Ajker Patrika

বরগুনায় ‘ট্রি হসপিটাল’: ভাগ্যবিড়ম্বিত গাছদের জন্য নিবাস

বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনার বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম অ্যান্ড রিসোর্ট। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরগুনার বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম অ্যান্ড রিসোর্ট। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভাগ্যবিড়ম্বিত ও আহত গাছের জন্য হাসপাতাল—এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বরগুনার বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম অ্যান্ড রিসোর্ট। ‘ট্রি হসপিটাল’ নামে এই প্রকল্প এখন স্থানীয়ভাবে বৃক্ষ সংরক্ষণে নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে। এটি দেশের একমাত্র ইকো রিসোর্ট, যেখানে সর্বাধিক দেশীয় বৃক্ষ সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

বরগুনার বিশিষ্ট চিকিৎসক মনিজা বলেন, ‘শহরের জমি বিক্রি করে নতুন ভবন নির্মাণের সময় বাবার হাতে লাগানো অনেক স্মৃতিবিজড়িত বৃক্ষ কেটে ফেলতে হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোতে জড়িয়ে ছিল আমাদের শৈশবের স্মৃতি। সুরঞ্জনা রিসোর্ট সেই গাছগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। এখন সেখানে গিয়ে নিয়মিত আমাদের গাছগুলোর সঙ্গে দেখা হয়।’

একই অভিজ্ঞতা জানালেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রোখসানা বেনজু। তিনি বলেন, ‘স্থান সংকুলানের কারণে আমার বাড়ি থেকেও কিছু গাছ সুরঞ্জনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে সেই গাছগুলোর কাছে দাঁড়ালে অন্য রকম এক অনুভূতি হয়। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়।’

স্থানীয় পরিবেশকর্মী, বৃক্ষপ্রেমী ও উন্নয়নকর্মীরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে সুরঞ্জনা রিসোর্টের পক্ষ থেকে ১৮ বছরের আগে কোনো গাছ না কাটার বিধিনিষেধ চেয়ে বন বিভাগ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

সুরঞ্জনার উদ্যোক্তা সোহেল হাফিজ বলেন, ‘বরগুনা উপকূলীয় জেলা হওয়ায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনে শত শত গাছ হারিয়ে যায়। নগর উন্নয়ন, সড়ক সংস্কার বা জমি বিক্রির সময়ও বহু বড় গাছ কেটে ফেলতে হয়। এসব গাছ আমরা বিশেষ প্রক্রিয়ায় তুলে এনে সুরঞ্জনায় রোপণ করছি। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক এমন গাছ এখানে আছে।’

সোহেল হাফিজ বলেন, ‘সরকারি কোনো কর্মসূচি নেই ভাগ্যবিড়ম্বিত গাছ সংরক্ষণের জন্য। অথচ এসব গাছ সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সড়ক কিংবা বৃক্ষশূন্য এলাকায় রোপণ করলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি সৌন্দর্যও বাড়বে।’

বরগুনার বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম অ্যান্ড রিসোর্ট। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরগুনার বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম অ্যান্ড রিসোর্ট। ছবি: আজকের পত্রিকা

সোহেল হাফিজ আরও বলেন, যেমন ১৮ বছর না হলে নিজের কন্যাসন্তানকে বিয়ে দেওয়া যায় না, তেমনি ১৮ বছর না হলে কাঠ বা ফলদ বৃক্ষও কাটা যাবে না—এমন আইন হওয়া উচিত। এতে পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি মালিকেরাও লাভবান হবেন।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবীর বলেন, ‘সুরঞ্জনার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ জানি। বিশ্বের বহু দেশে পুরোনো বৃক্ষ সংরক্ষণে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় এটি আরও কার্যকর। প্রতিটি জেলায় এমন উদ্যোগ থাকা উচিত।’

বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘সুরঞ্জনার ট্রি হসপিটাল আমি নিজে দেখেছি। এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। এখানে তাল, খেজুর, গাব, কাঠবাদাম, ডেউয়া, কাউফলসহ বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির সহস্রাধিক বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি পাখিদের জন্য অভয়াশ্রমও তৈরি হয়েছে। দেশের অন্যান্য ইকো রিসোর্টগুলোর জন্য সুরঞ্জনা অনুসরণীয় হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত