Ajker Patrika

বন্য হাতির ভয় আপাতত নয়

  • দেয়াঙ পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্য হাতির পালের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ ছিল দুই উপজেলার মানুষ।
  • গতকাল ভোরে হাতিগুলো বাঁশখালীর বনে ফিরে গেছে বলে দাবি বন বিভাগের।
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৫২
লোকালয়ে ঘুরছে বন্য হাতি। সম্প্রতি তোলা ছবি। সংগৃহীত
লোকালয়ে ঘুরছে বন্য হাতি। সম্প্রতি তোলা ছবি। সংগৃহীত

থেমে নেই হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব। দেয়াঙ পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতির পালের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী—দুই উপজেলার গ্রামবাসী। ৭ বছর ধরে বন্য হাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে গতকাল রোববার ভোরে হাতিগুলো নিজেরাই বাঁশখালীর বনে ফিরে গেছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ।

স্থানীয়রা বলছেন, হাতির আক্রমণে প্রতিরাতে কোথাও না কোথাও ভাঙচুর ও আহতের ঘটনা ঘটছেই। বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। হাতির ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটায় আনোয়ারা-কর্ণফুলীর কেইপিজেডের আশপাশের বাসিন্দারা।

রোববার সকাল থেকে বন বিভাগ, স্থানীয় বাসিন্দা এবং হাতি নিরসনে বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাতি চলে যাওয়ার বিভিন্ন ভিডিও প্রচার করে। প্রায় ৭ বছর পর একসঙ্গে তিনটি হাতি চলে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরছে স্থানীয়দের মাঝে। এদিকে হাতিগুলো যাতে সহজে ফিরতে না পারে, সে জন্য ইআরটি টিমের সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ।

বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দু-এক দিন আগে দুটি হাতি বাঁশখালীতে চলে আসে। বাকি একটি হাতিকে আমাদের ইআরটি টিম কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন কৌশলে রোববার ভোরের দিকে তৈলারদ্বীপ হয়ে বাঁশখালী বনে নিয়ে আসে। হাতি ফিরে আসতে চাইলে কারও আটকানোর সাধ্য নেই। তবে হাতিগুলো যাতে খুব সহজে ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য তৈলারদ্বীপ সেতু এলাকায় ইআরটি টিমের সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক দিন আগে দুটি হাতি কেইপিজেড থেকে বাঁশখালীর বনে চলে যায়; যেখান থেকে হাতিগুলো এসেছিল। আর একটি হাতি ছিল; সেটিকে বন বিভাগের ইআরটি টিমের প্রচেষ্টায় বাঁশখালীর বনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক যুগ আগে থেকে বন্য হাতির দল কেইপিজেডের পাহাড়ে অবস্থান নেয়। সেই সময় কয়েক দিন ঘুরেফিরে চলে গেলেও ২০১৮ সাল থেকে হাতিগুলো কেইপিজেড, দেয়াঙ পাহাড়ে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। হাতির আক্রমণে ৭ বছরে নারী-শিশুসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। হাতির পালটি আনোয়ারার বটতলী হাজীগাঁও ও কর্ণফুলীর কেইপিজেডের দেয়াঙ পাহাড়, হ্রদ ও বন ঘেরা জায়গায় বিচরণ করে। তাদের হামলায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। বিভিন্ন সময়ে গভীর রাতেও টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত সংযোগ সড়কের পশ্চিম বৈরাগ অংশ পার হতে দেখা যায় তিনটি হাতি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ২০১৮ সালের শেষ দিকে ওই হাতির দল স্থায়ীভাবে কেইপিজেড এলাকায় বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি হাতির আক্রমণে ওই এলাকায় মানুষের প্রথম মৃত্যু হয়। শুরুতে এই দলে দুটি বড় এবং একটি ছোট হাতি ছিল। মাঝে মাঝে আরও একটি বড় আকারের হাতিকে এ দলের সঙ্গে দেখা যায়। স্থানীয়দের কাছে সেটি ‘লেজ কাটা’ হাতি নামে পরিচিত। এই হাতির দলের তাণ্ডবে সব সময় আতঙ্কে থাকে কর্ণফুলীর বড়উঠান ও আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের মানুষ।

এদিকে হাতির বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় এক শর বেশি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন।

ইআরটি টিম লিডার এইচ এম হাশেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া তিনটি হাতির মধ্যে দুটি কয়েক দিন আগে এবং অপরটি রোববার ভোরে তৈলারদ্বীপ সেতু হয়ে বাঁশখালীর দিকে চলে যায়। হাতিগুলোর পেছনে আমাদের ইআরটি টিমের সদস্যরা পর্যবেক্ষণে ছিলেন। হাতির পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে সদস্যরা হেঁটে গিয়েও বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত