Ajker Patrika

চমেকে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে মারধর, ভুক্তভোগী থানা হাজতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চমেকে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে মারধর, ভুক্তভোগী থানা হাজতে

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে লিফটে ওঠা নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে স্ত্রীর সামনে রিয়াজুল ইসলাম নামে একজনকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে কর্মচারী ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। এ সময় স্ত্রী বাধা দিলে তাঁকেও লাঞ্ছিত করা হয়। মারধর করার পর উল্টো ভুক্তভোগীকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীর স্ত্রী থানায় গিয়ে চিকিৎসক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। 

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে চমেকে এই ঘটনা ঘটে। রিয়াজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী আয়েশা বেগম চমেকের ষষ্ঠ তলায় তাঁদের আত্মীয় এক গর্ভবতী নারীকে দেখতে গিয়েছিলেন। 

রিয়াজুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা বেগম আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁর ননদ তাহমিনা আক্তার ষষ্ঠ তলায় ভর্তি ছিলেন। তাঁকে দেখতে স্বামী রিয়াজুল ইসলামকে নিয়ে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ওঠেন। তাঁদের সঙ্গে চার বছর বয়সী এক সন্তানও ছিল। সিঁড়িতে কাজ চলায় দ্বিতীয় তলায় লিফটের বোতাম চাপ দেন। লিফটে তাঁরা উঠতে চাইলে, লিফটের কর্মচারী জানান, এটি চিকিৎসকদের লিফট। ওঠা যাবে না। অথচ ওইখানে অনেক সাধারণ মানুষ ছিলেন। এই বিষয়ে রিয়াজুল ইসলাম প্রশ্ন করলে, লিফট ম্যান খুবই বাজে কথা বলেন। 

আয়েশা বেগম বলেন, ‘লিফট ম্যান বাজে কথা বলার পর রিয়াজুল শুধু বলেন, ‘‘আপনি কাজটি ভালো করেননি। লিফটে পাবলিক ঢুকাইছেন অথচ বলছেন চিকিৎসকের লিফট।’ ’ সঙ্গে সঙ্গে টি শার্ট পড়া একজন রিয়াজুলের শার্টের কলার ধরে লিফটে ঢুকিয়ে ফেলেন। সঙ্গে লিফট ম্যান তাঁর ঘাড়ে ও পিঠে মারধর করতে থাকেন। এ সময় তিনি ও তাঁর সন্তান বিষয়টি দেখে চিৎকার করতে থাকেন। এরপর মার খেলেও রিয়াজুলকে বুঝিয়ে শান্ত করি আমি।’ 

এরপর দ্বিতীয় তলায় রোগীর আত্মীয়কে ফোন করেন আয়েশা। ওই সময় ১৫-২০ জন একসঙ্গে রিয়াজুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যান। চারতলায় ৩২৬ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফা মারধর করেন। ওই রুমটি ছিল একজন চিকিৎসকের। সেখানে প্রচুর মারধর করতে দেখে সামনে গেলে আয়েশাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তাঁরা। এমনকি চড়-থাপ্পড়ও দেন বলে জানান আয়েশা। 

আয়েশা বেগম আরও বলেন, ‘আমার জামাও ছিঁড়ে ফেলেন তাঁরা। সঙ্গে আমার সন্তানও ছিল। সেও আঘাত পেয়েছে। আমার স্বামীকে ওই রুমে মারধর করেন অনেক চিকিৎসকও। পরে আমরা জানতে পেরেছি, লিফটে টি শার্ট পরা ব্যক্তিটি একজন চিকিৎসক। মারধর করার পর আমার স্বামীকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। থানায় গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ বলেছে, ‘‘তাঁরা অনেক প্রভাবশালী, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেওয়া যাবে না।’ 

এদিকে খবর পেয়ে ভুক্তভোগী রিয়াজুল ইসলামের খালাতো ভাই ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) মোয়াজ্জেম হোসেন চমেকে যান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি গেছি ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু চমেকের পরিচালক আমার কথা না শুনে, উল্টো যারা মারধর করেছে তাঁদের পক্ষ নেন। থানায় গেলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। আমরা এই বিষয়ে আদালতে যাব।’ 

চমেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তারা যে লিফটে উঠতে চেয়েছেন, ওই লিফট ছিল কর্মচারীদের। রিয়াজুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তিকে লিফটে না উঠতে বললে, লিফটে থাকা কর্মচারী ও একজন সহযোগী অধ্যাপকের গায়ে হাত তোলেন। পরে কর্মচারীরা তাঁকে আটকিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। 

শামীম আহসান আরও বলেন, ‘তাঁদের হয়ে কথা বলতে মোয়াজ্জেম হোসেন নামে একজন উপসচিব আসছিলেন। যেহেতু চিকিৎসকের গায়ে হাত তুলেছে, তাই এই বিষয়ে কিছু করা যাবে না বলে জানিয়েছি।’ 

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মুজমদার বলেন, চমেকের প্রশাসন রিয়াজুল ইসলামকে ধরে থানায় দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ওই ব্যক্তি চিকিৎসকের গায়ে হাত তুলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে চমেক প্রশাসন। 

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, রিয়াজুল ইসলামের পরিবারের অভিযোগ নেওয়ার তো কিছু নেই। কারণ রিয়াজ চিকিৎসকের গায়ে হাত তুলেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত