Ajker Patrika

পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের সংঘর্ষ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭: ১৪
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক অবরোধ করেছে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক অবরোধ করেছে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের এক নেতাকে ঘিরে চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও থানা পুলিশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নেয়। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রথম দফায় থানার ভেতরে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন বলে দাবি করা হয়েছে। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডিবি পুলিশের লাঠিপেটায় ছাত্র আন্দোলনের অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হন।

এ ঘটনার পর বুধবার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পটিয়ায় অবরোধ কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে ৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে থানা কর্তৃপক্ষ। তবে কারো নাম জানাতে পারেনি তারা। সর্বশেষ তথ্যমতে, অবরোধকারীদের সরাতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি দল পৌঁছেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দীপঙ্কর দে নামের রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের এক নেতাকে পটিয়ায় আটক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা থানায় নিয়ে যান এবং পুলিশকে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। কিন্তু তাঁর নামে থানায় কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ গ্রেপ্তারে অস্বীকৃতি জানায়। পুলিশ জানায়, রাঙামাটিতে কোনো মামলা থাকলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই অবস্থায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়, যা একপর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় থানার ভেতরে, গেট ও অভ্যর্থনা কক্ষে ভাঙচুর চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ আজকের পত্রিকার হাতে রয়েছে।

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আরও আন্দোলনকারী থানার সামনে জড়ো হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ডিবি পুলিশের একটি দল এসে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তালহা রহমান বলেন, “আমরা বারবার তথ্য দিয়েও পুলিশকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। এবার যখন এক ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে থানায় নিয়ে যাই, তখন পুলিশ উল্টো আমাদের ওপরই চড়াও হয়। এটা কীভাবে সম্ভব?”

চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী বলেন, “জুলাই দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি শেষে থানার মোড়ে অবস্থানকালে দীপঙ্কর নামের ওই ছাত্রলীগ নেতাকে দেখে পুলিশকে গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানাই। কিন্তু পুলিশ গ্রেপ্তার না করে উল্টো ছাত্রদের ওপর লাঠিপেটা করে। খবর পেয়ে আমি ও আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী থানার গেটে যাই। এর মধ্যেই ডিবি পুলিশ এসে কোনো সতর্কতা ছাড়াই আমাদের লাঠিপেটা করে।”

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বলেন, “ছাত্রলীগের এক নেতাকে নিয়ে বৈষম্যবিরোধীরা থানায় আসেন। এরপর তাঁকে ঘিরে একদল ‘মব’ তৈরি হয় এবং তারা থানায় হামলা চালায়। এ সময় তারা নিরাপত্তা ভেঙে থানায় ঢোকার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। মব ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের ৪–৫ জন সদস্য আহত হন। মব ঠেকানো না গেলে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারত।”

ওসির অপসারণের দাবিতে এবং ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। শুরুতে থানার সামনের সড়ক অবরোধ করা হলেও বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া ইন্দ্রপোল মডেল মসজিদের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে ও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দুই পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় এবং যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৪টা) অবরোধ চলছিল। কেন্দ্রীয় নেতা খান তালাত মাহমুদ রাফিসহ আরও কয়েকজন এতে যোগ দিয়েছেন। বিকেল আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছে যেন মানুষকে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করা যায়।

দৈনিক আজকের পত্রিকার মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদক আবদুল কাইয়ুম অবরোধস্থল থেকে জানান, আন্দোলনকারীরা অ্যাম্বুলেন্স, পরীক্ষার্থী ও স্কুল-কলেজগামী যানবাহনগুলোকে ব্যারিকেড পার হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে কিছু দাবি জানিয়েছে। আমরা তা বিবেচনা করছি।”

অবরোধস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে এই অবরোধ হচ্ছে। পটিয়া মডেল মসজিদসংলগ্ন মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় তাঁরা ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর ও এসআই আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং তাঁদের অপসারণ দাবি করেন।

অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। পথচারী ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যান চলাচল করতে না পারায় অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত