Ajker Patrika

জাটকা বিতরণ নিয়ে হিমশিম কর্তৃপক্ষ, একাধিক স্থানে পুলিশের লাঠিপেটা

বরিশাল প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৯: ০৪
জাটকা বিতরণ নিয়ে হিমশিম কর্তৃপক্ষ, একাধিক স্থানে পুলিশের লাঠিপেটা

সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল পরিমাণ জাটকা জব্দ করছে বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশ। উপকূলীয় এলাকায় জব্দ করা সেসব জাটকা লঞ্চ, বাস, পিকআপে আনা হচ্ছে। এই মাছ বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশ। বিতরণ করতে গেলেই হাজারো মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। গতকাল রোববার বিতরণ করতে গিয়ে ভিড় সামলাতে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। গত আড়াই মাসে জাটকা বিতরণকালে ৮ থেকে ১০টি স্থানে এমন বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর জাটকা ধরা পড়ছে বেশি। এভাবে নির্বিচার জাটকা ধরলে মৌসুমে বড় ইলিশের সংকট দেখা দেবে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরিশাল জেলায় গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ টন জাটকা জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪০ টন নৌ পুলিশ ও ৩০ টন মৎস্য অধিদপ্তর জব্দ করেছে।

জানা গেছে, গত বছরের ২৩ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন ভোলা রুট থেকে প্রায় ১০০ মণ জাটকা জব্দ করে নৌ পুলিশ। পরদিন বিতরণকালে কয়েক শ মানুষের ভিড়ে হট্টগোল বেধে যায়। সেখানে থানার কয়েকজন মাঝি জাটকা লুকিয়ে রাখলে মানুষের তোপের মুখে পড়েন তাঁরা। একপর্যায়ে নৌ পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

জাটকা বিতরণ করতে গেলেই মানুষের ঢল নামছে। সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলাএর আগে চলতি মাসের শুরুতে পুলিশ লাইনসে জাটকা বিতরণকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। একইভাবে গত সপ্তাহে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জাটকা বিতরণকালে এলাকাবাসী ও ছাত্ররা জাটকা নিয়ে তুলকালাম ঘটায়। 

এদিকে গতকাল রোববার বরিশালে মৎস্য অধিদপ্তর চত্বরে জাটকা বিতরণ নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জব্দ করা জাটকা নগরীর সিঅ্যান্ডবি সড়কে মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে নিয়ে এলে হাজারো মানুষ ভিড় করে। দুপুরে মাছ বিতরণ শুরু হয় চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে। একপর্যায়ে জাটকা লুটের উপক্রম হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। 

জানতে চাইলে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘রোববার চারটি গাড়িতে প্রায় ১০০ মণ জাটকা জব্দ করা হয়। সেগুলো মৎস্য ভবনে এনে বিতরণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এত ইলিশ বিতরণে হাজারো মানুষের বিপরীতে মাত্র চারজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এত লোক কোথা থেকে এল জানা নেই!’ 

এ মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নৌ পুলিশ সম্প্রতি জাটকা বিতরণকালেও পুলিশ লাইনসে একই সমস্যায় পড়েছিল। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও জাটকা বিতরণকালে মাছ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে এলাকাবাসী ও ছাত্ররা।’ তিনি বলেন, ‘এ সমস্যার মূলে মাঝি এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণির স্টাফ। কীভাবে এই বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবছি।’ 

জাটকা বিতরণ করতে গেলেই মানুষের ঢল নামছে। সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলানৌ পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন বলেন, ‘এর সঙ্গে জড়িত মৎস্য ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে জাটকা পাঠাচ্ছেন। নদীতে অভিযান জোরদার না হওয়ায় এত জাটকা ধরা পড়ছে।’ 

সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জীব সন্যামত বলেন, ‘বিতরণকালে পাবলিক হুমড়ি খেয়ে পড়লে এ কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফোর্স বাড়ানো দরকার। গত ১ নভেম্বর থেকে সদরের আওতাধীন প্রায় ৫ টন জাটকা জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই এসেছে ভোলা, পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা থেকে।’ 

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রশাসন নদীতে কঠোর অভিযান না করায় জাটকা পাচারকালে তা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটছে। এ ক্ষেত্রে সব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এখন জাটকা নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।’ 

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিতরণে কারা সমস্যা করে, আপনারা ভালোই জানেন। চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণ করার।’ তিনি মনে করেন, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। মানুষ একসময় বুঝবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত