Ajker Patrika

বাঁশের তৈরি পাহাড়ি বাদ্যযন্ত্র ধুদুক ও হিংকরং টিকিয়ে রাখতে চান সাচিঅং 

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৫: ৩২
বাঁশের তৈরি পাহাড়ি বাদ্যযন্ত্র ধুদুক ও হিংকরং টিকিয়ে রাখতে চান সাচিঅং 

বাঁশের তৈরি পাহাড়ি বাদ্যযন্ত্র ধুদুক ও হিংকরং। চাকমা ভাষায় হিংকরংকে খেংগরং বলে। আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের দাপটে পাহাড়ে এই যন্ত্র দুটির বাদক দিনে দিনে কমে আসছে। বিশেষ করে চাকমাদের বিজু ও তনচংগ্যা সম্প্রদায়ের বিষু উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে এই যন্ত্র পরিবেশন করেন কিছু পাহাড়ি বাদ্যযন্ত্রী।

তাঁদের একজন ৬৫ বছর বয়সী সাচিঅং তনচংগ্যা, যিনি বিগত ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ধুদুক ও হিংকরং বাজিয়ে আসছেন। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা ২ নম্বর রাইখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভালুকিয়া তনচংগ্যাপাড়ার ইন্দ্র কুমার তনচংগ্যার ছেলে সাচিঅং তনচংগ্যা। পেশায় একজন কৃষক হলেও শখের বসে এবং নিজস্ব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তিনি এই যন্ত্র দুটি বাজান।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কাপ্তাই ওয়াগ্গা জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহারে তনচংগ্যা সম্প্রদায়ের বিষু উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি ধুদুক ও হিংকরং বাজিয়ে দর্শকের অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করেন। তাঁর পরিবেশনা শেষে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।

সাচিঅং তনচংগ্যা জানান, তাঁর বয়স যখন ১৮ বছর, তখন তিনি রাজস্থলী উপজেলায় একটি বিষুর প্রোগ্রামে প্রথম ধুদুক বাজান। সেদিন তাঁর বাজনায় খুশি হয়ে এক দর্শক তাঁকে ৫০০ টাকা পুরস্কার প্রদান করেন। সেই দিন ভীষণ খুশি হয়েছিলেন তিনি।

বিষু উৎসবে বাঁশের তৈরি পাহাড়ি বাদ্যযন্ত্র ‘ধুদুক’ বাজান প্রবীণ যন্ত্রশিল্পী সাচিঅং তনচংগ্যাসাচিঅং বলেন, ‘এই পর্যন্ত আমি কাপ্তাইয়ের ভালুকিয়া, ওয়াগ্গা এবং রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন পাড়ায় সামাজিক উৎসবে ধুদুক ও হিংকরং বাজিয়েছি। আমার বাবাও এ দুটি যন্ত্র বাজাত। আমি বাবার কাছ থেকে এইগুলোর বাজনা শিখেছি। ফুঁ দিয়ে হিংকরং বাজাতে বেশ পরিশ্রম হয়। তবে হাতের সাহায্যে নির্দিষ্ট তাল মাত্রায় ধুদুক বাজাতে হয়।’

সাচিঅং আক্ষেপ করে বলেন, ‘ইদানীং নতুন নতুন ইলেকট্রনিক যন্ত্রের প্রভাবে আমাদের সামাজিক উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই বাজনা শুনতে চায় না বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। তবে জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এই যন্ত্রগুলো বাজাব। যদিও এই যন্ত্র বাজিয়ে আমি জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি না, তাই আমি সংসার চালানোর জন্য কৃষিকাজ করি।’

কাপ্তাই ওয়াগ্গার তনচংগ্যা ভাষার গীতিকবি শিক্ষক চাঁদ কুমার তনচংগ্যা বলেন, ‘আমাদের আদি সংস্কৃতির একটি অনুষঙ্গ এই বাদ্যযন্ত্রগুলো। তবে কালের বিবর্তনে এগুলো হারাতে বসেছি আমরা। সাচিঅং তনচংগ্যার মতো কিছু শিল্পীর জন্য এখনো মাঝে মাঝে আমাদের এই যন্ত্রগুলোর পরিবেশনা মঞ্চে শুনতে পাই।’

কাপ্তাইয়ের এই প্রজন্মের সংগীতশিল্পী বেতার ও টিভি শিল্পী জ্যাকলিন তনচংগ্যা, সুমনা তনচংগ্যা ও সূর্যসেন তনচংগ্যা অভিমত ব্যক্ত করে জানান, নিজস্ব সংস্কৃতি টিকে রাখতে হলে এই যন্ত্রগুলোর চর্চা নতুন তনচংগ্যা শিল্পীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত