Ajker Patrika

অগ্নিসংযোগ-লুটপাটে ফেনী পৌরসভায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি

ফেনী প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৫৮
অগ্নিসংযোগ-লুটপাটে ফেনী পৌরসভায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি

৫ আগস্ট অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ফেনী পৌরসভার ২৫ খাতে ৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫০ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যান্ত্রিক খাত। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এই তালিকা করা হয়েছে। 

ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির তথ্য আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন ফেনী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আবুজর গিফরী। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট সহিংসতায় পৌরসভার ২৫ খাতে নিরূপিত ক্ষতি মূল্যায়ন করে আনুমানিক আর্থিক পরিমাণ সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।’ 

প্রাপ্ত ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যান্ত্রিক শাখায়, এই শাখায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার যানবাহন ও বিভিন্ন সামগ্রীর ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, মেডিকেল অফিসারের কক্ষে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০, সাধারণ শাখায় ৫১ লাখ ৩ হাজার ও হিসাব বিভাগ শাখায় ক্ষতি হয়েছে ৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার মালামাল। 

কর নিরূপণ শাখায় মালামাল ক্ষতি হয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮৩০ টাকার, কর আদায় শাখার ১৫ লাখ ৬৩ হাজার, ট্রেড লাইসেন্স শাখার ৬ লাখ ৯৮ হাজার ১০০, স্বাস্থ্য শাখায় ২ লাখ ৯১ হাজার, কনজারভেন্সি শাখার ২৯ লাখ ৫৭ হাজার, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কক্ষের ৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০০, উপসহকারী প্রকৌশলী সিভিল-১ কক্ষের ২ লাখ ৩৩ হাজার, উপসহকারী প্রকৌশলী সিভিল-২ কক্ষের ৩ লাখ ৯৭ হাজার, উচ্চমান সহকারীর কক্ষের ২ লাখ ৮ হাজার, উপসহকারী প্রকৌশলীর (বিদ্যুৎ) ৪ লাখ ৩ হাজার টাকা, উপসহকারী প্রকৌশলীর (বিদ্যুৎ) কক্ষের ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকার বৈদ্যুতিক মালামালের ক্ষতি হয়েছে। 

ব্লাড ব্যাংকে ৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকার মালামাল ক্ষতি হয়েছে, মশকনিধন কক্ষে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৯০০, মসজিদে ২ লাখ ২২ হাজার ৬২০, রিকশা স্টোরের ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০, পানি শাখার ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ এবং পেট্রোবাংলার পানি শাখার ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আগুনে পৌর ভবনের আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। 

পৌরসভা সংস্কার প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার ফেনীর উপপরিচালক (ডিডিএলজি) গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ক্ষতি নিরূপণের তালিকা করা হয়েছে। এটি সংস্কারে পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে কিছু ব্যয় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পৌর পরিষদকে এটি করতে হবে। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে।’ 

অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাটে বিএনপি কিংবা জামায়াতের লোক নয় বলে দল দুটির নেতারা দাবি করছেন। গত রোববার ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী পৌরসভা পরিদর্শন করেন জেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। পরিদর্শন শেষে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, ‘বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী এসব অপকর্মে জড়িত নয়। যারা সহিংস কাজে জড়িত ছিল, তাদের কাউকে আমরা চিনি না। টোকাই শ্রেণির কিছু লোক ফেনী পৌরসভা, ফেনী মডেল থানাসহ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।’ 

পরিদর্শনে ফেনী পৌরসভার অবস্থা দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সংস্কার করে সেবা কার্যক্রম চালুর আশ্বাস দেন বিএনপির নেতারা। এ জন্য পৌরসভায় বৈদ্যুতিক সমস্যা সমাধান, কর্মকর্তাদের বসার জন্য চেয়ার–টেবিল ও কম্পিউটার সামগ্রী দেওয়ার আশ্বাস দেন তাঁরা। ইতিমধ্যে ছাত্রদল-যুবদল নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় পৌরসভা থেকে লুট করা বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন বলেন, ‘আমরা জ্বালাও-পোড়াও বা লুটপাটের রাজনীতি করি না। ছাত্রদল শান্তিপূর্ণ সংগঠন। পৌরসভার লুটপাট হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধারে যুবদল-ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা ভূমিকা রাখছে।’ 

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে ফেনীতে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পড়ে ফেনী মডেল থানা ও পৌরসভা। এতে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর বন্ধ হয়ে যায় নাগরিক সেবা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত