Ajker Patrika

রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার নিজস্ব মুদ্রা, পুলিশ বলছে গুজব

ইফতিয়াজ নুর নিশান, উখিয়া( কক্সবাজার)
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ২২: ২২
রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার নিজস্ব মুদ্রা, পুলিশ বলছে গুজব

রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিজস্ব মুদ্রা প্রচলন করেছে এমন সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  তবে ক্যাম্পের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা প্রশাসন-পুলিশ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা সংবাদটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। আজ বুধবার প্রকাশিত এই সংক্রান্ত একটি খবরে আরসার প্রধান নেতা হিসেবে পরিচিত আতা উল্লাহ আবু আম্মার জুননীর ছবি সম্বলিত দশহাজার সমমূল্যের মুদ্রাকে দাবি করা হয় আরসার নিজস্ব মুদ্রা হিসেবে।

বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম ছাড়াও আরসার মুদ্রা সংক্রান্ত সংবাদটি প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও।  ‘বাংলাদেশে জেহাদের ছায়া, এবার রোহিঙ্গা শিবিরে নিজস্ব মুদ্রা চালু করেছে জঙ্গি সংগঠন আরসা’ শিরোনামে ভারতের একটি গণমাধ্যম সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে।

ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  এটি দেখতে মূলত মায়ানমারে প্রচলিত মুদ্রা (কিয়াট) দশহাজার কিয়াট নোটের মতো, যেটির নকশায় আতাউল্লাহর ছবি এডিট করে লাগানো হয়েছে।

ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য মতে, ২০১২ সালের ৯ জুন মায়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির রাষ্ট্রীয় মুদ্রা কিয়াটের দশহাজার সমমূল্য মানের নোট প্রচলন করার ঘোষণা দেয়। ২০১২ সালের ১৫ জুন তারিখে ইস্যু হয়ে নোটটির আনুষ্ঠানিক প্রচলন শুরু হয়।

ওই বছরের ১৭ জুন ব্যাংকনোট নিউজ নামে একটি আন্তর্জাতিক মুদ্রাভিত্তিক ওয়েবসাইট সে সময় নতুন বাজারে আসা নোটটির ছবি প্রকাশ করে যেখানে প্রিফিক্স নং- এসি-৪৩২৯২১২ ( নোটে থাকা ক্রমিক নাম্বার)।  আতাউল্লাহর ছবি সম্বলিত নোটেও প্রিফিক্সে একই নম্বর দেখা গেছে।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ বছর ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ জুবাইর নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ইংরেজিতে লেখা ‘আই আরসা ভাই গুড আরাকানী রোহিঙ্গা আরসা’ শিরোনামে নোটটি পোস্ট করা হয়। এটি ছাড়াও আইডিতে আরসা সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্ট রয়েছে।

ফেসবুকে শুধুমাত্র একটি পোস্টে এডিটকৃত এই নোটটির অস্তিত্ব মিললেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাস্তবে এমন কোন মুদ্রা লেনদেনের প্রমাণ মেলেনি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আরসার মুদ্রা প্রচলনের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, ক্যাম্পে আমরা কখনো কোন অভিযানে এমন মুদ্রার অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।’

তিনি আরো বলেন,  ‘এটি মূলত ক্যাম্পে চলমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ শুদ্ধি অভিযান কে বন্ধ করতে অপতৎপরতার অংশ, কারা এধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা বলেন,  ‘আরসা রশিদের মাধ্যমে বাংলাদেশি টাকা এবং মায়ানমারের কিয়াট দিয়ে লেনদেন করে তাদের অপরাধ কর্মকান্ড চালায়, এধরনের নোট তারা ছাপিয়েছে বলে মনে হয় না।’

গত সোমবার মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস তাঁর বাংলাদেশে সফরে এসে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন,  কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণে মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার যুক্ততার বিষয়ে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে।

যার ঠিক দুইদিন পর ‘ক্যাম্পে আরসার মুদ্রা প্রচলন আছে’ এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়াটাকে আরসার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গাদের নেতৃত্ব স্থানীয় এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, ‘জাতিসংঘ দূতের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নিজেদের অস্তিত্ব ও শক্তিমত্তা জানান দিতে আলোচনায় থাকতে আরসা পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত