Ajker Patrika

ডুবোচরের কারণে ঢাকা-হাতিয়া রুটে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২১, ২২: ৪৪
ডুবোচরের কারণে ঢাকা-হাতিয়া রুটে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

ঢাকা থেকে হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো প্রতিদিনই আটকা পড়ছে ডুবো চরে। খুব ভোরে জোয়ার না হলে চরে আটকে থাকতে হয় ঘণ্টা পর ঘণ্টা। সময় বেঁধে জোয়ার  এলেই তবেই ঘাটে আসে এসব লঞ্চ। এর ফলে এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। 

এই ডুবোচরগুলোর অবস্থান মূলত ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার পূর্ব পাশে। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ঘাটের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে বধনার চরের সন্নিকটে মেঘনা নদীতে। এই ডুবো চরের কারণে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল প্রায়ই ব্যাহত হয়। প্রায়ই লঞ্চ আটকে যায় চরে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। অনেক সময় ব্যবসায়ীদের কাঁচামাল চরে আটকে পড়া লঞ্চেই নষ্ট হয়ে যায়। ডুবো চরে আটকা পড়লে দুর্ভোগের আর সীমা থাকে না। 

সম্প্রতি ঢাকা থেকে হাতিয়ায় আসার সময় লঞ্চে মারা যায় হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের এক নারী। মরদেহটি গ্রহণ করতে স্বজনেরা ঘাটে গিয়ে অপেক্ষা করে। এ দিকে মরদেহটি বহনকারী এমভি তাফসির-১ নামে লঞ্চটি ডুবোচরে আটকা পড়ে। এতে প্রায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর স্বজনেরা একটি ছোট ট্রলার ভাড়া করে নদীর মাঝখান থেকে মরদেহটি নিয়ে আসে ঘাটে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্বজনদের। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দুটি লঞ্চ নদীর মাঝখানে আটকে আছে। ঘাটে অপেক্ষা করছে যাত্রীদের স্বজন, ঘাট শ্রমিক, বিভিন্ন যানবাহনের সহস্রাধিক মানুষ। ঘাটে আলাপ হয় হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের রেহানিয়া গ্রামের অধিবাসী বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। 

বেলায়েত হোসেন জানান, এমভি ফারহান-৩ লঞ্চে ঢাকা থেকে তাঁর অসুস্থ বাবা আসতেছেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘাটে এসেছে। কিন্তু লঞ্চটি নদীর মাঝখানে আটকে আছে। ঘাট থেকে দেখা যায়। লঞ্চে থাকা অনেক যাত্রী অপেক্ষা না করে ছোট ট্রলারে ঘাটে চলে আসছে। কিন্তু তাঁর বৃদ্ধ পিতা অসুস্থ হওয়ায় তিনি সাহস করছেন না ছোট ট্রলারে নিয়ে আসতে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। ঘাটে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন জোয়ার আসবে ১১টার দিকে তখন লঞ্চ ঘাটে আসবে। সেই সময় পর্যন্ত তাঁকে ঘাটে অপেক্ষা করতে হবে। 

ঢাকা থেকে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবো চরে আটকে যায়। ছোট ট্রলারে করে ঘাটে আসছেন যাত্রীরানোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া মূলত নদীবেষ্টিত এখানে প্রায় সাত লাখ লোকের বসবাস। এ উপজেলার মানুষের চলাচলে নদীপথই একমাত্র ভরসা। এর মধ্যে ঢাকা-হাতিয়া রুট, হাতিয়া-চট্রগ্রাম রুট ও হাতিয়ার নলচিরা-চেয়রম্যান ঘাট রুটে যাত্রী পারাপার হয় কিছু সরকারি ও কিছু বেসরকারি যানবাহনে। 

এর মধ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি লঞ্চ সার্ভিস চালু করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রথম দিকে একটি প্রতিষ্ঠান দুটি লঞ্চ দিয়ে যাত্রীসেবা দেয়। গত তিন বছর আগ থেকে এই রুটে আরও একটি প্রতিষ্ঠান তাদের লঞ্চ সার্ভিস চালু করে। প্রতিদিন হাতিয়ার তমরদ্দি ঘাট থেকে দুটি লঞ্চ দুপুর ১টার সময় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আবার প্রতিদিন বিকেল ৬টার সময় ঢাকার সদরঘাট থেকে দুটি লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। 

হাতিয়া থেকে যে কয়েকটি নৌ-রুটে যাত্রী পারাপার হয় এর মধ্যে ঢাকা-হাতিয়া রুটটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই রুটে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক যাত্রী আসা-যাওয়া করে। এ ছাড়া মাছ, চাল, আলু হাতিয়ায় উৎপাদিত খেসারি ডাল, বাদামসহ প্রচুর মালামাল আনা-নেওয়া করে ব্যবসায়ীরা। 

আলাপকালে তমরদ্দি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি ইব্রাহীম (৬০) জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানির উচ্চতা বেশি থাকায় লঞ্চগুলো চরে আটকে না। এখন নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রতিদিন আটকে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। এতে ব্যবসায়ীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লঞ্চে পচে যায়। 

হাতিয়া-ঢাকা রুটে চলাচলকারী এমভি ফারহান-৩-এর মাস্টার বজলুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে হাতিয়া আসতে কোথাও কোনো সমস্যা হয় না। শুধু হাতিয়ার পশ্চিম পাশে এই ডুবোচরে লঞ্চ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। একাধিকবার বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ছোট একটি ড্রেজিং করে এই রুটটি নৌযান চলাচলে স্বাভাবিক করা যায়। 

তমরদ্দি ঘাট ইজারাদার প্রতিনিধি মিরাজ সর্দার বলেন, লঞ্চ চলাচলের এই পথে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। ভাটির সময় কোনো কোনো চর জেগে ওঠে। জোয়ারে তলিয়ে যায়। আর এই চরেই আটকা পড়ে লঞ্চ। এতে রাতের বেলা বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে লঞ্চ চলাচল শতভাগ নিরাপদ করার দাবি তাঁর। 

এ বিষয়ে আলাপকালে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমি এই সমস্যাটি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. আবদুল মতিনের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নদীতে ড্রেজিং এর কাজ শুরু হবে। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত