ শতাংশ নারী অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে কাজের চুক্তিপত্র পান না। দালালেরা ২৫ শতাংশ নারীকে বয়সের ভুয়া সনদ দিয়ে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও তথ্য না জানার কারণে সেবা নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন নারীরা।’ 

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, অভিবাসী আইন ২০১৩-এর ২২ ধারা সংশোধন করে কর্মঘণ্টা, বিশ্রাম, ছুটির বিষয়গুলো চুক্তিপত্রের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই আইনে ছোট্ট ফাঁকের কারণে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো জবাবদিহির বাইরে থেকে যাচ্ছে। আইএলও ১৯০ অনুস্বাক্ষরিত না হওয়ায় সাধারণত নারী শ্রমিকদের সমঝোতা চুক্তিতে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে, এতে তাঁরা যেমন অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন, একই সঙ্গে অপমৃত্যুর ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার দেওয়া যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সিডও চুক্তি ধরে সামনে এগোতে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। 

রীনা রায় বলেন, ‘নারীশ্রমিকেরা যেখানে কাজ করার কথা সেখানে কাজ পেলেন কি না, তার কর্মঘণ্টা, ছুটি ইত্যাদি বিষয়ে কোনো মনিটরিং নেই। এই মনিটরিংয়ের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। যাঁরা বিদেশে যেতে চান তাঁদের কমিউনিটি পর্যায়ে গ্রুপ করে প্রি-ডিসিশন, দক্ষতা নিয়ে আলোচনাসহ বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করার কাজ নারী অধিকার সংগঠনগুলো করতে পারে।’ 

রীনা রায় বলেন, ‘গন্তব্য দেশে বাংলাদেশের অভিবাসী আইন ২০১৩ কার্যকর নয়। আবার গন্তব্য দেশের শ্রম আইন অভিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমাদের সুপারিশ হলো গন্তব্য দেশে অভিবাসী ও সাধারণ মানুষের জন্য একই শ্রম আইন যেন প্রণয়ন করা হয়।’ 

মমতাজ আরা বলেন, ‘রেমিট্যান্স আমাদের প্রধান আয়ের উৎস। অথচ এই খাতে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। তাঁদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয় না। উপরন্তু ২৪ ঘণ্টা কাজ করানো, পরিবারের সবাই মিলে ধর্ষণের মতো নির্যাতন তাদের ওপর চলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, পুলিশকে অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে ওরিয়েনটেশনের ব্যবস্থা করা উচিত। সেই সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকে রেমিট্যান্স ও অভিবাসনকে বিষয়বস্তু হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।’ 

মতবিনিময় সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে কতগুলো সুপারিশ করা হয়। এর মধ্য রয়েছে—অভিবাসন প্রত্যাশী নারীদের জন্য গন্তব্য দেশ অনুযায়ী যুগোপযোগী ৩ মাসব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ ঠেকাতে ভিসা অনুমোদনের পরই সরকারি ঋণ সুবিধা পাওয়ানোর ব্যবস্থা করা। দালালের প্রভাব কমাতে থানা পর্যায়ে এজেন্সির শাখা খোলাসহ স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পাসপোর্ট অফিস রাখা প্রস্তাব করা হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবন বিলিয়ে দিয়ে উত্তরার মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের বাঁচালেন, কে এই মাহরীন চৌধুরী

প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না, সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার সুযোগ

পাচার করা ৭৮১ কোটি টাকা ফেরত দিতে চেয়েও জামিন পেলেন না নাসার চেয়ারম্যান নজরুল

পাইলটের শেষ বার্তা: বিমান ভাসছে না, নিচে পড়ছে

মেয়ের কফিনে বাবার চুমু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত