Ajker Patrika

জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে চরম ভোগান্তিতে পটিয়ার হাজারো অভিভাবক 

কাউছার আলম, পটিয়া (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ০৪
Thumbnail image

জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে চরম বিপাকে পড়েছেন পটিয়ার হাজারো অভিভাবক। ২০০১ সালের পরে জন্ম নেওয়া সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য তাদের বাবা-মায়ের জন্মসনদ ও বাধ্যতামূলক করার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 

এদিকে জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম চালু করেছে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে আগে মা-বাবার জন্মনিবন্ধন করতে হবে। যদিও এর আগে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়েই যে কারও জন্মনিবন্ধন করা যেত। 

এ অবস্থায় সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানান হাইদগাঁও ইউনিয়নের গৃহবধূ সাজিয়া আকতার। তিনি বলেন, `ছেলে ও মেয়ের জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য ইউনিয়ন অফিসে গেলে সেখানে আমার জন্মনিবন্ধন লাগবে বলেন সচিব। আমার জন্মনিবন্ধনের জন্য বাপের বাড়ির ইউনিয়ন পরিষদে যখন আবেদন করছি তখন সেখানে বলেন আমার বাবা-মার জন্মনিবন্ধন নম্বর লাগবে। আমার বাবা-মা মারা গেছেন ১৫ বছর আগে, তাঁদের তো জন্মনিবন্ধন নাই। এ অবস্থায় আমি চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।' 

অপরদিকে এ ধরনের ভুক্তভোগীরা একদিকে জন্মনিবন্ধনের নতুন নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন, অন্যদিকে ভুলে ভরা জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট অফিসে দিনের পর দিন ঘুরেও সেই জন্মনিবন্ধন সংশোধন করাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন এ প্রতিবেদকের কাছে।  

জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় দেশের নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম করে থাকে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে ভোগান্তি নয়, জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যুনিবন্ধনে শৃঙ্খলার জন্যই এমন নিয়ম করা হয়েছে। ২০০১ সাল এবং তার পর থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্ম সনদ পেতে হলে আগে তার মা-বাবার জন্মনিবন্ধন করতে হবে। ২০০১ সালের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিলেই হতো। 

বাংলায় জন্ম নিবন্ধন নিয়ে বিপাকে পড়া তামিম হোসেনের বাবা ইসহাক মিয়া বলেন, `আমার জন্মনিবন্ধন বাংলায়, আর স্ত্রীরটা ইংরেজিতে। এ কারণে আবেদন করতে পারছি না। নতুন নিয়মে মহাবিপদে পড়েছি। বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করব কেমনে? '

অন্যদিকে উপবৃত্তি পেতেও শিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। অনেক অভিভাবককে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে গিয়ে নিজেদের জন্মসনদ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। পাচ্ছেন না সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদও।  

অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, পেশাগত দক্ষতার অভাব ও উদাসীনতার কারণে শিশুদের জন্মনিবন্ধনে ভুল তথ্য থাকার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর নাম বয়স ও বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে জন্মসনদে থাকা তথ্যের মিল নেই।  

পটিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু আহমেদ বলেন, বানান ভুল জাতীয় পরিচয়পত্রের কারণে অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করাতে পারছেন না। সন্তানের উপবৃত্তির জন্য বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের জন্মনিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ার কথা আমরাও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। 

আরও জানা যায়, অনলাইনে ডেটাবেইস তৈরির জন্য ইউনিয়ন ও পৌরসভায় আলাদা কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কম্পিউটার অপারেটরদের অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণে ভুল তথ্যে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হচ্ছে। ফলে এর খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জন্মনিবন্ধন সনদের ভুল সংশোধনের এখতিয়ার তাদের নেই। অনেকে সংশোধনী ফরম পূরণ করে ই-মেইলে বা ডাকযোগে পাঠাচ্ছে জন্মনিবন্ধন কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক বরাবর। কিন্তু এসব সংশোধনী কত দিনে সম্পন্ন হবে তার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন না কেউ। 

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, জন্মনিবন্ধন ফরম পূরণের সময় অদক্ষ তথ্য সংগ্রহকারীদের অস্পষ্ট লেখা, ইংরেজি বানানে ভুল এবং কম্পিউটারে সংযোজন করার সময় ভুলের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যার ফলে পিএসসি, জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি, দাখিল, এইচএসসি ও আলিমে পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা জন্মনিবন্ধন সনদে ভুল থাকার কারণে চরম বেকায়দায় পড়েছেন তাঁরা। কিন্তু এর দায় নিচ্ছেন না কেউ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত