Ajker Patrika

ববিতে একের পর এক অপমৃত্যুর পরও নেই পদক্ষেপ, বাড়ছে হতাশা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
ববিতে একের পর এক অপমৃত্যুর পরও নেই পদক্ষেপ, বাড়ছে হতাশা 

১১ বছর আগে সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রী সাওদাকে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। দেশব্যাপী ওই ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর বিদায় নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন উপাচার্য। অথচ এ ধরনের খুন খারাবি কিংবা অপমৃত্যু বন্ধ হয়নি আজও। যে কারণে ঝরে গেছে একাধিক শিক্ষার্থীর প্রাণ। পঙ্গু হয়েছে অনেকে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক যুগেও নির্মম এসব মৃত্যু রোধে পদক্ষেপ নেয়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা ক্রমশ বাড়ছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ববি শাখার আহ্বায়ক সিবাত আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বৃষ্টি রানি সরকারের আত্মহত্যার ঘটনায় হতাশা জানিয়ে বলেছেন, প্রাণের এই অপচয় সুহৃদ-স্বজন এবং পরিবারের জন্য প্রচণ্ড যন্ত্রণার। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মনোচিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসলেও প্রশাসন তা আমলে নেয়নি। 

জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে ববি ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেসে ববি ছাত্রী বৃষ্টি রানি সরকারের গলায় ফাঁস দেওয়া লাশ উদ্ধার হয়। বৃষ্টির প্রেমিক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তন্ময় অসুস্থ হয়ে শেবাচিম হাসপাতালের মানসিক ওয়ার্ডে ভর্তি। পুলিশ জানিয়েছে, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ছাত্রী বৃষ্টি। 

একইভাবে গত বছরের ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আনন্দবাজার এলাকায় মোল্লা ছাত্রী নিবাস থেকে শাহরিন রিভানা নামক বোটানি বিভাগের এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

 ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের সামনে জয় (ছদ্মনাম) নামে এক ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ২০২০ সালের ১ আগস্ট সুপ্রিয়া দাস নামক এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। 

 ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস সংলগ্ন সাওদা নামক এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সহপাঠী রাসেল মাতুব্বর। গত দুই বছরে সহপাঠীদের হামলায় পঙ্গু হয়ে গেছেন ববি ছাত্র মুকুল ও আয়াতুল্লাহ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, গত ৬ বছর এ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করতে গিয়ে দেখেছেন শিক্ষার্থীরা হত্যা কিংবা অপমৃত্যুর শিকার হলেও নিয়ন্ত্রণে কিছুই করেনি কর্তৃপক্ষ। যেকারণে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। এ ক্ষেত্রে দরকার কাজের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনের কঠোরতা। অথচ আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং এবং মনিটরিং নেই। শিক্ষকেরা হলে থাকেন না। প্রতি বিভাগে ছাত্র উপদেষ্টা থাকলেও তাঁরা সচেতনতায় কিছুই করেন না। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তারেক মাহমুদ আবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় কষ্ট শেয়ার করতে না পারা শিক্ষার্থীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। ঘটছে খুন-খারাবির মতো অপরাধও। 

ড. আবির বলেন, আমি ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক থাকাকালে তৎকালীন উপাচার্য আরেফিন মাতিনকে একজন মনস্তাত্ত্বিক নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তখন উপাচার্য ক্ষুব্ধ হয়ে ওই পদ থেকে গত বছরের ২১ আগস্ট আমাকে অব্যাহতি দেন। আমি মনে করি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে দেয়াল তৈরি করা যাবে না। আগামী ২৩ জানুয়ারির সিন্ডিকেট সভায় নতুন উপাচার্য শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু সংবাদ দিতে পারেন। 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক সুজন চন্দ্র পাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁর দপ্তর উপাচার্যকে মনস্তাত্ত্বিক নিয়োগ দিতে বলেছেন। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনারও করেছেন। বিভাগগুলোতে একজন ছাত্র উপদেষ্টা কতজন শিক্ষার্থীকে কাউন্সেলিং করিয়েছেন তা মনিটরিং করবেন। ব্যবস্থা না থাকায় হলগুলোতে আবাসিক শিক্ষকেরা থাকছেন না বলে তিনি জানান। 

এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনায় কাউন্সেলিং সেক্টর গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে ছাত্র উপদেষ্টা এবং আবাসিক শিক্ষকদের তাগিদ দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত