Ajker Patrika

১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ডুবল কক্সবাজার, আবার বন্ধ লবণ উৎপাদন

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ২১: ১৮
বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার উপকূলে আবারও লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার উপকূলে আবারও লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুই সপ্তাহ টানা তাপপ্রবাহের পর আজ রোববার ভোরে কক্সবাজার শহরে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। টানা তিন ঘণ্টার এই বৃষ্টিতে গরম কমে স্বস্তি ফিরেছে। তবে শহরের নালা (ড্রেন) দিয়ে বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে প্রধান সড়ক ও অলিগলি কাদায় একাকার হয়ে পড়েছে। এতে শহরের হোটেল-মোটেল জোনসহ বিভিন্ন এলাকায় চলাফেরায় পর্যটক ও স্থানীয় লোকদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

এদিকে বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার উপকূলে আবারও লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া মাঠের বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকেরা।

কক্সবাজারে দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল জনজীবন। আজ ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত শহরে টানা বৃষ্টিপাত হয়।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান জানান, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবারও হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী ২-৩ দিন এ রকম আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।

তিন ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে শহরের নালা-নর্দমার কাদামাটি ও প্লাস্টিক পণ্য সড়কে উঠে আসার বিষয়টি আজ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসন, সম্ভাব্য দুর্যোগ ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন থেকে সংশ্লিষ্টদের আগাম প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের হোটেল-মোটেল জোনের বাইপাস সড়ক, বাজারঘাটা, টেকপাড়া, গোলদীঘিরপাড়, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, বিজিবি ক্যাম্প, আলীরজাহালসহ কয়েকটি স্থানে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অধিকাংশ এলাকা কাদামাটি ও প্লাস্টিক পণ্যে ভরে গেছে।

কক্সবাজার পৌরসভা শহরে জলাবদ্ধতার পেছনে প্রধান চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এসবের মধ্যে নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড় কাটা, বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা নালায় ফেলা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন।

কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক মাস ধরে শহরের নালা-নর্দমা পরিষ্কার-পরিছন্নতা অভিযান চলছে। কাজটি চলমান রয়েছে। আশা করি, বর্ষার আগেই জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।’

আবারও বন্ধ লবণ উৎপাদন

চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনে খুব একটা স্বস্তিতে নেই লবণচাষিরা। একে তো দাম নেই, তার ওপর প্রতিকূল আবহাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লবণচাষিরা। এ বছর চৈত্র মাসের শেষদিন থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই কক্সবাজারে বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে প্রায় তিন সপ্তাহ লবণ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়।

বৈশাখ মাসের প্রখর রোদ লবণ উৎপাদনের জন্য ভরা মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে লবণচাষিরা এবার সে সুযোগ তেমন একটা পাননি। আজ তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে আবারও উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের মৌসুম ধরা হয়। এ সময় সমুদ্র উপকূলের জমিতে সাগরের লোনাপানি পলিথিন বিছিয়ে রোদে শুকিয়ে লবণ উৎপাদন করা হয়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূইঁয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে আবারও লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে। একবার বৃষ্টি হলে ফের উৎপাদনে যেতে ৪-৫ দিন সময় লেগে যায়। এখনই লবণ উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত (রোববার) লবণ উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন। গত বছর এই সময়ে উৎপাদন হয় ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৬০ টন।

কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও ও টেকনাফে ৫৯ হাজার ৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও পটিয়ায় ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে লবণের মাঠ করা হয়েছে। দেশে এ বছর লবণের চাহিদা ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের পোস্টে কমেন্ট করে বরখাস্ত মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

‘৩ শর্তে’ সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ স্থগিত

ভারতের সঙ্গে টক্কর দিলে বাঁচতে পারবে না বাংলাদেশ: বিজেপি নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত