Ajker Patrika

বিদেশে প্রশিক্ষণে গিয়ে উধাও কনস্টেবল, উৎকণ্ঠায় বাবা-মা

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণে গিয়ে উধাও হয়েছেন পুলিশ দুই কনস্টেবল। এর মধ্যে একজন হলেন শাহ আলম। তিনি চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্দেরখীল গ্রামের শাহজাহানের ছেলে। তবে এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। 

ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন শাহ আলমের দরিদ্র বাবা-মা। তাঁদের প্রশ্ন, ‘এত নিরাপত্তার মধ্যেও শাহ আলম কীভাবে নিরুদ্দেশ হলো?’ জনপ্রতিনিধিদের আশা করছেন শাহ আলম আবারও দেশে ফিরে এসে আত্মসমর্পণ করে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনবেন। 

শনিবার বিকেলে সরেজমিন শাহ আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা শাহজাহান রিকশা চালানো শেষে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়িতে নড়বড়ে থাকার দুইটি ঘর। একটি ঘরে গিয়ে গরুর পরিচর্যা করছেন তিনি। মা শিরিনা বেগম গরুর জন্য ভাতের মাড় আনতে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন। 

এ সময় কথা হয় শাহ আলমের বাবা শাহজাহানের সঙ্গে। ছেলে শাহ আলম কোথায় জানতে চাইলে আতঙ্কিত হয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে বর্তমানে আছে আমি জানি না। নেদারল্যান্ডসে যাওয়ার আগে বলে গেছে, ‘‘প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে যাচ্ছে।’ ’ তারপর থেকে আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। গত তিন-চার দিন আগে বাড়িতে পুলিশ এসে শাহ আলমের খোঁজ করলে আমরা বলি, সে তো প্রশিক্ষণে নেদারল্যান্ডসে গেছে। তারাই বলে, শাহ আলম সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। এরপর থেকে প্রশাসন আমাদের প্রতি কড়া নজরদারি রেখেছে। বারবার থানায় ডেকে নেওয়া হচ্ছে। আমার মোবাইল ফোনটি রেখে দিছে। 

এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও শাহ আলম কি করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়? এ প্রশ্নের উত্তর তারা (পুলিশ) না দিয়ে উল্টো আমাদেরকে চাপের ওপর রেখেছে।’ 

শাহ আলমের মা শিরিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যাওয়ার আগে বলে গেছে, উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যাচ্ছি। তারপর থেকে আমার ছেলের সাথে যোগাযোগ নাই। পুলিশ বলছে, আমার ছেলে সেখান থেকে নাকি পালিয়ে গেছে। সে কোথায় আছে, কীভাবে আছে-আমরা কিছুই জানি না।’ 

এ নিয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘২০১৬ সালে শাহ আলম যখন পুলিশ সদস্য যোগদানের প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়, তখন আমরা তাঁর চাকরির ব্যাপারে সুপারিশ করেছিলাম। কোনো প্রকার ঘুষ ছাড়াই পুলিশ সদস্য হিসেবে সে যোগদান করে। পুলিশের ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষণের জন্য সে নেদারল্যান্ডস গিয়েছিল-এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয় ছিল। সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি আশা করি সে তাঁর ভুল বুঝতে পেরে হয়তো দেশে ফিরে আসবে।’ 

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র জিএম মীর হোসেন মীরু বলেন, শাহ আলম নেদারল্যান্ডস থেকে পালিয়ে গিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। আমি আশা করব সে তাঁর ভুল বুঝতে পারবে এবং দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করে পুনরায় পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করবে। এতে করে কিছুটা হলেও বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সম্মান বাড়বে।’ 

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শাহ আলম নেদারল্যান্ডস থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ফ্রান্সে অবস্থান করছে। এ ধরনের গুঞ্জন তাঁর বন্ধু-বান্ধবসহ এলাকায় এর আগে থেকেই প্রচার হয়েছে। তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে এ নিয়ে কেউ আর মুখ খুলতে রাজি হননি। 

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘মৌখিকভাবে শাহ আলমের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি।’ এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। 

উল্লেখ্য, গত ৯ মে শাহ আলমসহ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) ৮ সদস্য ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষণের জন্য নেদারল্যান্ডস গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৬ জন গত ২৪ মে দেশে ফেরত আসলেও শাহ আলম ও কক্সবাজারে রাসেল চন্দ্র দে নামে দুজন ফেরত আসেনি। তারা দেশে ফেরার আগের দিন কৌশলে হোটেল থেকে পালিয়ে যান বলে জানা যায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত