Ajker Patrika

মাদ্রাসায় পড়া মুখস্থ না করায় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
নিহত শিক্ষার্থী ছানিম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিক্ষার্থী ছানিম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে পড়া মুখস্থ না করায় মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের এক ছাত্রকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, সে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে শহরের আল মঈন ইসলামি একাডেমি নামের মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্রের নাম ছানিম হোসেন (৭)। সে রায়পুর উপজেলার চরবংশীর কুছিয়া এলাকার হুমায়ুন মাতাব্বরের ছেলে।

ছানিমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনায় মাহমুদুর রহমান নামের এক শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পুলিশ ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ছানিমকে ২০২৩ সালে আল মঈন ইসলামি একাডেমির হেফজ বিভাগে ভর্তি করানো হয়। তাকে কারণে-অকারণে প্রায়ই মাহমুদুরসহ অন্য শিক্ষকেরা নির্যাতন করতেন। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ বসির আহমেদকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।

বুধবার সকালে পড়া মুখস্থ করতে না পারায় ছানিমকে শিক্ষক মাহমুদুর বেদম মারধর করেন। ছানিম পরে বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মা জয়নবকে জানায়। এরপর বিকেলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছানিমের মাকে ফোন দিয়ে জানায়, তাঁর ছেলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা মাদ্রাসার সামনে গিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তাদের অভিযোগ, আগেও এই মাদ্রাসায় একাধিক শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিচার না হওয়ায় শিক্ষকেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচারের দাবি জানান বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পাশাপাশি মাদ্রাসাটি বন্ধের দাবি করেন তাঁরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মা জয়নব ও বাবা হুমায়ুন মাদ্রাসায় গিয়ে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েন। তাঁরা জানান, ছানিমকে কোরআনে হাফেজ বানানোর জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলেন। অনেক কষ্ট করে প্রতি মাসের বেতন ও হোস্টেল ভাড়া পরিশোধ করছিলেন। কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষক মাহমুদুরসহ অন্য শিক্ষকেরা প্রায়ই ছানিমকে কারণে-অকারণে মারধর করতেন।

নিহত শিক্ষার্থী ছানিম হোসেনের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহত শিক্ষার্থী ছানিম হোসেনের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মা-বাবার অভিযোগ, সর্বশেষ বুধবার সকালে পড়া মুখস্থ করতে না পারায় ছানিমকে বেদম মারধর করা হয়। তাকে পিটিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ৭ বছরের এই শিশু আত্মহত্যা করতে পারে না উল্লেখ করে তাঁরা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বসির আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থী ছানিম মাদ্রাসার টয়লেটে গিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে সকালে মাদ্রাসার শিক্ষক মাহমুদুর রহমান শিক্ষার্থী ছানিমকে পড়ালেখা করার জন্য কিছুটা শাসন করেন বলে স্বীকার করেছেন। ওই শিক্ষার্থীর শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। মাদ্রাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, জোহরের নামাজ পড়ার পর সে টয়লেটে প্রবেশ করে আর বের হয়নি।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। শিশুটির গায়ে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত