Ajker Patrika

ক্লিনিকে মৃত ঘোষণা, কবর দেওয়ার আগে কেঁদে উঠল নবজাতক

প্রতিনিধি, ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর)
Thumbnail image

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জন্ম হওয়ার কিছুক্ষণ পর নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকেরা। এরপর শিশুটিকে কবর দিতে কার্টনে করে নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। কার্টুনে থাকার দুই ঘণ্টা পরে নবজাতক শিশুকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কবরস্থানে নেওয়ার আগে স্থানীয় এক আলেম মৃত নবজাতককে দেখার জন্য বাঁধা কার্টনটি খোলেন। আর তখনই কেঁদে ওঠে নবজাতক। গতকাল বৃহস্পতিবার ভান্ডারিয়া উপজেলার পার্শ্বের কানুদাসকাঠি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নবজাতকটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়েছে।

শিশুটির বাবা মো. ফোরকান মৃধা ভান্ডারিয়া পৌর শহরের একটি ভাড়াটিয়া দোকানে ফ্রিজ মেকারের কাজ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ভান্ডারিয়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাসকাঠি গ্রামে।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে মো. ফোরকান মৃধা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর স্ত্রী বিলকিসের পেটে ব্যথা শুরু হলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানের সিনিয়র নার্স ফাহিমার কাছে নিয়ে গেলে তিনি স্ত্রীর অবস্থা জানতে একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ডাক্তারকে দেখাতে বলে। স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন লাবণ্য ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গেলে স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হয় এবং সেখানেই নরমালে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তখন ওই ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা আমাদের শিশুকে মৃত ঘোষণা করে এবং স্ত্রী বিলকিসকে ওষুধপত্র লিখে দেয়।

মো. ফোরকান মৃধা আরও জানান, নার্সদের সহযোগিতায় নবজাতকটিকে একটি কাগজের কার্টনে ভরে কবর দেওয়ার জন্য বাড়ি নিয়ে যাই। প্রায় দু ঘণ্টা পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কবরস্থানে নেওয়ার আগে স্থানীয় এক আলেম (হুজুর) মৃত নবজাতককে দেখার জন্য কার্টনটি খোলেন। আর তখনই কেঁদে ওঠে শিশুটি। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে প্রথমে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। মা ও শিশু উভয়ই এখন সুস্থ। আমার ছেলেকে মহান আল্লাহ রক্ষা করেছে, সকলের কাছে দোয়া চাই।

প্রত্যক্ষদর্শী নাসিমা বেগম বলেন, জন্মের কিছুক্ষণ পরে ওই ক্লিনিকের নার্স ও কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে একটি কার্টনে ভরে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে লাবণ্য ক্লিনিকের ম্যানেজার ফিরোজ বলেন, রোগী আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে এসে হঠাৎ সন্তান প্রসব করে। নার্সরা শিশুটি জন্মের পরে রক্তের মাখামাখি অবস্থায় তার পালস ও হার্টবিট চেষ্টা করেও পায়নি। নবজাতকের মা আমাদের ভর্তি রোগী নয়।

এ বিষয়ে লাবণ্য ক্লিনিকের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট নন্দিতা হাওলাদার নবজাতক মারা যাওয়ার ঘোষণা অস্বীকার করে জানান, রোগী আমাদের এখানে ভর্তি ছিল না, আলট্রাসনো করতে আসলে ডেলিভারি হয়ে যায় ডেলিভারির পরে বাচ্চার পালস না পাওয়ায় আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দিই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, শিশুটি ৭ মাসে জন্ম হয়েছে এবং শ্বাসকষ্ট দেখে মনে হয়েছে ওকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা গেলে বেঁচে যেতে পারে। তাই বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত