Ajker Patrika

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি-সহায়তা পাননি একাত্তরে গুলিবিদ্ধ বাসনা

বরুন কান্তি সরকার, নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৫২
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি-সহায়তা পাননি একাত্তরে গুলিবিদ্ধ বাসনা

একাত্তরের ভয়াল স্মৃতি মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন বাসনা চক্রবর্তী (৬৮)। ৫০ বছর ধরে শরীর ও মনে বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষত; কথা বলতে গিয়ে হয়ে পড়েন বাকরুদ্ধ। দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সুধারঞ্জন চক্রবর্তী মুক্তিযুদ্ধের সময় এক বছর বয়সে মারা যান। বলছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুলিকুণ্ডা গ্রামের গোপাল চক্রবর্তীর স্ত্রী বাসনা চক্রবর্তীর কথা।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে উপজেলার কুলিকুণ্ডা গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলি হয়। এ সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পানি দিতে গিয়ে ডান চোখে ও ডান হাঁটুর নিচে গুলিবিদ্ধ হন বাসনা।

স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও বাসনার পরিবার চরম অবহেলা ও অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। একসময় বাসনাদের প্রচুর সম্পত্তি থাকলেও চিকিৎসার খরচ চালাতে সব সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। এখন ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। আর্থিক অনটনে বাসনার পরিবার ছেলেমেয়েদেরও প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাসনার এ ঘটনা জানতে পেরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৬ এপ্রিল কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁদের পরিবারকে একটি পত্র দেন। পাশাপাশি ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বাসনার পরিবারকে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। তাঁদের কাছে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা চিঠিটিও সংরক্ষিত রয়েছে।

বাসনার স্বামী গোপাল চক্রবর্তী বলেন, `বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা পত্র নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। সবশেষে কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর আর্থিক সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছি।'

বাসনা চক্রবর্তী বলেন, `আমরা চরম আর্থিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরও সরকারের কাছ থেকে কোনো রকম স্বীকৃতি বা সহায়তা পাইনি।'

প্রতিবেশী রতন সরকার বলেন, তাঁদের পরিবার বিভিন্ন পূজাপার্বণে যজমানি করে যে অর্থ পায়, তা দিয়েই সংসার চলে। 

নাসিরনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম বলেন, ছোটবেলায় মুক্তিযুদ্ধে বাসনা গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে আমি নিজেই তাঁদের বাড়িতে গিয়েছি। তিনি চোখে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তবে তাঁরা কোনো সহায়তার জন্য আমার কাছে আসেনি। 

বাসনার বড় ছেলে পরিমল চক্রবর্তী জানান, স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর কেটে গেলেও মা বাসনা চক্রবর্তীর কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। তবে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা তেমন কোনো যোগাযোগ করেননি। সম্প্রতি পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। 

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য বি. এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের কাছে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, `আমি তাঁদের বিষয়ে জানতে পেরেছি। তাঁদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জমকালো দোতলা বাড়িতে দূতাবাস, সামনে সারি সারি কূটনৈতিক গাড়ি—৭ বছর পর জানা গেল ভুয়া

বেনজীরের এক ফ্ল্যাটেই ১৯ ফ্রিজ, আরও বিপুল ব্যবহার সামগ্রী উঠছে নিলামে

অবশেষে রাজি ভারত, ‘জিতেছে বাংলাদেশ’

ছেলের লাশ পেতে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে

ই-মেইলে একযোগে ৫৪৭ ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত, পুনর্বহালের দাবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত