Ajker Patrika

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি: ভারতের হাসপাতালে জেলের মৃত্যু, মরদেহ পেতে পরিবারের আকুতি 

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২২, ১০: ৫৯
Thumbnail image

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ইউনুস গাজীর (৪৭) বড় মেয়ে চম্পা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোরা পাঁচ ভাইবোন সবাই ছোট ছোট, মোগো খাওনের জোগান দেতেই বাপে ১৫ আগস্ট সাগরে গেছে মাছ ধরতে। পরে ১৯ আগস্ট ঝড়ে তাগো ট্রলার ডুবছে। ট্রলারের সবাই বাড়ি আইছে। আট দিন পর খবর পাইছি, মোর বাপে ভারতের হাসপাতালে ভর্তি আছে। কিন্তু গত শুক্রবার সকালে মারা গেছে। হেইয়ার আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় মোরে কইছে আর যানি মোর ভাইরা কেউ সাগরে মাছ শিকারে না যায়।’

মৃত ইউনুস গাজী পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার বিপিনপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শুক্কুর গাজীর ছেলে। ইউনুস গাজীর মরদেহ ফিরে পেতে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

ইউনুস গাজীর মেয়ে চম্পা গতকাল শনিবার রাত ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে আজকের পত্রিকাকে জানান, মহিপুর থানার বাবুল কোম্পানির মালিকানাধীন এফবি জান্নাত ট্রলারে রহমাতুল্লাহ মাঝির নেতৃত্বে ১৫ আগস্ট বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যান তাঁর বাবা। পরে ১৮ আগস্ট ট্রলারটি ঝড়ের কবলে পড়ে এবং ১৯ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে ট্রলারটি ডুবে যায়। এরপর থেকে তাঁর বাবা ইউনুস গাজী নিখোঁজ হন। বাকি ১৪ মাঝিমাল্লা বাড়িতে ফিরলেও আট দিন কোনো খোঁজ মেলেনি তাঁর বাবার। ট্রলারডুবির চার দিন পর ভাসমান অবস্থায় বঙ্গোপসাগর থেকে তাঁর বাবাকে ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। সেখান থেকে গত বুধবার ভারতের এক নারী চিকিৎসক তাঁর বাবার খোঁজ দেন। পরে সন্ধ্যায় তাঁর বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন তাঁরা। তখন তাঁর বাবা তাঁকে ছোট ভাইবোনদের দিকে খেয়াল রাখতে বলেন এবং কোনো দিন সাগরে মাছ ধরতে না পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ভারতের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে চম্পা জানান, তাঁর বাবা চার দিন সাগরে ভেসে থাকায় শরীরের চামড়া খসে গেছে। দুই দিন আইসিইউতে ভর্তি থাকার পর গত শুক্রবার সকাল ৯টায় মারা গেছেন।

ইউনুস গাজীর স্ত্রী ফাতিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সাগরে বাঁচার জন্য অনেক যুদ্ধ করছে। তার পরও বাঁচাতে পারে নাই। আমি একটু শেষবারের মতো আমার স্বামীরে দেখতে চাই। আমার বাড়ির সামনে কবর দিতে চাই।’

এদিকে ঝড়ের কবলে ভারতে ভেসে যাওয়া জেলেদের উদ্ধার করতে যাওয়া বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাকদ্বীপে ৪৬ জেলে, রায়দিঘি থানায় ১১ এবং কোস্টাল পুলিশ স্টেশনে ১৭ জন বাংলাদেশি জেলে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কাকদ্বীপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইউনুস গাজী মারা গেছেন। এরই মধ্যে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চাইছি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনতে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চাইছি।’

৬ নম্বর মহিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ ফজলু গাজী জানান, ইউনুস গাজীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভারতে পাঠানো হয়েছে। ইউনুস গাজীই তাঁর পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। ছোট ছোট পাঁচটি সন্তান রয়েছে তাঁর। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে তাদের পথে বসতে হবে। তাই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই পরিবার সম্পর্কে অবহিত করবেন বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত