Ajker Patrika

বরিশালে বড় ইলিশের দেখা মিলছে না

খান রফিক, বরিশাল 
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০১: ৩৬
Thumbnail image
নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ ধরা থেকে বিরত ছিলেন জেলেরা। তাঁদের আশা ছিল, পরবর্তী সময়ে ধরা পড়বে বড় আকারের ইলিশ। কিন্তু বরিশালের জেলেদের সেই আশার গুড়ে বালি। মিলছে না কাঙ্ক্ষিত আকারের ইলিশ। ফলে নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য মোকামে বিক্রি হচ্ছে ছোট আকারের ইলিশ। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা

কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে বরিশাল নগরের নবগ্রাম সড়কে এক সাজি চাপিলা আকৃতির ইলিশের বাচ্চা বিক্রি করছিলেন বিক্রেতা লাল মিয়া। প্রতি কেজি সাড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এ জাটকা। সম্প্রতি বরিশালের বাজারগুলোয় এসব দেদার বিক্রি হচ্ছে। তবে বরিশালের ইলিশ মোকাম পোর্ট রোডে ইলিশ নেই বললেই চলে। বলা হচ্ছে, এবার বড় ইলিশ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। মৎস্য অধিদপ্তর বলেছে, ছোট ইলিশ দেদার নিধন করা এবং আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে না নদ-নদীতে।

বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীতীরের জেলে ছালাম মিয়া বলেন, ‘৮ মাস জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর মধ্যে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। আশায় ছিলাম, এখন ইলিশ ধরা পড়বে। কিন্তু কোথায় ইলিশ! ৪ পিসে এক কেজি আকারের ইলিশের চেয়ে বড় ইলিশ গত এক সপ্তাহেও ধরা পড়েনি।’

মেঘনা ঘেরা মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার জেলে তোফায়েল হোসেন বললেন, মাছ ধরা বাদ দিয়ে কৃষিকাজ করবেন। কারণ, এ পেশায় আর সংসার চলে না। তাঁর মতে, গত এক মাসে ইলিশ তেমন পাননি। বড় ইলিশ তেমন একটা ধরাও পড়ছে না।

গতকাল বুধবার পোর্ট রোড মৎস্য মোকামে প্রায় ৪০ মণ ইলিশ এসেছে। এর অধিকাংশই ৪ পিসে এক কেজি কিংবা ৩ পিসে এক কেজি আকারের। কেজি সাইজের ইলিশ মোটের ১০ শতাংশের বেশি নয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

আশায় ছিলাম, এখন ইলিশ ধরা পড়বে। কিন্তু কোথায় ইলিশ! ৪ পিসে এক কেজি আকারের ইলিশের চেয়ে বড় ইলিশ গত এক সপ্তাহেও ধরা পড়েনি। ছালাম মিয়া বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীতীরের জেলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ

বরিশাল সদর থানা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল সিকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, টানা দুই মাস ধরে ইলিশের আকাল। টানা অভিযান শেষে শীতের এ সময়টায় বড় ইলিশ ধরা পড়ার কথা, কিন্তু এবার মাছ নেই। কয়েক দিন ধরে ৪০ থেকে ৫০ মণ ইলিশ আসছে, যার অর্ধেকের বেশি ভ্যাল্কা (৫০০ গ্রামের নিচে)। নদীতে মাছ নেই। তাই দামও আকাশচুম্বী। বুধবার এক কেজির ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। মণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এলসি (৯০০ গ্রাম) ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। যার মণপ্রতি দম ১ লাখ টাকার মতো।

নগরের খুচরা বাজার বটতলা, চৌমাথা, বাংলাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ নেই। জাটকা সাইজের কিছু ইলিশ রয়েছে। চৌমাথার মাছ বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, ইলিশ এখন বড় লোকের খাবার। দামের উত্তাপে হাত দেওয়া যায় না। ওই বাজারের বিক্রেতা ইয়াছিন হাওলাদার বলেন, সরকার প্রতিবছর এত আয়োজন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু ইলিশের উৎপাদন কেন বাড়ে না?

নদীতে মাছ নেই, বড় ইলিশ আসবে কোথা থেকে। মূলত ওভার ফিশিংয়ের কারণে বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক কারণেও বড় ইলিশ কম। ড. বিমল চন্দ্র দাস, বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ)

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, নদীতে মাছ নেই, বড় ইলিশ আসবে কোথা থেকে। মূলত ওভার ফিশিংয়ের কারণে বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক কারণেও বড় ইলিশ কম। শীত ও গরমের তীব্রতার কারণেও এই মাছের উৎপাদন কমছে বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত