Ajker Patrika

কর্ণফুলী টানেল: টোলের টাকায় রক্ষণাবেক্ষণের খরচও উঠছে না

মো. ইমরান হোসাইন,কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
কর্ণফুলী টানেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
কর্ণফুলী টানেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দিয়ে এক বছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী যানবাহন চলেনি। ফলে টোল আদায় কম হয়েছে। আয়ের চেয়ে টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এখন পর্যন্ত বেশি। তবে দীর্ঘমেয়াদি এ প্রকল্পে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এখনই লোকসান প্রকল্প বলতে নারাজ টানেল কর্তৃপক্ষ। টানেলের সুফল পেতে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে তাদের মত।

টানেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৪১২টি বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন টানেল দিয়ে চলাচল করেছে। এর মধ্যে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস (হালকা যানবাহন) চলাচল করেছে ৭৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, বাস ১০ শতাংশ, ট্রাক ১২ দশমিক ৪ শতাংশ ও ট্রেইলর দশমিক ৮৫ শতাংশ।

২২ অক্টোবর পর্যন্ত টানেল দিয়ে দৈনিক গড়ে যানবাহন চলাচল করেছে ৩ হাজার ৯১০টি। এতে টোল বাবদ দৈনিক গড়ে আয় হয়েছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ১৫৪ টাকা। এক বছরে টোল আদায় হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬১ হাজার ২১০ টাকা। 

অন্যদিকে এই টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ দৈনিক ব্যয় গড়ে সাড়ে ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৩ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণে এক বছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩৬ কোটি টাকার বেশি। কর্তৃপক্ষের দৈনিক লোকসান ২৭ লাখ ৯ হাজার ৮৩৯ টাকা। সে হিসাবে ১ বছরে লোকসান ৯৮ কোটি ৯০ লাখ ১ হাজার ২৩৫ টাকা।

টানেল নির্মাণের আগে করা সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল, চালুর প্রথম বছর প্রতিদিন গড়ে যানবাহন চলবে ১৭ হাজারের বেশি। কিন্তু ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৯১০টি যানবাহন এ টানেল ব্যবহার করেছে। মূলত সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না থাকায় এই অবস্থা। তবে কক্সবাজার ও মাতারবাড়ীকে টানেলের সঙ্গে দ্রুত যুক্ত করার বিষয়ে কাজ চলছে। এটা সম্ভব হলে যানবাহন চলাচল এবং আয় বাড়বে বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ।

২৬ অক্টোবর সকালে টানেলের সার্বিক বিষয় দেখতে পরিদর্শনে আসেন সেতু বিভাগের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। তিনি টানেল রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে চায়না ইকোনমিক জোন ও বিকল্প সড়ক চালু না হওয়ায় গাড়ি কম চলছে বলে মনে করেন তাঁরা।

টানেলের উপপ্রকল্প পরিচালক (কারিগরি) আবুল কালাম আজাদ  বলেন, টানেল একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, এখানে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এটাকে লোকসান প্রকল্প বলা যাবে না। এ প্রকল্পের সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ, চায়না অর্থনৈতিক জোন, আনোয়ারা-বাঁশখালী-কক্সবাজার সড়ক এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আনোয়ারা-কর্ণফুলী প্রান্তে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলে এই টানেল দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। 

টানেলের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণে সাড়ে পাঁচ শ কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্বে রয়েছেন জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, টানেলের সুফল পেতে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।

এদিকে টানেল ব্যবহারকারী ও স্থানীয়রা বলছেন, এটিকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনে’র মডেলে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল, পরে বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে আনোয়ারা প্রান্তে টানেলকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ৭টি ব্যাংকের শাখা, বিভিন্ন মার্কেট ও শতাধিক দোকানপাট এখন লোকসানের মুখে এবং অনেকে এখন ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। 

স্থানীয় বৈরাগের বাসিন্দা মো. মহিন উদ্দিন বলেন, টানেলের কারণে হঠাৎ জমির দাম বেড়েছিল অনেক গুণ। এখন বেচাবিক্রি বা ক্রেতা কোনোটাই নেই। 

চাতরী চৌমুহনীর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি শাখার এসপিও অ্যান্ড ইনচার্জ সাইফুদ্দিন মো. শাহিন শাহ্ বলেন, ‘টানেল ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্প ধীরগতির কারণে আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আমরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত