Ajker Patrika

বাউফলে নিষিদ্ধ জালে কমছে দেশি মাছ

বাউফল (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, সুতিজাল, বেহুন্দি, ভেসাল এবং চায়না রিং জালের অবাধ ব্যবহারে দেশীয় মাছগুলো দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, সুতিজাল, বেহুন্দি, ভেসাল এবং চায়না রিং জালের অবাধ ব্যবহারে দেশীয় মাছগুলো দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘মাছে-ভাতে বাঙালি’—শতবর্ষ পুরোনো এই প্রবাদ শুধু বাঙালির খাদ্যাভ্যাস নয়, বরং তার সংস্কৃতি ও জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে সেই ঐতিহ্য এখন চরম হুমকির মুখে। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল ও বাঁওড়ের দেশীয় মাছগুলো দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার কালাইয়া, কাছিপাড়া, কালিশুরি, নুরাইনপুর, কনকদিয়া, বগাসহ বিভিন্ন বাজারে দেশীয় মাছের সংকট এখন প্রকট। এই সংকটের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, সুতিজাল, বেহুন্দি, ভেসাল এবং চায়না রিং জালের অবাধ ব্যবহার। বর্ষা শুরু হতেই এসব জালের মাধ্যমে ডিম ছাড়ার আগেই পোনা মাছ নির্বিচারে ধরা হচ্ছে, ফলে প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র ভয়াবহভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপজেলার কালাইয়া, কালিশুরি, বগা বন্দরসহ বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে এসব নিষিদ্ধ জাল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। এতে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নিয়ে।

একসময়ের পরিচিত দেশীয় মাছ যেমন—বোয়াল, গজার, শোল, মাগুর, শিং, কই, সরপুঁটি, রুই, কাতল, মৃগেল, পাবদা, আইড়, বাইম, খলসে, রিঠা, রঙিন বেতাগা, বাঁশপাতা, রয়না ও কালিবাউস আজ বিলুপ্তপ্রায়। এর মধ্যে রঙিন বেতাগা, রিঠা, পাবদা, বোয়াল, আইড়, বাঁশপাতা ও রয়না—এই জাতের মাছ তো একেবারে চোখেই পড়ে না।

বর্ষায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসাধু ব্যক্তি ও চক্রগুলো শুধু নিষিদ্ধ জালই নয়, বৈদ্যুতিক শক ব্যবহার করেও মাছ ধরছে। শুষ্ক মৌসুমে একাধিকবার পুকুর সেচে মাছ আহরণ এবং সরকারি খাল-বিল ব্যক্তিগতভাবে দখলের ফলে শুধু মাছ নয়, জলজ সাপ, ব্যাঙ, শামুক ও নানা জলজ প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।

অন্যদিকে, কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যা জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান ঝান্টা বলেন, ‘চায়না রিং জাল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এটি দেশের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করছে। আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং বিভিন্ন সময়ে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করছি। তবে জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ও স্থানীয়দের সহযোগিতা।’

এ বিষয়ে পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ‘সেইভ দ্য বার্ড অ্যান্ড-বি’র পরিচালক এম এ বাসার বলেন, ‘এই নিষিদ্ধ চায়না রিংসহ অন্যান্য জালে বড়-ছোট রেণুসহ সবকিছু আটকে যায়, ফলে দেশীয় প্রজাতির হরেক রকম মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু অভিযান চালিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, সচেতন জনগণের অংশগ্রহণ এবং আইনের বাস্তবায়ন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা-ভাঙচুর

জয়া আহসানকে নিয়ে খেপেছেন তৃণমূল নেত্রী, টালিউডে বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধের দাবি

এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কুৎসা, বরখাস্ত নিরাপত্তাপ্রহরী

অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে কঠোর মালয়েশিয়া, ফেরত পাঠাচ্ছে বিমানবন্দর থেকেই

এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত