Ajker Patrika

ফয়স লেকের ২০০ একর জায়গা বেদখল

হোসেন আহমেদ জিয়াদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২১, ২২: ৪৬
ফয়স লেকের ২০০ একর জায়গা বেদখল

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহুরে জলাধার চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফয়স লেক। কাগজে কলমে যার আয়তন ৩৩৬ একর। শহরে পানির চাহিদা মেটাতে ১৯২৪ সালে এ লেকটি তৈরি করেছিল তৎকালীন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, শত বছরের ব্যবধানে ফয়স লেকের প্রায় ২০০ একর জায়গাই বেদখল হয়ে গেছে। 

স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সেখানে গড়ে উঠেছে প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া সমানতালে চলছে মাদক, অস্ত্রের ব্যবসা, পাহাড় কাটা এবং দখলবাজি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার এ স্থানটি হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী আর অপরাধীদের এক অভয়ারণ্য। স্থানীয়রা বলছেন, শহরের মাঝখানে প্রতি শতক এক লাখ টাকা হিসাবে এ জায়গার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ফয়স লেকের পানির অংশটুকু ছাড়া বাকি পাহাড়ি অংশ প্রায় দখল হয়ে গেছে। চারপাশে অন্তত ১০টি পাহাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল ও ৩ নম্বর ঝিলের পাহাড়গুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা গেছে, এ তিনটি ঝিলেই অন্তত ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। 

ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, সেখানকার বাসিন্দা ও পরিবেশবাদী সংগঠনের বেশ কয়েকটি মামলার বেড়াজালে এখন আটকে আছে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ। মামলার কারণে গত তিন বছর ধরে কোন সংস্থা আর পদক্ষেপও নিতে পারছে না। আর এ সুযোগে চলছে পাহাড় কাটা আর দখল। পানির অংশ বাদ দিয়ে চারদিকে ছড়াচ্ছে বসতি।

কথা হয় ১ নম্বর ঝিলের মহল্লা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৯৪ সালে জায়গাটি দখল করেছি। আমাদের কোন কাগজপত্র নেই। এখানে সব বাসিন্দাদেরই একই অবস্থা। তবে স্ট্যাম্পের ওপর জায়গা হাতবদল হয়। মূল জায়গার মালিক রেলওয়ে। আপনি সাংবাদিক তাই সত্য কথা বললাম।’ 

মুনীর নামে এক সিএনজি চালক বলেন, ‘জায়গা দখল করতে এখানে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা দিতে হয়। কিন্তু কাদেরকে দিতে হয়, তা আমি বলতে পারব না।’ 

আকবার শাহ থানা–পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী নুরুল আলম নুরু, তাঁর ভাই জয়নাল, গোলাম কিবরীয়া, সহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ এখানে সক্রিয়। এর মধ্যে নুরুর বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, মাদক ব্যবসা, কাঠ পাচারসহ ২৮টি মামলা রয়েছে। তাঁর বড় একটি গ্যাং আছে পাহাড়ে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বিগত সরকার ও বর্তমান সরকারের আমলে পাহাড় দখল করে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি। শুধু তাই নয় ঘর বানানোর ইট, লোহা, বালু এমনকি কাজের শ্রমিকও এদের নিয়ন্ত্রণে রাখে তাঁরা। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক নুরুল্লাহ নুরী বলেন, ‘আমার বেশ কয়েকবার উচ্ছেদের জন্য নোটিশ করেছি। এ বছর জুনেও আমরা উচ্ছেদে গিয়েছিলাম। কিন্তু আদালতের একটি নির্দেশনা আছে, পুনর্বাসন না করে তাঁদের উচ্ছেদ করা যাবে না। এ কারণে আমরা চাইলেও পারছি না। এ সুযোগে বসতি বাড়ছে।’ 

এ দিকে কনকর্ড গ্রুপ আর রেল কর্তৃপক্ষও আটকে আছে মামলার বেড়াজালে। ২০০৫ সালে ৫০ বছরের জন্য ৩৩৬ একর জায়গা কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানিকে ইজারা দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। বছরে ৩৭ লাখ টাকা ইজারা মূল্য পরিশোধ করে তাঁরা। ভূমি কর নিয়ে বিরোধ, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ, পরিবেশ নষ্ট করার অপরাধে ২০১৭ সালে তাঁদের চুক্তি বাতিল করে রেল কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে সে বছর আদালতে যায় কনকর্ড। তখন থেকেই প্রায় চার বছর আদালতের স্থগিতাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে কনকর্ড। 

অপরূপ সৌন্দর্যের ফয়স লেকবলা যায়, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কনকর্ড আর রেল কর্তৃপক্ষ এখন কোন পক্ষই ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফয়স লেক এমিউজম্যান্ট পার্কের ডেপুটি ম্যানেজার বিশ্বজিৎ ঘোষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার এখন বড়জোর ৭০ থেকে ৮০ একর জায়গায় কার্যক্রম পরিচালনা করি। বাকিটা অন্যদের দখলে। আমার রেলকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারাই ব্যবস্থা নিবে।’

রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বলেন, ‘আমাদের ৩৩৬ একর জায়গা আছে সেখানে। অথচ ২০০ একরই বেদখল, মামলার কারণে আমরা এগোতে পারছি না।’

রেল পূর্বাঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপক বলেন, ফয়সলেক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কনকর্ড এর সাথে আমাদের মামলা চলছে। এটি সমঝোতা হয়েছে। তাঁরা মামলা তুলে নিবে। আমার খুব শিগগিরই সেখানে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে আমাদের জায়গা বুঝে নেব।’

কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড সুবল চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মামলার কারণে গত তিন বছর ফয়স লেকের প্রায় তিন কোটি টাকা ভূমি কর পাচ্ছি না। তা ছাড়া জায়গাটিতে উচ্ছেদ অভিযানে রেল আমাদের সহযোগিতা চায়নি। আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোমাদের যে কিছু করিনি, তা-ই ভাগ্য—ডাকাতির সময় দুই কিশোরীকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা

সাধুর বেশে এসে সাবেক স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

বরিশাল-১: স্বপন-কুদ্দুসের দ্বন্দ্বে নির্বাচনের আগে দলে অস্থিরতা

স্টার্টআপ থেকে স্মার্ট সিটি: যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ টানছে বাংলাদেশ

গাজীপুরে ইট দিয়ে সাংবাদিকের পা থেঁতলে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত