Ajker Patrika

পীরের ফতোয়ায় এখনো ভোট দেন না রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
পীরের ফতোয়ায় এখনো ভোট দেন না রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা

পীরের ফতোয়া মেনে ভোটকেন্দ্রে যান না চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা। তাঁদের ধারণা, পীরের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাড়ির বাইরে গেলে, এলাকায় কলেরা-বসন্ত পুনরায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিলেও এ এলাকার নারীরা কখনোই নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি।

আজ বুধবার পঞ্চম ধাপে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে বরাবরের মতো এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইউনিয়নে ১২ হাজারের বেশি নারী ভোটার থাকলেও কয়েকজন সচেতন নারী ছাড়া কেউই আসেননি ভোটকেন্দ্রে। সবগুলো কেন্দ্র মিলিয়ে ভোট প্রদান করেছেন ১৫ থেকে ২০ জন নারী ভোটার। কেন্দ্রগুলোতে ভোট দিয়েছেন দু-একজন নারী। অন্যদিকে পুরুষ ভোটারের লাইন ছিল দীর্ঘ।

চরমান্দারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আব্দুল আউয়াল (৫০) নামের এক ভোটার বলেন, ‘নারীদের ভোট দিতে জৈনপুরের হুজুরের নিষেধ আছে। তাই নারীরা ভোট দিতে আসেন না।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জানা যায়, ষাটের দশকে ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া বাজারের পূর্ব পাশে বসবাস করতেন জৈনপুরের পীর মওদুদুল হাসান। ওই সময় এলাকায় কলেরা-বসন্ত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মহামারি থেকে রক্ষা পেতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ সময় পীর মওদুদুল হাসান বাসিন্দাদের জানান, নারীদের বেপর্দার কারণেই এই মহামারি। তাই নারীদের কখনোই পর্দার খেলাপ করা যাবে না। এর কিছুদিন পর ভারতের জৈনপুরে চলে যান পীর মওদুদুল হাসান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও রাজনৈতিক সুবিধাবাদী কিছু ব্যক্তি সেই পীরের কথার ওপর রং চড়িয়ে প্রচার করতে থাকেন। নারীরা ভোট দিলে এলাকায় আবারও কলেরা-বসন্ত ছড়িয়ে পড়বে বলে নারীদের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস‌‌ের জন্ম দেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত নারী ভোটারদের ভোট দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম কাউনিয়া, চরপক্ষিয়া, চরমান্দারি, উত্তর ও দক্ষিণ সাহেবগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ, গৃদকালিন্দিয়া, চরমুঘুয়া গ্রামের নারীরা যুগের পর যুগ ধরে নিজ ইচ্ছায় ভোট দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।

কাউনিয়া শহীদ হাবিবউল্লাহ হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার সহধর্মিণী ডা. আনোয়ারা হক। তাঁর মতো আরও কয়েকজন সচেতন নারী ভোট দিলেও কেন্দ্রগুলোতে ছিল না প্রার্থীদের নারী এজেন্ট, এমনকি ছিলেন না নারী প্রার্থীও।

গৃদকালিন্দিয়া হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আয়াস উদ্দিন বলেন, তাঁর কেন্দ্রে একজন নারী ভোট দিয়েছেন। অথচ এই ইউনিয়নে মোট নারী ভোটারের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০ জন।

চরমান্দারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার খোরশেদ আলম জানান, এই কেন্দ্রে ৮০০ ভোটারের মধ্যে মাত্র দুজন নারী ভোট দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ৯টি কেন্দ্রে সব মিলিয়ে ১৫-২০ জন নারী ভোট দিয়েছেন। 

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, ‘জেলার তিনটি উপজেলার ১৩টি ভোটকেন্দ্রের সবকিছু স্বাভাবিক দেখলেও রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে নারীদের ভোট দিতে না আসার বিষয়টি অবাক হওয়ার মতো। কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসকসহ এখানে এসে নারী ভোটারদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করেছি। কিন্তু তাতেও ফল মেলেনি।’

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ভোটার হচ্ছেন ২৪ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ১২ হাজার ১১৪ জন। চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১০ জন নারীসহ শতাধিক প্রার্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত