Ajker Patrika

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, ২ হাজারের কক্ষ ৫ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ 

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, ২ হাজারের কক্ষ ৫ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ 

ঈদ ও বাংলা নববর্ষের টানা ছুটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও বিনোদনকেন্দ্রে ছিল ভরপুর পর্যটক। গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত অন্তত ৫ লাখ পর্যটক এখানে ভ্রমণে এসেছেন। পর্যটকের এই ঢল আগামী শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি পর্যন্ত থাকতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

পবিত্র রমজান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জাতীয় নির্বাচনের কারণে দেশের প্রধান এই পর্যটনকেন্দ্র অনেকটা পর্যটক শূন্য ছিল। পর্যটকের সেই খরা কাটিয়ে এবারের ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। এতে পর্যটক নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যেও চাঙা ভাব দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত শনি ও রোববার দুই দিনে কক্সবাজারের কোথাও ঠাঁই ছিল না। বিপুল পর্যটক উপস্থিতির এ সুযোগে অনেক কটেজ ও অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে রমজান মাসে পর্যটকদের বরণে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রিসোর্ট ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো নতুন করে সাজসজ্জা ও সংস্কার করা হয়েছে। সৈকতপারের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজিয়েছে। 

কয়েক দিন ধরে তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে দুটি বড় উৎসবে টানা ছুটি পড়ে। ফলে এ ছুটি কাটাতে ভ্রমণপিপাসুরা বরাবরই ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। 

গত শুক্রবার থেকে কেবল শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্রসৈকতে দৈনিক এক লাখের বেশি পর্যটক নেমেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মী বেলাল হোসেন। 

আজ সোমবার বিকেলে এই তিন সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, পুরো সৈকতে কোথাও ঠাঁই নেই। পর্যটকেরা সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি ওয়াটার বাইক (জেটস্কি), বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। 

ঢাকার মালিবাগ থেকে সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঈদ ও বাংলা নববর্ষের লম্বা ছুটিতে পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে বরাবরের মতো কক্সবাজারেই ছুটে এসেছি। পরিবারের সদস্যরা সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়িয়েছে।’ 

সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকেরাকক্সবাজার শহরের শৈবাল টুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুক্রবার থেকে পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত তিন দিনে অন্তত ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত ও বান্দরবানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে পর্যটকেরা পাহাড় ও সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেতে পারেনি। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও ঘুরতে বের হয়েছে। এতে কক্সবাজার শহর ও আশপাশে পর্যটকের চাপ বেশি দেখা গেছে। 

কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি পর্যটকেরা মেরিন ড্রাইভ সড়ক, দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সৈকত, মাথিনেরকূপ, রামুর বৌদ্ধবিহার, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, সুরাজপুরের নিভৃতে নিসর্গ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া ও মাতারবাড়ী ঘুরতে গেছেন। 

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘চলতি মৌসুমে অনেকটা পর্যটক শূন্য ছিল কক্সবাজার। তবে ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছুটিতে বিপুল পরিমাণ পর্যটক এসেছে। গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের কক্ষ শতভাগ বুকিং ছিল। মঙ্গলবার থেকে পর্যটকের চাপ কমে আসবে।’ 

এ দিকে বিপুল পর্যটক সমাগমের ফলে কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ ও টেকনাফ সড়কে ব্যাপক যানজট দেখা দিয়েছে। সৈকতে গত তিন দিনে ২৬ জন শিশু হারিয়ে গিয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মী ও টুরিস্ট পুলিশের সহায়তায় পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়। 

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সেবা প্রদানে সমুদ্রসৈকত ছাড়াও অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রেও টুরিস্ট পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পর্যটকেরা যেকোনো সমস্যায় একটি বাটন চাপ দিয়েই আমাদের সেবা নিতে পারছেন।’ 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘ঈদ ও বিশেষ ছুটি মানেই কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পর্যটকের সেবা নিশ্চিত ও হয়রানি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা সক্রিয় আছে। পাশাপাশি সমুদ্রসৈকত এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।’ 

সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকদের ঢলকক্ষ ভাড়া অতিরিক্ত নেওয়ার অভিযোগ: 
কর্মব্যস্ত জীবনের অবসাদ দূর করতে মানুষ কক্সবাজার ছুটে আসেন। কিন্তু টানা ছুটি ও বিশেষ দিনে আনন্দ করতে এসে মানুষ হোটেলের কক্ষ না পেয়ে বা খাওয়া-দাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ার ঘটনা কম নয়। হরহামেশাই কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রাতযাপনের অভিযোগ রয়েছে। এবারও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। 

কক্সবাজার পর্যটন জোনের কলাতলী ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে সাড়ে ৪০০ হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। এতে এক লাখ ২০ হাজার মতো পর্যটক রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। পর্যটকের চাপ বাড়লেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠে। 

গত শুক্রবার থেকে কলাতলী এলাকায় ২০০০ টাকার একটি কক্ষ ৫–৭ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। পর্যটকদের অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকটি হোটেল, কটেজ ও রিসোর্টকে জরিমানা ও সতর্ক করেছেন। 

কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি মুকিম খান বলেন, ‘কিছু অসাধু কটেজ ও অ্যাপার্টমেন্টের মালিক পর্যটকের চাপ বাড়লে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। আমরা খবর নিয়ে দেখেছি এসব কটেজ ও অ্যাপার্টমেন্ট অনিবন্ধিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত