Ajker Patrika

সত্তরেও ইট ভাঙেন ফনিন্দ্র বড়ুয়া

আক্তার হোসেন, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি)
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২১, ১১: ৩০
সত্তরেও ইট ভাঙেন ফনিন্দ্র বড়ুয়া

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-লংগদু সড়কে যানবাহনের ভেঁপুতে সব সমই সরব চৌমুহনী এলাকা। এর ফাঁকেই দূর থেকে কানে ভেসে আসে হাতুড়ি দিয়ে ইট ভাঙার ঠুসঠাস শব্দ। সেখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইট ভাঙেন সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ।

মাথায় তেমন চুল নেই, যেটুকু আছে সব সাদা ধবধবে। বয়সের ভারে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইট ভাঙার কাজটা করছেন ফনিন্দ্র বড়ুয়া। উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা তিনি। করোনার মধ্যে গত ৯ মাস যাবৎ এভাবে সংসার চালাচ্ছেন।

কাছে যেতেই চোখে পড়ে, বয়সের কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছে ফনিন্দ্রর। মাঝে মাঝে হাতুড়ির আঘাত ইটে না লেগে হাতেও লাগে। তার পরও একের পর এক ইট ভেঙে চলেছেন তিনি।

ফনিন্দ্র বড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্ত্রী অনিমা বড়ুয়া (৬০) ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে ছোট একটি পরিবার ছিল তাঁর। মেয়ে দুটি বিয়ে দেওয়ার পর ছেলেকেও বিয়ে করিয়েছেন।

অভাবের সংসারে ছেলে চট্টগ্রামে রিকশা চালিয়ে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তার পরও মাস শেষে বাবার জন্য কিছু টাকা পাঠাতেন তিনি।

করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু পর থেকে তা–ও পাঠাতে পারেন না।

তাই গত ৯ মাস ধরে ইট ভাঙছেন ফনিন্দ্র। সারা দিন কাজ করে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা উপার্জন হয় তাঁর। তা দিয়েই কোনোমতে চলে তাঁর সংসার।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুস্থ, স্বল্প উপার্জনক্ষম বা উপার্জনে অক্ষম বয়স্কদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়।

ফনিন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘৫০০ টাকা দিয়ে তো আর সংসার চলে না। স্ত্রী মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে, দুজনে কোনো রকম দিন পার করছি। করোনাকালে সরকার থেকে ত্রাণ দিলেও এবার ত্রাণ পাইনি। বাঁচার জন্য বুড়ো বয়সে ইট ভাঙার কাজ করছি।’

কথার ফাঁকে ফাঁকে ইট ভাঙা চালিয়ে যান ফনিন্দ্র। রোমকূপ দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বেরিয়ে শরীর বেয়ে পড়ছে, কপালের ঘাম পড়ছে ইটের ওপরে। এর মধ্যেই হাতুড়ির আঘাতে টুকরো খোয়ায় পরিণত হয় ইটগুলো। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত