Ajker Patrika

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সি-ট্রাক চালু, পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের একমাত্র শৈলদ্বীপ কক্সবাজারের মহেশখালী। এই দ্বীপ উপজেলার আরেক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া। ১০ হাজার একর আয়তনের দ্বীপটিতে একসঙ্গে সুন্দরবন ও সাগরের নয়নাবিরাম দৃশ্য দেখতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা।

মিষ্টি পান, চিংড়ি, লবণ ও শুঁটকি উৎপাদনের জন্য দ্বীপটি প্রসিদ্ধ হলেও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ নানাভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে মহেশখালীর নাম উঠে আসছে। কিন্তু এত সম্ভাবনার দ্বীপটিতে নিরাপদ যাতায়াতের অভাব ছিল দীর্ঘদিনের। সেই অভাব আপাতত মিটছে একটি সি-ট্রাকে।

আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন হয়েছে। দুপুরে শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএর ঘাট থেকে সি-ট্রাকে চড়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মহেশখালীর উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মহেশখালীর কৃতি সন্তান অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান।

সমুদ্র চ্যানেলের দীর্ঘ আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৪৫ মিনিটে সি–ট্রাকটি মহেশখালীর গোরকঘাটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিতে পৌঁছায়। মহেশখালীর ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহর পরিচালনায় সেখানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নৌ উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান মো. সলিমুল্লাহ, বিআইডব্লিউটিএ সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) মো. জিয়াউল ইসলাম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. সাইফ উদ্দিন শাহীন, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন, বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার ও বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার (কস্তুরাঘাট) নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দ্বীপের বাসিন্দারা রাজনৈতিক মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি ছিলেন। এ কারণে এই সেবা এত দিন চালু হয়নি। এখন থেকে দ্বীপের বাসিন্দারা নিরাপদে সি–ট্রাকে করে যাতায়াত করতে পারবেন। সি–ট্রাকে করে রাতেও যাতে দ্বীপের বাসিন্দারা যাতায়াত করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, মহেশখালীতে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে, মাতারবাড়ীতে অনেক বড় উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে গেল ২০ বছরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে মহেশখলীবাসীর জন্য। একটা নিরাপদ নৌযান সি-ট্রাক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার সূত্রপাত হয়েছে, কিন্তু সব সমস্যার সমাধান হয়নি।

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে বহুল প্রতীক্ষিত সি-ট্রাক সেবা চালুতে দ্বীপবাসী উচ্ছ্বসিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্ষা মৌসুমে কাঠের নৌকা, লোহার গামবোট ও স্পিডবোটে করে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করতে হতো। ভাড়াও ছিল অতিরিক্ত। এই যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণ করত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, যারা যাত্রীদের নানাভাবে জিম্মি করে রাখত।

বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান জানান, মহেশখালী থেকে কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাটে জনপ্রতি ৩৫ টাকা এবং মহেশখালী থেকে কক্সবাজার নুনিয়ারছড়া ঘাটে ৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। একসঙ্গে যাতায়াত করতে পারবেন ২৫০ জন যাত্রী।

খায়রুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা, দুপুর ১২টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মহেশখালীর উদ্দেশে সি-ট্রাক ছেড়ে যাবে। মহেশখালী থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়বে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা, বেলা ১১টা ও বিকেল ৫টায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত