Ajker Patrika

৬ বছর আগে গ্রাম ছাড়েন ‘হ্যাকার’ আল-আমিন, মা থাকেন আশ্রয়ণের ঘরে 

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৪: ০২
৬ বছর আগে গ্রাম ছাড়েন ‘হ্যাকার’ আল-আমিন, মা থাকেন আশ্রয়ণের ঘরে 

র‍্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর পর স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. এনামুল হক যাঁর বিরুদ্ধে নিজের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগ তুলেছেন, তিনি মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের এজেন্ট মো. আল-আমিন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিবার, স্থানীয় শিক্ষক ও এলাকাবাসী।

প্রযুক্তি সম্পর্কে আল-আমিনের এমন অভিজ্ঞতা আছে বলে ধারণা নেই কারওরই। তবে বিকাশ এজেন্টের কাজে প্রায় ১০ বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন সে কথা সবারই জানা।

সরেজমিনে আল আমিনের গ্রামের বাড়িতে জানা যায়, আল-আমিন চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের গাজিবাড়ির নুরুল ইসলাম ও সুফিয়া বেগমের ছেলে। মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়ে ২০ বছর আগে থেকে তাঁরা একই উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব চরকৃষ্ণপুর গ্রামে বাড়ি করে থাকেন। তাঁরা ৫ ভাইবোন। আল-আমিনের বড় তিন বোন এবং ছোট এক ভাই। ছোট ভাই হাইমচর কাটাখালি লঞ্চঘাট এলাকা থেকে উপজেলা পর্যন্ত অটোরিকশাচালক।

প্রতিবেশী ও আল-আমিনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মফিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আল-আমিনের পিতা নুরুল ইসলাম দুটি বিয়ে করেছেন। আল-আমিন প্রথম স্ত্রীর সন্তান। ৫ সন্তানকে ছোট রেখে তাঁর বাবা আরেকটি বিয়ে করে গাজীপুর জেলায় চলে যান। সেখানে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন। প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে আল-আমিনের মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের বড় করেছেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে আল-আমিনকে আমি নিজেই নীল কমল উচ্চবিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিই। কিন্তু সে বেশি দিন পড়তে পারেনি। সংসারের অভাবের কারণে বিভিন্ন মানুষের কাজ করেছে, অটোরিকশা চালিয়েছে এবং উপজেলা সদরে বন্ধু হেলালের বিকাশের দোকানে কাজ করেছে।’

ওই স্কুলশিক্ষক আরও বলেন, ‘৫-৬ বছর আগে আল-আমিন আমাদের কাটাখালি লঞ্চঘাটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে বিকাশ এজেন্টশিপ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু দোকানের মালিক ভাড়া ও দোকানের অগ্রিম টাকা বেশি চাওয়ায় এলাকায় ব্যবসা করতে পারে না। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে প্রথমে মামাতো ভাই রাজনের বিকাশের দোকানে কাজ করে। সেখানে পারিশ্রমিক কম হওয়ার কারণে নিজেই ঢাকা মালিবাগে একটি ফার্মেসির দোকানের সামনে ফুটপাতে একটি ছাতা দিয়ে বিকাশের কাজ করে। এটাই আমরা জানতাম।

 ‘আর সে বাড়িতে দুই ঈদ ছাড়া তেমন আসে না। তাঁর বিষয়ে আমরা পত্রিকায় যে অভিযোগ দেখছি, সেগুলো বিশ্বাস করার মতো নয়। কারণ একটি সাধারণ ছেলে এই ধরনের কাজ করতে পারে না। কারণ প্রযুক্তি সম্পর্কে তাঁর এত জ্ঞান নেই। যাঁরা এই বিষয়ে কাজ করছেন তাঁদের ভালো করে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।’ 

আল-আমিনের ফুফু হাসিনা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশেই তারা বসবাস করছে। ছোটবেলা থেকেই খুবই শান্ত স্বভাবের আল-আমিন। তার বিরুদ্ধে কখনো কেউ অভিযোগ নিয়ে বাড়িতে আসেনি। কীভাবে কী হলো বুঝতে পারলাম না’

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জুনিয়র সহপাঠী কামরুল ইসলাম নিরব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই আল-আমিন ভাইকে চিনি ও জানি। তিনি প্রযুক্তি সম্পর্কে এত এক্সপার্ট আমাদের বিশ্বাস হয় না।’

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার পূর্ব চরকৃষ্ণপুর গ্রামে আল-আমিনদের বাড়িস্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, আল-আমিন আড্ডাবাজ ছিলেন না। তাঁর বন্ধু কম ছিল। তাঁর একমাত্র বন্ধু ছিলেন হেলাল। তিনি বর্তমানে প্রবাসে। তাঁর দোকানেই বিকাশ এজেন্ট অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং কাজ শুরু করেন আল-আমিন।

প্রতারণায় অভিযুক্ত আল-আমিনের মা সুফিয়া বেগম (৬৬) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলে আল-আমিন কেমন স্বভাবের এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন। ঢাকায় গেলেও ব্যবসা তেমন ভালো করতে পারে না। রমজানের শুরুতে সংসারের জন্য টাকা চাইলেও দিতে পারে না। ছোট ছেলে অটোরিকশা চালায়, তার আয় দিয়ে চলতে হয়। কী কারণে আমার ছেলেকে ধইরা নিল বুঝি না।

সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার একটা ঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী আমারে ঘর কইরা দিছে। আগে ভাঙা ঘরে থাকতাম। ছেলেকে বিয়েও করাইতে পারি না। ছেলে বলছে মা ঘর ঠিক করতে পারলে বাকি সব হবে। কী থেকে কী হইল বুঝলাম না।’

প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব, আমাদের এই অবস্থার কথা বইলেন স্যার।’

আল-আমিনের ছোট ভাই আমিন (২৯) জানান, আল-আমিন ৬ বছর আগে ঢাকায় চলে যান।

ওই এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য সোহেল পাটওয়ারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আল-আমিনরা গাজীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। নদীভাঙনের পর এখানে বাড়ি করছে। আমার সাথে ওইভাবে চলাফেরা কম।’

এ বিষয়ে গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজ পেদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আল-আমিনদের পরিবার আমার পরিচিত। তাঁর ছোট ভাই আমিন অটোরিকশাচালক। তাঁর সম্পর্কে আমি অবগত। তাঁর সাথে কথা হয় এবং দেখা হয়। কিন্তু আল-আমিন ঢাকায় থাকার কারণে তাঁর বিষয়ে আমি অবগত না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত