Ajker Patrika

প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল, আগের স্থানে হচ্ছে না চাঁবিপ্রবি

চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার আগেই এই কাজ করে গেলেও গতকাল সোমবার তা জানাজানি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে জমি অধিগ্রহণের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জোর করে দখল করা সেই ভূমি ফেরত চাইছেন মালিকেরা। অন্যদিকে দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার রাতে ভূমি অধিগ্রহণ বাতিলের তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি চাঁদপুরে যোগদান করেছি। এর আগেই অধিগ্রহণ প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। আগে যে স্থানে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। সেখানে আর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে না।’

প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁবিপ্রবির জন্য ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম খান অনেক পরিবারকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এ ছাড়া জমির বাজার দরের চেয়ে কম দাম দেওয়া হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করে প্রশাসন। এমন সংবাদে আনন্দিত জমির মালিকেরা।

ভুক্তভোগী জমির মালিক কালু খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় করার নাম করে আমার কাছ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি জোর করে নিয়ে গেছে সেলিম খান। আমি দিতে রাজি হইনি। লোকজন দিয়ে আমাকে ধরে এনে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার জমি লিখে নেওয়া হয়। দাম হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। দিয়েছে ১২ লাখ টাকা। আমি আমার জমি ফেরত চাই।’

চাঁবিপ্রবির অস্থায়ী ক্যাম্পাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁবিপ্রবির অস্থায়ী ক্যাম্পাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কাজল গাজী ও হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বসতবাড়ি ছিল। সেলিম চেয়ারম্যান দীপু মনির প্রভাব খাটিয়ে বাড়ি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করে। কিন্তু এখন তো আর বিশ্ববিদ্যালয় হলো না। আমাদের জমি আমরা ফেরত চাই।’

এই দুজন আরও বলেন, এলাকার বহু পরিবারকে নিজ বাড়ি থেকে চলে যেতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য বহু বসতভিটা ও ফসলি জমি বালু দিয়ে ভরাট করেছে। ওই সব জমি এখন পড়ে আছে।

চাঁদপুর শহরের ওয়াপদা গেটের খলিশাডুলি এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সিয়াম ও নিহাল বলেন, ‘তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তাঁর বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু ও ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের দুর্নীতির কারণে সরকার ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করেছে। আমরা দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি জানাচ্ছি।’

২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁবিপ্রবি আইন-২০১৯-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন মন্ত্রিসভা। সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ৯০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তিন বিভাগের দুই ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮০ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত