রাজীব নূর
আমরা যারা গত শতকের নব্বইয়ের দশকে লেখালেখি শুরু করেছিলাম, তাদের মধ্যে এমন কাউকে পাওয়া কঠিন হবে, যে অবলীলায় বলে দিতে পারবে না আবুল হাসানের কবিতার পঙ্ক্তি। ‘ঝিনুক নীরবে সহো/ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও/ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও!’ —এ রকম উজ্জ্বল পঙ্ক্তি মুখে মুখে ফিরত। তো, আমাদেরই নব্বইয়ের দশকের এক কবি মোশতাক আহমদ আবুল হাসানকে নিয়ে ঝিনুক নীরবে সহো নামে একটা ডকুফিকশন লিখে মুক্তা ফলিয়েছেন।
মোশতাক সব সময় আত্মমগ্ন মানুষ। তাঁর নিমগ্নতার দেয়াল ভাঙতে পারলে একান্ত আপনজন হয়ে যান। এখানে আমার আপনজন মোশতাক আহমদ আলোচ্য নন, আলোচনার বিষয় তাঁর লেখা ডকুফিকশন ঝিনুক নীরবে সহো। তবু এই ব্যক্তিগত কথনের অবতারণা এই জন্য যে সবুজের কাল থেকেই আবুল হাসানের সঙ্গে প্রেম তাঁর।
প্রকৃতপক্ষে বেড়ে ওঠার ওই সময়ে আমাদের পুরো প্রজন্মটাই আবুল হাসানে মুগ্ধ ছিলাম। মোশতাক আহমদের আগ্রহের জায়গা আবুল হাসান, এটা বুঝতে পেরে সবুজ আড্ডার দিনগুলোতে এ নিয়ে কথা বলতাম তাঁর সঙ্গে। হয়তো তখন থেকেই অবচেতনে মোশতাকের মাথায় ঝিনুক নীরবে সহো তৈরি হতে শুরু করেছিল। লিখেছেন অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে। বইটা বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সংগ্রহ করে আনলাম। মনে আছে, পড়তে শুরু করে শিহরিত হচ্ছিলাম।
ডকুফিকশনের শুরুটা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বরের দিনটিতে। ওই ভোরে আবুল হাসান মারা গিয়েছিলেন মাত্র ২৮ বছর বয়সে। হাসান হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন, দুটো ভাল্ব-ই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখনকার দিনে বাংলাদেশে এই অসুখের চিকিৎসা ছিল না বলে তাঁকে পূর্ব জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল সরকারি উদ্যোগে, ১৯৭৪ সালে। কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৪ নভেম্বর পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বুকের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও তিনি লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। তাঁর তিনটি কবিতার বই ‘রাজা যায় রাজা আসে’ (১৯৭২); ‘যে তুমি হরণ করো’ (১৯৭৪) ও ‘পৃথক পালঙ্ক’ (১৯৭৫) এবং কিছু অগ্রন্থিত কবিতা মিলিয়ে লিখেছেন মাত্র শ-দেড়েক কবিতা।
‘বিচিত্রা’ অফিসে এর সম্পাদক শাহাদত চৌধুরীর সঙ্গে কবি ইকবাল হাসানের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মোশতাকের ডকুফিকশন। তারপর একজন আবুল হাসানের সঙ্গে তিনি তুলে এনেছেন একটা বড় সময়কে, যেদিন হাসান মারা যান, সেদিন যে ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে অপহরণের চেষ্টা হয়েছিল, সেটি দারুণ মুনশিয়ানায় বলে দিয়েছেন শোকঘন একটি পরিস্থিতির মধ্যেই, যখন সুরাইয়া এলেন ‘স্তব্ধ চাঁপার তরু’ হয়ে, যখন হাসানের বন্ধু নির্মলেন্দু গুণ ও মহাদেব সাহা স্তম্ভিত। ডকু-ফিকশনের বাংলা যদি জীবনালেখ্য করা হয়, তাহলে মোশতাকের বইটিকে যথার্থ অর্থে জীবন এবং আলেখ্য হয়েছে বলে স্বীকার করতে হবে, তিনি হাসানের জীবনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে এতটাই ছুটেছেন যে জার্মানির বার্লিনের হাসপাতালে চিত্রশিল্পী রাইনহার্ট হ্যাভিকের সঙ্গে আবুল হাসানের সখ্যের গল্পটিও তুলে এনেছেন। সব মিলিয়ে উপভোগ্য এক বই ঝিনুক নীরবে সহো।
ঝিনুক নীরবে সহো
মোশতাক আহমেদ
প্রকাশক
পেন্ডুলাম পাবলিশার্স
প্রকাশকাল
জুলাই ২০২১
দাম
৬৪০ টাকা
আমরা যারা গত শতকের নব্বইয়ের দশকে লেখালেখি শুরু করেছিলাম, তাদের মধ্যে এমন কাউকে পাওয়া কঠিন হবে, যে অবলীলায় বলে দিতে পারবে না আবুল হাসানের কবিতার পঙ্ক্তি। ‘ঝিনুক নীরবে সহো/ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও/ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও!’ —এ রকম উজ্জ্বল পঙ্ক্তি মুখে মুখে ফিরত। তো, আমাদেরই নব্বইয়ের দশকের এক কবি মোশতাক আহমদ আবুল হাসানকে নিয়ে ঝিনুক নীরবে সহো নামে একটা ডকুফিকশন লিখে মুক্তা ফলিয়েছেন।
মোশতাক সব সময় আত্মমগ্ন মানুষ। তাঁর নিমগ্নতার দেয়াল ভাঙতে পারলে একান্ত আপনজন হয়ে যান। এখানে আমার আপনজন মোশতাক আহমদ আলোচ্য নন, আলোচনার বিষয় তাঁর লেখা ডকুফিকশন ঝিনুক নীরবে সহো। তবু এই ব্যক্তিগত কথনের অবতারণা এই জন্য যে সবুজের কাল থেকেই আবুল হাসানের সঙ্গে প্রেম তাঁর।
প্রকৃতপক্ষে বেড়ে ওঠার ওই সময়ে আমাদের পুরো প্রজন্মটাই আবুল হাসানে মুগ্ধ ছিলাম। মোশতাক আহমদের আগ্রহের জায়গা আবুল হাসান, এটা বুঝতে পেরে সবুজ আড্ডার দিনগুলোতে এ নিয়ে কথা বলতাম তাঁর সঙ্গে। হয়তো তখন থেকেই অবচেতনে মোশতাকের মাথায় ঝিনুক নীরবে সহো তৈরি হতে শুরু করেছিল। লিখেছেন অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে। বইটা বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সংগ্রহ করে আনলাম। মনে আছে, পড়তে শুরু করে শিহরিত হচ্ছিলাম।
ডকুফিকশনের শুরুটা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বরের দিনটিতে। ওই ভোরে আবুল হাসান মারা গিয়েছিলেন মাত্র ২৮ বছর বয়সে। হাসান হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন, দুটো ভাল্ব-ই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখনকার দিনে বাংলাদেশে এই অসুখের চিকিৎসা ছিল না বলে তাঁকে পূর্ব জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল সরকারি উদ্যোগে, ১৯৭৪ সালে। কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৪ নভেম্বর পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বুকের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও তিনি লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। তাঁর তিনটি কবিতার বই ‘রাজা যায় রাজা আসে’ (১৯৭২); ‘যে তুমি হরণ করো’ (১৯৭৪) ও ‘পৃথক পালঙ্ক’ (১৯৭৫) এবং কিছু অগ্রন্থিত কবিতা মিলিয়ে লিখেছেন মাত্র শ-দেড়েক কবিতা।
‘বিচিত্রা’ অফিসে এর সম্পাদক শাহাদত চৌধুরীর সঙ্গে কবি ইকবাল হাসানের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মোশতাকের ডকুফিকশন। তারপর একজন আবুল হাসানের সঙ্গে তিনি তুলে এনেছেন একটা বড় সময়কে, যেদিন হাসান মারা যান, সেদিন যে ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে অপহরণের চেষ্টা হয়েছিল, সেটি দারুণ মুনশিয়ানায় বলে দিয়েছেন শোকঘন একটি পরিস্থিতির মধ্যেই, যখন সুরাইয়া এলেন ‘স্তব্ধ চাঁপার তরু’ হয়ে, যখন হাসানের বন্ধু নির্মলেন্দু গুণ ও মহাদেব সাহা স্তম্ভিত। ডকু-ফিকশনের বাংলা যদি জীবনালেখ্য করা হয়, তাহলে মোশতাকের বইটিকে যথার্থ অর্থে জীবন এবং আলেখ্য হয়েছে বলে স্বীকার করতে হবে, তিনি হাসানের জীবনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে এতটাই ছুটেছেন যে জার্মানির বার্লিনের হাসপাতালে চিত্রশিল্পী রাইনহার্ট হ্যাভিকের সঙ্গে আবুল হাসানের সখ্যের গল্পটিও তুলে এনেছেন। সব মিলিয়ে উপভোগ্য এক বই ঝিনুক নীরবে সহো।
ঝিনুক নীরবে সহো
মোশতাক আহমেদ
প্রকাশক
পেন্ডুলাম পাবলিশার্স
প্রকাশকাল
জুলাই ২০২১
দাম
৬৪০ টাকা
নোবেলজয়ী পেরুভিয়ান সাহিত্যিক মারিও বার্গাস যোসা শুধু কথাসাহিত্যের জন্যই নন, মানবিকতা ও বিশ্ব রাজনীতির প্রতি গভীর মনোযোগের জন্যও পরিচিত। বাংলাদেশে এসিড হামলার শিকার নারীদের নিয়ে তাঁর লেখা হৃদয়বিদারক প্রবন্ধ ‘Weaker sex’ প্রমাণ করে, কীভাবে যোসার কলম ছুঁয়ে গিয়েছিল বাংলার পীড়িত নারীদের কান্না ও সংগ্রাম।
৫ দিন আগেনোবেলজয়ী পেরুভিয়ান সাহিত্যিক মারিও বার্গাস যোসা মারা গেছেন। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার পেরুর রাজধানী লিমায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তাঁর ছেলে আলভারো বার্গাস যোসা মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগেমৃত্তিকাবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলমগীর হাইয়ের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, ৫ নম্বর গ্যালারিতে চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়।
৬ দিন আগেজর্জ দুহামেল ১৮৮৪ সালের ৩০ জুন প্যারিসের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার আর্থিকভাবে খুব একটা সচ্ছল ছিল না। তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। সব মিলিয়ে তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি খুব একটা সুখকর নয়; যা তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস লে নতেয়্যাখ দু হ্যাভখ (Le Notaire du Havre) এ ফুটে ওঠে।
৬ দিন আগে