Ajker Patrika

৩৪ গুদাম কর্মকর্তার বদলি, নেপথ্যে ‘ঘুষ’

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩: ০০
৩৪ গুদাম কর্মকর্তার বদলি, নেপথ্যে ‘ঘুষ’

আমন সংগ্রহকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৩৪টি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি-এলএসডি) বদলি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৪ জনকে একযোগে বদলি করা হয়। তবে এই বদলির ক্ষেত্রে গুদামভেদে ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর গত অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব কর্মকর্তাকে বদলি করে। যদিও খাদ্য বিভাগ বলছে, কর্মকর্তা বদলির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম বা টাকা লেনদেন হয়নি।

দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর খাদ্য বিভাগের বোরো সংগ্রহ শেষ হয়। এরপর গত ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হয় ২০২৩-২৪ মৌসুমের আমন সংগ্রহ। এ উপলক্ষে ওই ৩৪ জন ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বদলি হওয়া একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, এসব বদলির ক্ষেত্রে কর্মস্থলভেদে তাঁদের ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপরি দিতে হয়েছে।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের শফিউল হাবিব ভূঁইয়াকে টেকনাফ খাদ্যগুদামের (ওসি-এলএসডি) হিসেবে বদলি করা হয়। কুমিল্লা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানকে বান্দরবান সদর গুদামে, দেওয়ানহাট সিএসডির পরিদর্শক সৈয়দ আলমকে সাতকানিয়া গুদামে বদলি করা হয়। রাঙামাটির বরইছড়ি গুদাম থেকে বাঁশখালীতে বদলি করা হয়েছে নিপুণ দাসকে। হালিশহর সিএসডি গুদাম থেকে এরশাদ হোসেনকে সীতাকুণ্ডে, হালিশহর সিএসডি থেকে মনির হোসেনকে মিরসরাইয়ে, রাউজান গুদামের ইমরান হোসেনকে রাঙ্গুনিয়ায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে রাজীব কুমারকে চান্দিনা খাদ্যগুদামে, কুমিল্লা সদরের আবদুল গণিকে খাগড়াছড়ির গুইমারায়, চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) দপ্তর থেকে আবুল মনছুর হাবিবকে মাটিরাঙার তবলছড়িতে বদলি করা হয়।

দেওয়ানহাট সিএসডির পরিদর্শক মামুনুর রশিদকে পানছড়িতে, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির দেবাশীষ দাশকে দীঘিনালায়, কুমিল্লা ডিসি ফুড দপ্তরের আনিসুল ইসলামকে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় (অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মিরসরাইয়ের হাবিলদার বাসা খাদ্যগুদাম), কুমিল্লার চকবাজারের শহীদ উল্লাহকে ফেনী সদরে, কুমিল্লা ডিসি ফুড দপ্তরের গোলাম মোস্তফাকে রাঙামাটি সদর গুদামে বদলি করা হয়।

ফেনীর পরশুরাম গুদামের শফিকুল ইসলামকে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে, চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষক নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের পলাশ ঘোষকে রাঙামাটির বরইছড়িতে, নোয়াখালী সদরের অসীম কুমারকে হাতিয়ার (চৌমুহনী বাজার) গুদামে, লক্ষ্মীপুর সদরের মাঈন উদ্দিনকে বেগমগঞ্জে, লক্ষ্মীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের (টিআই) আবু নাঈম টিটুকে চর আলেকজান্ডারে, চাঁদপুর সিএসডির অসীম বর্ধনকে রায়পুরে, দেওয়ানহাট সিএসডি থেকে জহিরুল ইসলামকে রামগঞ্জে, দেওয়ানহাট সিএসডি থেকে তারেকুল আলমকে কক্সবাজারের বদরখালীতে, কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে কুমিল্লার চকবাজারে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিসি (ফুড) কার্যালয়ের জমির হোসেনকে চৌদ্দগ্রামে, কুমিল্লার বরুড়া থেকে মো. সফিউল আলমকে ফেনীর নাঙ্গলকোটে, চাঁদপুর সদর থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে দাউদকান্দিতে, কুমিল্লা ডিসি (ফুড) কার্যালয় থেকে কাজী ইকবালকে বরুড়া খাদ্যগুদামে, কুমিল্লার চান্দিনা থেকে সুমন সাহাকে দেবীদ্বারে, ফেনী সদর থেকে আবুল হাসেমকে কুমিল্লার কংসনগরে, চট্টগ্রামের হালিশহর সিএসডি থেকে রঞ্জিত কুমার দাসকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বদলি করা হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. এইচ এম কায়সার আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ১৪ ডিসেম্বর বেলা ৩টার দিকে সদরঘাটে তাঁর কার্যালয়ে গিয়েও দেখা মেলেনি।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সহকারী নিয়ন্ত্রক (এডিডি) দোলন দেব বলেন, ‘সাধারণত ধান সংগ্রহের সময় এলে আমাদের খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের বদলি হয়ে থাকে। এবারও তা-ই করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম বা টাকার লেনদেন হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত