Ajker Patrika

সবাইকে নিয়ে হাসছিলেন, একটু পরেই কাঁদালেন

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
সবাইকে নিয়ে হাসছিলেন, একটু পরেই কাঁদালেন

পুনর্মিলনীতে এসে অনেক বছর পর পুরোনো বন্ধুর খোঁজ পেয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন লুৎফুল কিবরিয়া ও মোহাম্মদ ফরিদ। কোলাকুলি করতে করতে নাচছিলেন দুজনই। মুখ ভরা হাসি নিয়ে সেই উৎসবে শামিল হন মোহাম্মদ ওসমান গণিও। কিন্তু কে জানত, সেই মানুষটিই একটু পর কাঁদাবেন সবাইকে। চলে যাবেন জীবনের ওপারে!

ওসমান গণি ‘চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান’-এর এইচএসসি ব্যাচ-১৯৯৩ এর প্রতিনিধি ছিলেন। গতকাল শুক্রবার রাতে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলছিল নগরীর নেভি কনভেনশন সেন্টারে। গান-আড্ডা-স্মৃতিচারণ—সবই চলছিল ধারা অনুযায়ী। এমন সময় হাসতে হাসতেই ওসমান গণি ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে।

শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন ওসমান গণি। পরে ধরাধরি করে সতীর্থরা তাঁকে নিয়ে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। ঘড়ির কাঁটা রাত ৮টা ৫ মিনিটের ঘরে পৌঁছাতেই সব শেষ। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওসমান গণি।

চমেক থেকে ওসমানের মৃত্যুর খবর অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। ওসমান পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনের নিবন্ধন উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। চেয়েছিলেন অনুষ্ঠানটা শেষ হোক সুন্দরভাবেই। সে জন্যই তাঁর মৃত্যুর পর ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’ নীতি মেনে সতীর্থকে সম্মান জানান তাঁর বন্ধুরা! রাতে সেই অনুষ্ঠানের ফাঁকে বড় পর্দায় ভেসে ওঠে ওসমানের হাসিমুখ। সবাই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁকে। শোকাতুর অতিথিরা বলাবলি করছিলেন—‘কী সহজ চলে যাওয়া!’

ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজের এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ২ হাজারেরও প্রাক্তন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজ ‘চিটাগং কলেজ এক্স স্টুডেন্টস’ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ভরে উঠেছিল উৎসবের রঙিন সব ছবিতে। সেই পেজই ওসমানের মৃত্যুর পর হয়ে উঠল ‘বিষাদসিন্ধু’। সবাই নিজেদের আবেগ-উৎসব ভুলে মেতে ওঠেন ওসমানের স্মৃতিচারণে।

মৃত্যুর আগে উৎসবমুখর ওসমান গণির একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন আয়োজকদের একজন আলী মনসুর। তিনি লিখেছেন, ‘এই ছবিটাই ছিল ওসমানের শেষ ছবি। মৃত্যুর ২০ মিনিট আগেও হাস্যোজ্জ্বল ওসমান ছিলেন আমাদের সঙ্গে। আর এখন...।’

হঠাৎ হারিয়ে ফেলা বন্ধুকে নিয়ে শোকের সব শব্দকে এক জোট করে কবিতা লিখেছেন সাখাওয়াত সাজিদ খান। তিনি লিখেছেন, ‘আজ এমন খুশির দিনে, রাঙিয়ে দিতাম মোদের রঙিন ছবির পোস্টারে, ছবিগুলো মলিন হলো হারিয়ে প্রাণের দোস্তরে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত