Ajker Patrika

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন

জনপ্রতিনিধি না থাকায় দুর্ভোগ, থমকে সেবা

  • প্রশাসকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাইফ উদ্দিন নিয়মিত আসেন না কার্যালয়ে।
  • ৮ মাস ধরে পরিষ্কার হয় না সিটি করপোরেশনের ড্রেন।
দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা 
জনপ্রতিনিধি না থাকায় দুর্ভোগ, থমকে সেবা

সরকার পতনের পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়রকে অপসারণ ও কাউন্সিলদের বরখাস্ত করা হয়। এরপর জরুরি সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তবে তাঁদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের পর এই বাড়তি দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নাগরিক সনদ, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, রাস্তা মেরামত, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিয়ন্ত্রণসহ জরুরি সেবা কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করছেন তাঁরা। নগরবাসীর অভিযোগ, তাঁরা ঠিকঠাক সেবা পাচ্ছেন না। ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেক জনপ্রতিনিধি গা ঢাকা দেন। এরপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের সব কাউন্সিলরকে অপসারণ করা হয়। পরে সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা কার্যক্রমের দায়িত্ব দেওয়া হয় কুসিকের ২৭ কর্মকর্তাকে। তবে কাজ আগাচ্ছে না।

কুসিকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুমিল্লার মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদকে। তিনি নিয়মিত আসেন না। কয়েক ঘণ্টার জন্য সপ্তাহে একদিন এলেও জরুরি কাজ ছাড়া কোনো কাজে হাত দিতে সময় পান না। নাগরিকেরাও তাঁর দেখা পান না। ভুক্তভোগী কয়েকজন এবং করপোরেশন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সিটি করপোরেশনের জরুরি কোনো কাজ থাকলে কর্মকর্তারা বার্ডে যান। নিজ অফিসে কর্মকর্তারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করে যে সময় সিটি করপোরেশনের জন্য দিচ্ছেন, তা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

এর বেশ কিছু অভিযোগের কথা স্বীকারও করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। কুমিল্লা সিটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কুসিকের ফুড অ্যান্ড স্যানিটারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘করপোরেশনের লোকবল সংকটের কারণে আমাদের একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এর ওপর ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধনসহ নাগরিকদের মূল্যবান কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে হচ্ছে অথচ আমরা তাঁদের চিনি না। সব মিলিয়ে আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে আছি।’

বেড়েছে দুর্ভোগ, জলজটের শঙ্কা: কুমিল্লা শহরে যানজট আগেও ছিল, তবে এখন তা আরও বেড়েছে। প্রতিটি সড়কের ফুটপাত দখল, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা, যত্রতত্র পার্কিং, অবৈধ স্ট্যান্ডসহ নানা অনিয়মে যানজটের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। টমছমব্রিজ, রানীর বাজার, রাজগঞ্জ, চকবাজার এলাকা, পুলিশ লাইন, শাসনগাছা, বাদশা মিয়ার বাজার এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না। সিটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জমিস উদ্দিন বলেন, সড়ক ও ফুটপাত ভাসমান বিক্রেতাদের দখলে। হাঁটাচলা করাই দায়।

এদিকে শহরের ড্রেনগুলোয় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নেই ৮ মাস ধরে। পলিথিন জমে ড্রেনগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে। এসব ড্রেন পরিষ্কারেও নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির নেতা মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘বর্ষার আগে আমি রুটিন করে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ড্রেনের পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে খাল, নালা পরিষ্কার করতাম। বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত রাখতে আমাদের ভালো কাজগুলো অনুসরণ করুক। পরিকল্পনা করে কাজ করুক।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি। জনপ্রতিনিধি থাকলে কাজে আরও গতি আসবে। আমার আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত