Ajker Patrika

মুহুরি নদীর বাঁধে ভাঙনের কারণে পলি জমে ভরাট ৫০ পুকুর 

পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি
Thumbnail image

ফেনীর পরশুরামে বন্যায় মুহুরি নদীর পশ্চিম অলকা গ্রামের বেড়িবাঁধ ভাঙে প্লাবিত হয়ে ছোট-বড় অন্তত ৫০ পুকুর পলি মিশ্রিত বালুতে ভোট হয়ে গেছে। বর্তমানে শুধু পুকুরের ঘাটসহ এর পাড়ের গাছ দেখেই পুকুরের সীমানা নির্ধারণ করছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, গত ২০ আগস্ট রাতে বন্যায় মুহুরি নদীর পশ্চিম অলকা গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পানিতে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমির পাশাপাশি পশ্চিম ও পূর্ব অলকা গ্রামের ৫০টি পুকুরের কোনো অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে না।

উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামের আব্দুল মালেক জানান, ২০ দিন পরও তিনি বাড়ির ছাদে বসবাস করছেন। বাড়ির ছাদের কার্নিশ পর্যন্ত বালুর স্তূপ রয়েছে। বসত ঘরের ভেতর থেকে বালু ও পলিমাটি সরাতে গত ২০ দিনেও শেষ করতে পারেনি। এখনো বাড়ির ছাদে ত্রিপল দিয়ে থাকতে হচ্ছে।

আবদুল মালেক আরও জানান, তাঁর দুটি পুকুর ছিল একটি দুই একর আয়তনের। আরেকটি পুকুর পাড়ে এখন শুধু গাছ দেখা যাচ্ছে আর তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাড়ির টিউবওয়েল এখনো বালুর নিচে পড়ে আছে। বাজার থেকে বোতল জাতের পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। বালু ও মাটি কেটে তাঁর ঘরের দরজা জানালা খুলতে হয়েছে। টয়লেটও পানির নিচে।

উপজেলার সবচেয়ে বড় মাঝ চাষি বিসমিল্লাহ ফিশারিজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মোনাফ চৌধুরী বলেন, পশ্চিম অলকা গ্রামের প্রায় দশটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করা হয়। বন্যার পানিতে প্রথম দিনের সব মাছ ভেসে গেলেও বর্তমানে পুকুরগুলোর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবকটি পুকুর বালু ও পলি মাটিতে ভরাট হয়ে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। পুকুর পাড়ের গাছ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ ছাড়া পুকুরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

ওই এলাকার দারুস সালাম মসজিদের একটি পুকুরেরও একই দশা। পুকুরের বর্তমানে শুধু ঘাট দৃশ্যমান রয়েছে। বালু ও পলি মাটিতে বেশির ভাগ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি ও পুকুরটি মসজিদের নামে দিয়ে দেন। ওই পুকুরের মাছ চাষ থেকে আয়ের টাকা দিয়ে মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিনের টাকা দেওয়া হতো। বন্যার পানির স্রোতে পলি ও বালুতে পুকুরটি বর্তমানে অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে।

পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সিফাত হাসান বলেন, উপজেলায় প্রায় ২০০ হেক্টর ফসলি জমি পলি ও বালু মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় ওইসব এলাকায় বেশির ভাগ পুকুর বালু ও পলি মিশ্রিত মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, পরশুরাম উপজেলায় প্রায় ২০০ হেক্টর ফসলি জমি বালু ও পলি মিশ্রিত মাটি ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও অসংখ্য পুকুর বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে এসব ফসলি জমি ও পুকুরের সীমানা নির্ধারণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় মুহুরি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পশ্চিম অলকা গ্রামের পানিতে প্লাবিত হয়ে অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তা, পুল, কালভার্ট, ফসলের জমি বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ৫০ হেক্টর ফসলি জমির পলি ও বালু মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত