আরিফ আবেদ আদিত্য

ম্যানচেস্টার থেকে খুব সকালে রওনা দিই লিভারপুলের উদ্দেশে। লিভারপুল এই শহর থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রাপথ। ভ্রমণে সঙ্গীসাথি থাকলে একধরনের, আবার কেউ সঙ্গে না থাকলে আরেক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। একা ভ্রমণে কোনো তাড়া থাকে না, যেকোনো জিনিস গভীর অভিনিবেশসহকারে অনুভব করা যায়। এবারের একা যাত্রায় সুদূর কেন্ট থেকে ম্যানচেস্টারে এসে এক ঘনিষ্ঠ ভাইয়ের বাসায় উঠেছি। এখানে রাত্রি যাপন করে সকাল সকাল রওনা দিই বিটলসের আঁতুড়ঘর লিভারপুল শহরে! সেখানে বাস ও ট্রেন দুইভাবেই যাওয়া যায়—ইংল্যান্ডে তাৎক্ষণিক ট্রেনের ভাড়া বিমানের মতো অনেক বেশি পড়ে, তাই বাসই সহজসাধ্য সবার জন্য।
যখন রওনা দিই, ম্যানচেস্টারের জানুয়ারির সকাল তখন কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন। ইউকের যতই উত্তরের দিকে যাওয়া যায়, আবহাওয়া ততই ধূসর রং ধারণ করে। আমি যেখানে থাকি, লন্ডনের পূর্ব দিকে ক্যান্টাবরি শহরে, সেটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ও সাগরঘেরা হওয়ায় সূর্যের প্রচুর আলো পাওয়া যায়। অন্যদিকে ম্যানচেস্টার বা আরও উত্তরে স্কটল্যান্ডে গেলে এই সূর্যের আলোর স্বল্পতা দেখা যায়, যার ফলে এদিকে শীত বেশি অনুভূত হয়। ভোরের যাত্রায় কয়েক পরতের শীত নিবারক পোশাক পরে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হাজির হই লিভারপুলে। যাত্রাপথে ধরা পড়ে ইংল্যান্ডের অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ—মহাসড়কের দুই ধারে সবুজের অবারিত প্রান্তর—মসৃণ পিচঢালাই পথে স্থানে স্থানে চোখে পড়ে ছোট ছোট গ্রাম আর খামারবাড়ি। পুরো ইংল্যান্ডে কান্ট্রিসাইড বা গ্রামগুলো যেন একইভাবে তৈরি। প্রত্যকের দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ির আঙিনা ফুলে ফুলে সাজানো। নিরিবিলি গোছানো। একটা কি দুটো ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ির সামনে পার্ক করা। কোনো কোলাহল নেই, কোনো তাড়াও নেই—জীবন এখানে অনেক শান্ত-নির্মল।
সকাল ৯টায় পৌঁছে যাই লিভারপুলে। আগের রাতেই গুগল করে কী কী দেখব, একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করে রেখেছিলাম। লিভারপুলে বাস থেকে নেমেই তাই গুগল ম্যাপের শরণাপন্ন হই। ম্যাপ ধরে প্রথমেই চলে যাই লিভারপুলের বিখ্যাত ম্যাজি নদীর তীরে। ম্যাজি (Mersey) নদীকে বাংলায় অনেকে মার্সেই নামে লেখে। যদিও এর সঠিক উচ্চারণ হবে ম্যাজি, স্থানীয়রা ‘স’ কে ‘জ’-এর মতো করে। এই নদীর নামেই ‘ম্যাজি বিট’ (Mersey Beat)। গত শতকের ষাটের দশকে পৃথিবী কাঁপানো এক সংগীতের ধারার জন্ম হয়েছিল। ম্যাজি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল তৎকালীন তুঙ্গস্পর্শী ব্যান্ডদল ‘বিটলস’। এখানে এক ছোট অপরিসর পানশালায় ছিল এর আঁতুড়ঘর। লিভারপুলে আগমনের প্রধান কারণ এই বিটলসের আঁতুড়ঘর দর্শন ও এর সদস্যদের স্মৃতিধন্য শহরের অলিগলিতে বিচরণ।
গবেষকদের মতে, ম্যাজি নদীর তীরে ১৯৫৮-৬৪ সালের মধ্যে প্রায় ৫০০ ব্যান্ড দলের জন্ম হয়েছিল; এর মধ্যে ৩৫০টি গ্রুপ নিয়মিত কনসার্ট, বার ও পাবে বাজাত। আরও একটি বিস্ময়কর ঘটনা হলো, পৃথিবীর ইতিহাসে সংগীতবিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ম্যাজি বিট’ (Mersey Beat)-এর জন্মও এই শহরেই, ১৯৬১ সালে। এই ‘মেজি বিট’-এর একেকটি সংখ্যা তখন ৭৫ হাজার কপি পর্যন্ত বিক্রি হতো। এর সম্পাদক ছিলেন বিটলসের সদস্য জন লেলনের বন্ধু-সহপাঠী বিল হ্যারি। তাঁরা একই কলেজে পড়তেন। ১৯৬২ সালে মেজি বিট পত্রিকার আয়োজনে পাঠকদের ভোটে বিটলস সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল, যা বিটলসের উত্থানের প্রথম সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। এর পর থেকেই মূলত এদের স্থানীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু।
বিটলস নিয়ে আসলে বেশি কিছু বলার নেই। এঁদের গান ও ব্যান্ড দলের সদস্যদের প্রভাব গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এমনই ছিল যে ‘বিটলস ম্যানিয়া’য় আক্রান্ত হয়েছিল কয়েক প্রজন্ম। এর রেশ এখনো শেষ হয়নি। অভাবনীয় ব্যাপার হলো, এই শহরে জন্ম নেওয়া একদল কিশোর মিলে গঠন করেছিল বিটলস।
ম্যাজি নদীর তীরে বিটলসের চার কিংবদন্তি সদস্য জন লেলন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার ছাড়াও জন্ম হয়েছিল গ্যারি মার্সডেনের, যাঁর ‘ফেরি, ক্রস দ্য ম্যাজি’ গান আটলান্টিকের দুই পাড়ে এই নদীর খ্যাতি ছড়িয়ে দিয়েছিল। লিভারপুলের আরও অন্যান্য বিখ্যাত পপ সংগীতশিল্পীর জন্ম। যেমন: বিটলসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ররি স্টর্ম অ্যান্ড দ্য হ্যারিকেন’ ব্যান্ড দলের প্রধান ররি স্টর্মের। উল্লেখ্য, বিটলসের যোগ দেওয়ার আগে রিঙ্গো স্টার এই ব্যান্ড দলে ড্রামার হিসেবে ছিলেন। ‘ররি স্টর্ম অ্যান্ড দ্য হ্যারিকেন’ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ পর্বে বিটলসের চেয়ে প্রভাবশালী ছিল লিভারপুলে—দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ব্যান্ড দলের প্রধান ররি স্টর্ম (১৯৩৮-১৯৭২) মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারা যান। যাই হোক, ম্যাজি বিটের আরেক সফল ব্যান্ড দল ছিল গ্যারি মার্সডেনের ‘গ্যারি অ্যান্ড দ্য পেসমেকার্স’। লিভারপুলে বিটলসের পর দ্বিতীয় প্রভাবশালী এই ব্যান্ড দল।
বিটলসের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবের সমসাময়িককালে লিভারপুল শহরেরই আরেকজন সংগীতশিল্পী ইংলিশ রক এন রোল, পপ সংগীতের জগতে আধিপত্য দেখিয়েছিলেন—তিনি হলেন বিল্লি ফুরি (১৯৪০-১৯৮৩)। তাঁর ভাস্কর্য ম্যাজি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। বিল্লি ফুরি একক ব্যানারেই গান করেছেন বেশি। তাঁর সময়ে ইউকে চার্টে দুই ও তিন নম্বরে ছিলেন ৩৩২ সপ্তাহ। পপ ঘরানার মধ্যে ক্ল্যাসিক মিশ্রণে তিনি স্বতন্ত্র এক ধারা তৈরি করেছিলেন। গানের পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করেছেন। তাঁর বিখ্যাত গান ‘হাফওয়ে টু প্যারাডাইস’। বিটলসের চার সদস্য জন লেলন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার তাঁর সঙ্গে একসময় একসঙ্গে বাজিয়েছেন। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তাঁর সংগীতজীবনের সমাপ্তি হয়। ম্যাজি নদীর তীরে বেড়ে ওঠা এমন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীদের জন্ম হওয়ায় হয়তো লিভারপুলকে বিশ্বসংগীতের রাজধানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
আমাকে লিভারপুল কেবল বিটলসের গানের আকর্ষণে তাঁদের আঁতুড়ঘর পরিদর্শন নয়, পাশাপাশি এর একজন সদস্য জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে নিউইয়র্কে কনসার্ট করেছিলেন—তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোও ছিল অন্যতম কারণ।
বিটলসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘দ্য ক্যাভার্ন স্ন্যাক বার’ নামে ছোট্ট এক টংঘর থেকে। লিভারপুল শিল্প এলাকা হওয়ায় ম্যাজি নদীর তীরে ছোট-বড় অনেক খাবারের দোকান ছিল। আমাদের দেশের চায়ের দোকানের মতো ছোট ছোট টংঘর বা স্বল্প আয়ের মানুষের খাবারের হোটেলের মতো কিছু রেস্তোরাঁও ছিল। সেই সব দোকানের ভেতরে বা এক পাশে লাঞ্চ বা ডিনার করতে আসা ক্রেতাদের বিনোদনের জন্য দোকানিরা এলাকার উঠতি ব্যান্ড দলকে সুযোগ দিত গান পরিবেশনের জন্য। লিভারপুল বন্দরনগরী হওয়ায় এখানে আসা জাহাজের শ্রমিক এবং বন্দরের কাজে জড়িত নানা পেশার অসংখ্য মানুষের বিনোদনের প্রধান আখড়া হয়ে ওঠে এই খাবারের দোকানগুলো। আর শ্রোতাদের তুমুল চাহিদায় দিনে দিনে ম্যাজি বিটের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী—জন্ম নেয় রক সংগীতের কিংবদন্তি সব কৃতি ব্যান্ড শিল্পীর।
লিভারপুলের ১৫-১৬ বছরের চার কিশোর—যারা স্কুলের গণ্ডিও তখন পেরোয়নি—একসঙ্গে গান করার জন্য ‘বিটলস’ নামে ব্যান্ড দল গঠন করে ‘দ্য ক্যাভার্ন’ ক্লাবের ছোট এক অপরিসর জায়গায় বাজাতে শুরু করে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্বতন্ত্র সাংগীতিক স্বরের জন্য আশপাশে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্লাবে ৩০০ বারের মতো তারা পারফর্ম করে আশপাশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে ফেলে। তারা যখন গান গাইত, তখন এই অপরিসর ঘিঞ্জি পানশালায় দুপুরে লাঞ্চের সময় জায়গার সংকুলান হতো না।
তিন গিটারিস্ট জন লেলন, পল ম্যাকর্টনি, জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে পরে রিংগো স্টার ড্রামার হিসেবে যোগ দেন এবং দৃষ্টি কাড়েন সংগীত প্রযোজক-কম্পোজার জর্জ মার্টিন, যাঁকে ‘পঞ্চম বিটলস’ বলা হতো। এই পাঁচজন মিলে পাশ্চাত্য রক এন রোল সংগীত দুনিয়ায় আলোড়ন তোলেন। বিটলসের চার কিংবদন্তি সদস্য, যাঁদের একত্রে ‘ফেবুলাস ফোরসাম’ বলে অভিহিত করা হতো, পরে তাঁরা সংক্ষেপে ‘দ্য ফেব ফোর’ নামে খ্যাতির চূড়ায় আরোহণ করেন।
যাই হোক, লিভারপুলের ম্যাজি নদীর তীরে চমৎকার আকর্ষণীয় এক জায়গা রয়েল আলবার্ট ডক। এর এক পাশেই অবস্থিত পৃথিবীর বিখ্যাত ‘দ্য বিটলস স্টোরি’ জাদুঘর। ম্যাজি নদীর তীর কংক্রিটে বাঁধানো সুন্দর হাঁটার রাস্তা। কয়েক মাইল এই রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া সম্ভব। নদীর তীরে বেশ বাতাসের দাপট ছিল। কয়েক পরতের শীতের পোশাকেও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছিল না বিধায় আধা কিলোমিটারের মতো হাঁটার পর হাতের বাঁয়ে আলবার্ট ডকের দিকে চলে আসি। একটু এগোতেই পেয়ে যাই কাঙ্ক্ষিত সেই ‘দ্য বিটলস স্টোরি’ জাদুঘরের প্রবেশদ্বার। এখানে ঢুকলে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে, তাই চিন্তা করি সকালের নাশতাটা সেরে নেওয়া যাক। সকালে বের হওয়ার সময় ব্যাগে করে ছোট একটা ভেজিটেবল রোল নিয়ে এসেছিলাম, সেটাই পাশের এক বেঞ্চে বসে চুপিচুপি খেতে থাকলাম। চুপিচুপি কারণ হলো, এখানকার সিগাল মানুষের মতোই বেশ চতুর। খাবারের গন্ধ পেলে কোথা থেকে জানি দল বেঁধে এসে হাজির হয়। সুযোগ পেলে হাত থেকে খাবার ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে উড়াল দেয়। আমি ক্যান্টাবরি শহরেই বেশ কয়েকবার দেখেছি এই সিগালদের মানুষের মতো আচরণ করতে। যেমন: বিনে (ডাস্টবিন) ফেলা দেওয়া পিৎজা বা ম্যাকডোনাল্ডের প্যাকেট থেকে ঠোঁট দিয়ে মানুষের মতো নিখুঁতভাবে খুলে খাবার খেতে। সমুদ্রসৈকতে বসে খাবার খেতে গেলে এদের দাপট সবচেয়ে বেশি বোঝা যায়—চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে—ভয়ডর বলতে এদের কিছু নেই। যাক, সিগালদের ফাঁকি দিয়ে সন্তর্পণে নাশতা শেষ করে দ্য বিটলস স্টোরির দিকে রওনা দিই। ১৭ পাউন্ডের টিকিট ছাত্র হিসেবে ডিসকাউন্টে ১২.৫০ পাউন্ড দিয়ে কিনে ঢুকে পড়ি বিটলস মিউজিয়ামে। এখানে বিটলসের সদস্যদের সেই স্কুলের গণ্ডি থেকে পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার নানা ইতিহাস ও স্মারক রেপ্লিকা সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেই ষাটের দশকের দ্য কসবা, ম্যাথিউ স্ট্রিট, এবে রোড স্টুডিও এবং দ্য ক্যাভার্ন ক্লাবের হুবহু পরিবেশ এখানে তৈরি করে রাখা আছে। টিকিট কাটার পর একটা অডিও ডিভাইস দেওয়া হয়, যেটিতে ধারাবর্ণনা করে প্রতিটি বিষয় সুন্দর করে বোঝানো আছে। বিটলসের এমন কোনো বিষয় নেই, যা এই জাদুঘরে রাখা হয়নি। যেকোনো রক সংগীতপ্রেমী ও ‘বিটলস’ ভক্তের জন্য তো অবশ্যই, তা ছাড়া এই জাদুঘর পপুলার সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থভূমি হিসেবে বিবেচিত হবে বৈকি! প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায় পুরো বিটলস স্টোরি দেখতে। প্রস্থানের সময় কানে বাজতে থাকে তাঁদের গান ‘লেট ইট বি’—গুনগুন করে গাইতে গাইতে বেরিয়ে পড়ি লিভারপুল শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ‘ফোর ফেব’-এর স্ট্যাচু দেখার উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন:

ম্যানচেস্টার থেকে খুব সকালে রওনা দিই লিভারপুলের উদ্দেশে। লিভারপুল এই শহর থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রাপথ। ভ্রমণে সঙ্গীসাথি থাকলে একধরনের, আবার কেউ সঙ্গে না থাকলে আরেক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। একা ভ্রমণে কোনো তাড়া থাকে না, যেকোনো জিনিস গভীর অভিনিবেশসহকারে অনুভব করা যায়। এবারের একা যাত্রায় সুদূর কেন্ট থেকে ম্যানচেস্টারে এসে এক ঘনিষ্ঠ ভাইয়ের বাসায় উঠেছি। এখানে রাত্রি যাপন করে সকাল সকাল রওনা দিই বিটলসের আঁতুড়ঘর লিভারপুল শহরে! সেখানে বাস ও ট্রেন দুইভাবেই যাওয়া যায়—ইংল্যান্ডে তাৎক্ষণিক ট্রেনের ভাড়া বিমানের মতো অনেক বেশি পড়ে, তাই বাসই সহজসাধ্য সবার জন্য।
যখন রওনা দিই, ম্যানচেস্টারের জানুয়ারির সকাল তখন কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন। ইউকের যতই উত্তরের দিকে যাওয়া যায়, আবহাওয়া ততই ধূসর রং ধারণ করে। আমি যেখানে থাকি, লন্ডনের পূর্ব দিকে ক্যান্টাবরি শহরে, সেটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ও সাগরঘেরা হওয়ায় সূর্যের প্রচুর আলো পাওয়া যায়। অন্যদিকে ম্যানচেস্টার বা আরও উত্তরে স্কটল্যান্ডে গেলে এই সূর্যের আলোর স্বল্পতা দেখা যায়, যার ফলে এদিকে শীত বেশি অনুভূত হয়। ভোরের যাত্রায় কয়েক পরতের শীত নিবারক পোশাক পরে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হাজির হই লিভারপুলে। যাত্রাপথে ধরা পড়ে ইংল্যান্ডের অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ—মহাসড়কের দুই ধারে সবুজের অবারিত প্রান্তর—মসৃণ পিচঢালাই পথে স্থানে স্থানে চোখে পড়ে ছোট ছোট গ্রাম আর খামারবাড়ি। পুরো ইংল্যান্ডে কান্ট্রিসাইড বা গ্রামগুলো যেন একইভাবে তৈরি। প্রত্যকের দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ির আঙিনা ফুলে ফুলে সাজানো। নিরিবিলি গোছানো। একটা কি দুটো ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ির সামনে পার্ক করা। কোনো কোলাহল নেই, কোনো তাড়াও নেই—জীবন এখানে অনেক শান্ত-নির্মল।
সকাল ৯টায় পৌঁছে যাই লিভারপুলে। আগের রাতেই গুগল করে কী কী দেখব, একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করে রেখেছিলাম। লিভারপুলে বাস থেকে নেমেই তাই গুগল ম্যাপের শরণাপন্ন হই। ম্যাপ ধরে প্রথমেই চলে যাই লিভারপুলের বিখ্যাত ম্যাজি নদীর তীরে। ম্যাজি (Mersey) নদীকে বাংলায় অনেকে মার্সেই নামে লেখে। যদিও এর সঠিক উচ্চারণ হবে ম্যাজি, স্থানীয়রা ‘স’ কে ‘জ’-এর মতো করে। এই নদীর নামেই ‘ম্যাজি বিট’ (Mersey Beat)। গত শতকের ষাটের দশকে পৃথিবী কাঁপানো এক সংগীতের ধারার জন্ম হয়েছিল। ম্যাজি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল তৎকালীন তুঙ্গস্পর্শী ব্যান্ডদল ‘বিটলস’। এখানে এক ছোট অপরিসর পানশালায় ছিল এর আঁতুড়ঘর। লিভারপুলে আগমনের প্রধান কারণ এই বিটলসের আঁতুড়ঘর দর্শন ও এর সদস্যদের স্মৃতিধন্য শহরের অলিগলিতে বিচরণ।
গবেষকদের মতে, ম্যাজি নদীর তীরে ১৯৫৮-৬৪ সালের মধ্যে প্রায় ৫০০ ব্যান্ড দলের জন্ম হয়েছিল; এর মধ্যে ৩৫০টি গ্রুপ নিয়মিত কনসার্ট, বার ও পাবে বাজাত। আরও একটি বিস্ময়কর ঘটনা হলো, পৃথিবীর ইতিহাসে সংগীতবিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ম্যাজি বিট’ (Mersey Beat)-এর জন্মও এই শহরেই, ১৯৬১ সালে। এই ‘মেজি বিট’-এর একেকটি সংখ্যা তখন ৭৫ হাজার কপি পর্যন্ত বিক্রি হতো। এর সম্পাদক ছিলেন বিটলসের সদস্য জন লেলনের বন্ধু-সহপাঠী বিল হ্যারি। তাঁরা একই কলেজে পড়তেন। ১৯৬২ সালে মেজি বিট পত্রিকার আয়োজনে পাঠকদের ভোটে বিটলস সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল, যা বিটলসের উত্থানের প্রথম সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। এর পর থেকেই মূলত এদের স্থানীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু।
বিটলস নিয়ে আসলে বেশি কিছু বলার নেই। এঁদের গান ও ব্যান্ড দলের সদস্যদের প্রভাব গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এমনই ছিল যে ‘বিটলস ম্যানিয়া’য় আক্রান্ত হয়েছিল কয়েক প্রজন্ম। এর রেশ এখনো শেষ হয়নি। অভাবনীয় ব্যাপার হলো, এই শহরে জন্ম নেওয়া একদল কিশোর মিলে গঠন করেছিল বিটলস।
ম্যাজি নদীর তীরে বিটলসের চার কিংবদন্তি সদস্য জন লেলন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার ছাড়াও জন্ম হয়েছিল গ্যারি মার্সডেনের, যাঁর ‘ফেরি, ক্রস দ্য ম্যাজি’ গান আটলান্টিকের দুই পাড়ে এই নদীর খ্যাতি ছড়িয়ে দিয়েছিল। লিভারপুলের আরও অন্যান্য বিখ্যাত পপ সংগীতশিল্পীর জন্ম। যেমন: বিটলসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ররি স্টর্ম অ্যান্ড দ্য হ্যারিকেন’ ব্যান্ড দলের প্রধান ররি স্টর্মের। উল্লেখ্য, বিটলসের যোগ দেওয়ার আগে রিঙ্গো স্টার এই ব্যান্ড দলে ড্রামার হিসেবে ছিলেন। ‘ররি স্টর্ম অ্যান্ড দ্য হ্যারিকেন’ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ পর্বে বিটলসের চেয়ে প্রভাবশালী ছিল লিভারপুলে—দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ব্যান্ড দলের প্রধান ররি স্টর্ম (১৯৩৮-১৯৭২) মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারা যান। যাই হোক, ম্যাজি বিটের আরেক সফল ব্যান্ড দল ছিল গ্যারি মার্সডেনের ‘গ্যারি অ্যান্ড দ্য পেসমেকার্স’। লিভারপুলে বিটলসের পর দ্বিতীয় প্রভাবশালী এই ব্যান্ড দল।
বিটলসের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবের সমসাময়িককালে লিভারপুল শহরেরই আরেকজন সংগীতশিল্পী ইংলিশ রক এন রোল, পপ সংগীতের জগতে আধিপত্য দেখিয়েছিলেন—তিনি হলেন বিল্লি ফুরি (১৯৪০-১৯৮৩)। তাঁর ভাস্কর্য ম্যাজি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। বিল্লি ফুরি একক ব্যানারেই গান করেছেন বেশি। তাঁর সময়ে ইউকে চার্টে দুই ও তিন নম্বরে ছিলেন ৩৩২ সপ্তাহ। পপ ঘরানার মধ্যে ক্ল্যাসিক মিশ্রণে তিনি স্বতন্ত্র এক ধারা তৈরি করেছিলেন। গানের পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করেছেন। তাঁর বিখ্যাত গান ‘হাফওয়ে টু প্যারাডাইস’। বিটলসের চার সদস্য জন লেলন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার তাঁর সঙ্গে একসময় একসঙ্গে বাজিয়েছেন। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তাঁর সংগীতজীবনের সমাপ্তি হয়। ম্যাজি নদীর তীরে বেড়ে ওঠা এমন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীদের জন্ম হওয়ায় হয়তো লিভারপুলকে বিশ্বসংগীতের রাজধানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
আমাকে লিভারপুল কেবল বিটলসের গানের আকর্ষণে তাঁদের আঁতুড়ঘর পরিদর্শন নয়, পাশাপাশি এর একজন সদস্য জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে নিউইয়র্কে কনসার্ট করেছিলেন—তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোও ছিল অন্যতম কারণ।
বিটলসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘দ্য ক্যাভার্ন স্ন্যাক বার’ নামে ছোট্ট এক টংঘর থেকে। লিভারপুল শিল্প এলাকা হওয়ায় ম্যাজি নদীর তীরে ছোট-বড় অনেক খাবারের দোকান ছিল। আমাদের দেশের চায়ের দোকানের মতো ছোট ছোট টংঘর বা স্বল্প আয়ের মানুষের খাবারের হোটেলের মতো কিছু রেস্তোরাঁও ছিল। সেই সব দোকানের ভেতরে বা এক পাশে লাঞ্চ বা ডিনার করতে আসা ক্রেতাদের বিনোদনের জন্য দোকানিরা এলাকার উঠতি ব্যান্ড দলকে সুযোগ দিত গান পরিবেশনের জন্য। লিভারপুল বন্দরনগরী হওয়ায় এখানে আসা জাহাজের শ্রমিক এবং বন্দরের কাজে জড়িত নানা পেশার অসংখ্য মানুষের বিনোদনের প্রধান আখড়া হয়ে ওঠে এই খাবারের দোকানগুলো। আর শ্রোতাদের তুমুল চাহিদায় দিনে দিনে ম্যাজি বিটের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী—জন্ম নেয় রক সংগীতের কিংবদন্তি সব কৃতি ব্যান্ড শিল্পীর।
লিভারপুলের ১৫-১৬ বছরের চার কিশোর—যারা স্কুলের গণ্ডিও তখন পেরোয়নি—একসঙ্গে গান করার জন্য ‘বিটলস’ নামে ব্যান্ড দল গঠন করে ‘দ্য ক্যাভার্ন’ ক্লাবের ছোট এক অপরিসর জায়গায় বাজাতে শুরু করে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্বতন্ত্র সাংগীতিক স্বরের জন্য আশপাশে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্লাবে ৩০০ বারের মতো তারা পারফর্ম করে আশপাশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে ফেলে। তারা যখন গান গাইত, তখন এই অপরিসর ঘিঞ্জি পানশালায় দুপুরে লাঞ্চের সময় জায়গার সংকুলান হতো না।
তিন গিটারিস্ট জন লেলন, পল ম্যাকর্টনি, জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে পরে রিংগো স্টার ড্রামার হিসেবে যোগ দেন এবং দৃষ্টি কাড়েন সংগীত প্রযোজক-কম্পোজার জর্জ মার্টিন, যাঁকে ‘পঞ্চম বিটলস’ বলা হতো। এই পাঁচজন মিলে পাশ্চাত্য রক এন রোল সংগীত দুনিয়ায় আলোড়ন তোলেন। বিটলসের চার কিংবদন্তি সদস্য, যাঁদের একত্রে ‘ফেবুলাস ফোরসাম’ বলে অভিহিত করা হতো, পরে তাঁরা সংক্ষেপে ‘দ্য ফেব ফোর’ নামে খ্যাতির চূড়ায় আরোহণ করেন।
যাই হোক, লিভারপুলের ম্যাজি নদীর তীরে চমৎকার আকর্ষণীয় এক জায়গা রয়েল আলবার্ট ডক। এর এক পাশেই অবস্থিত পৃথিবীর বিখ্যাত ‘দ্য বিটলস স্টোরি’ জাদুঘর। ম্যাজি নদীর তীর কংক্রিটে বাঁধানো সুন্দর হাঁটার রাস্তা। কয়েক মাইল এই রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া সম্ভব। নদীর তীরে বেশ বাতাসের দাপট ছিল। কয়েক পরতের শীতের পোশাকেও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছিল না বিধায় আধা কিলোমিটারের মতো হাঁটার পর হাতের বাঁয়ে আলবার্ট ডকের দিকে চলে আসি। একটু এগোতেই পেয়ে যাই কাঙ্ক্ষিত সেই ‘দ্য বিটলস স্টোরি’ জাদুঘরের প্রবেশদ্বার। এখানে ঢুকলে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে, তাই চিন্তা করি সকালের নাশতাটা সেরে নেওয়া যাক। সকালে বের হওয়ার সময় ব্যাগে করে ছোট একটা ভেজিটেবল রোল নিয়ে এসেছিলাম, সেটাই পাশের এক বেঞ্চে বসে চুপিচুপি খেতে থাকলাম। চুপিচুপি কারণ হলো, এখানকার সিগাল মানুষের মতোই বেশ চতুর। খাবারের গন্ধ পেলে কোথা থেকে জানি দল বেঁধে এসে হাজির হয়। সুযোগ পেলে হাত থেকে খাবার ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে উড়াল দেয়। আমি ক্যান্টাবরি শহরেই বেশ কয়েকবার দেখেছি এই সিগালদের মানুষের মতো আচরণ করতে। যেমন: বিনে (ডাস্টবিন) ফেলা দেওয়া পিৎজা বা ম্যাকডোনাল্ডের প্যাকেট থেকে ঠোঁট দিয়ে মানুষের মতো নিখুঁতভাবে খুলে খাবার খেতে। সমুদ্রসৈকতে বসে খাবার খেতে গেলে এদের দাপট সবচেয়ে বেশি বোঝা যায়—চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে—ভয়ডর বলতে এদের কিছু নেই। যাক, সিগালদের ফাঁকি দিয়ে সন্তর্পণে নাশতা শেষ করে দ্য বিটলস স্টোরির দিকে রওনা দিই। ১৭ পাউন্ডের টিকিট ছাত্র হিসেবে ডিসকাউন্টে ১২.৫০ পাউন্ড দিয়ে কিনে ঢুকে পড়ি বিটলস মিউজিয়ামে। এখানে বিটলসের সদস্যদের সেই স্কুলের গণ্ডি থেকে পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার নানা ইতিহাস ও স্মারক রেপ্লিকা সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেই ষাটের দশকের দ্য কসবা, ম্যাথিউ স্ট্রিট, এবে রোড স্টুডিও এবং দ্য ক্যাভার্ন ক্লাবের হুবহু পরিবেশ এখানে তৈরি করে রাখা আছে। টিকিট কাটার পর একটা অডিও ডিভাইস দেওয়া হয়, যেটিতে ধারাবর্ণনা করে প্রতিটি বিষয় সুন্দর করে বোঝানো আছে। বিটলসের এমন কোনো বিষয় নেই, যা এই জাদুঘরে রাখা হয়নি। যেকোনো রক সংগীতপ্রেমী ও ‘বিটলস’ ভক্তের জন্য তো অবশ্যই, তা ছাড়া এই জাদুঘর পপুলার সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থভূমি হিসেবে বিবেচিত হবে বৈকি! প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায় পুরো বিটলস স্টোরি দেখতে। প্রস্থানের সময় কানে বাজতে থাকে তাঁদের গান ‘লেট ইট বি’—গুনগুন করে গাইতে গাইতে বেরিয়ে পড়ি লিভারপুল শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ‘ফোর ফেব’-এর স্ট্যাচু দেখার উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন:
আরিফ আবেদ আদিত্য

ম্যানচেস্টার থেকে খুব সকালে রওনা দিই লিভারপুলের উদ্দেশে। লিভারপুল এই শহর থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রাপথ। ভ্রমণে সঙ্গীসাথি থাকলে একধরনের, আবার কেউ সঙ্গে না থাকলে আরেক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। একা ভ্রমণে কোনো তাড়া থাকে না, যেকোনো জিনিস গভীর অভিনিবেশসহকারে অনুভব করা যায়। এবারের একা যাত্রায় সুদূর কেন্ট থেকে ম্যানচেস্টারে এসে এক ঘনিষ্ঠ ভাইয়ের বাসায় উঠেছি। এখানে রাত্রি যাপন করে সকাল সকাল রওনা দিই বিটলসের আঁতুড়ঘর লিভারপুল শহরে! সেখানে বাস ও ট্রেন দুইভাবেই যাওয়া যায়—ইংল্যান্ডে তাৎক্ষণিক ট্রেনের ভাড়া বিমানের মতো অনেক বেশি পড়ে, তাই বাসই সহজসাধ্য সবার জন্য।
যখন রওনা দিই, ম্যানচেস্টারের জানুয়ারির সকাল তখন কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন। ইউকের যতই উত্তরের দিকে যাওয়া যায়, আবহাওয়া ততই ধূসর রং ধারণ করে। আমি যেখানে থাকি, লন্ডনের পূর্ব দিকে ক্যান্টাবরি শহরে, সেটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ও সাগরঘেরা হওয়ায় সূর্যের প্রচুর আলো পাওয়া যায়। অন্যদিকে ম্যানচেস্টার বা আরও উত্তরে স্কটল্যান্ডে গেলে এই সূর্যের আলোর স্বল্পতা দেখা যায়, যার ফলে এদিকে শীত বেশি অনুভূত হয়। ভোরের যাত্রায় কয়েক পরতের শীত নিবারক পোশাক পরে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হাজির হই লিভারপুলে। যাত্রাপথে ধরা পড়ে ইংল্যান্ডের অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ—মহাসড়কের দুই ধারে সবুজের অবারিত প্রান্তর—মসৃণ পিচঢালাই পথে স্থানে স্থানে চোখে পড়ে ছোট ছোট গ্রাম আর খামারবাড়ি। পুরো ইংল্যান্ডে কান্ট্রিসাইড বা গ্রামগুলো যেন একইভাবে তৈরি। প্রত্যকের দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ির আঙিনা ফুলে ফুলে সাজানো। নিরিবিলি গোছানো। একটা কি দুটো ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ির সামনে পার্ক করা। কোনো কোলাহল নেই, কোনো তাড়াও নেই—জীবন এখানে অনেক শান্ত-নির্মল।
সকাল ৯টায় পৌঁছে যাই লিভারপুলে। আগের রাতেই গুগল করে কী কী দেখব, একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করে রেখেছিলাম। লিভারপুলে বাস থেকে নেমেই তাই গুগল ম্যাপের শরণাপন্ন হই। ম্যাপ ধরে প্রথমেই চলে যাই লিভারপুলের বিখ্যাত ম্যাজি নদীর তীরে। ম্যাজি (Mersey) নদীকে বাংলায় অনেকে মার্সেই নামে লেখে। যদিও এর সঠিক উচ্চারণ হবে ম্যাজি, স্থানীয়রা ‘স’ কে ‘জ’-এর মতো করে। এই নদীর নামেই ‘ম্যাজি বিট’ (Mersey Beat)। গত শতকের ষাটের দশকে পৃথিবী কাঁপানো এক সংগীতের ধারার জন্ম হয়েছিল। ম্যাজি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল তৎকালীন তুঙ্গস্পর্শী ব্যান্ডদল ‘বিটলস’। এখানে এক ছোট অপরিসর পানশালায় ছিল এর আঁতুড়ঘর। লিভারপুলে আগমনের প্রধান কারণ এই বিটলসের আঁতুড়ঘর দর্শন ও এর সদস্যদের স্মৃতিধন্য শহরের অলিগলিতে বিচরণ।
গবেষকদের মতে, ম্যাজি নদীর তীরে ১৯৫৮-৬৪ সালের মধ্যে প্রায় ৫০০ ব্যান্ড দলের জন্ম হয়েছিল; এর মধ্যে ৩৫০টি গ্রুপ নিয়মিত কনসার্ট, বার ও পাবে বাজাত। আরও একটি বিস্ময়কর ঘটনা হলো, পৃথিবীর ইতিহাসে সংগীতবিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ম্যাজি বিট’ (Mersey Beat)-এর জন্মও এই শহরেই, ১৯৬১ সালে। এই ‘মেজি বিট’-এর একেকটি সংখ্যা তখন ৭৫ হাজার কপি পর্যন্ত বিক্রি হতো। এর সম্পাদক ছিলেন বিটলসের সদস্য জন লেলনের বন্ধু-সহপাঠী বিল হ্যারি। তাঁরা একই কলেজে পড়তেন। ১৯৬২ সালে মেজি বিট পত্রিকার আয়োজনে পাঠকদের ভোটে বিটলস সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল, যা বিটলসের উত্থানের প্রথম সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। এর পর থেকেই মূলত এদের স্থানীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু।
বিটলস নিয়ে আসলে বেশি কিছু বলার নেই। এঁদের গান ও ব্যান্ড দলের সদস্যদের প্রভাব গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এমনই ছিল যে ‘বিটলস ম্যানিয়া’য় আক্রান্ত হয়েছিল কয়েক প্রজন্ম। এর রেশ এখনো শেষ হয়নি। অভাবনীয় ব্যাপার হলো, এই শহরে জন্ম নেওয়া একদল কিশোর মিলে গঠন করেছিল বিটলস।
ম্যাজি নদীর তীরে বিটলসের চার কিংবদন্তি সদস্য জন লেলন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার ছাড়াও জন্ম হয়েছিল গ্যারি মার্সডেনের, যাঁর ‘ফেরি, ক্রস দ্য ম্যাজি’ গান আটলান্টিকের দুই পাড়ে এই নদীর খ্যাতি ছড়িয়ে দিয়েছিল। লিভারপুলের আরও অন্যান্য বিখ্যাত পপ সংগীতশিল্পীর জন্ম। যেমন: বিটলসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ররি স্টর্ম অ্যান্ড দ্য হ্যারিকেন’ ব্যান্ড দলের প্রধান ররি স্টর্মের। উল্লেখ্য, বিটলসের যোগ দেওয়ার আগে রিঙ্গো স্টার এই ব্যান্ড দলে ড্রামার হিসেবে ছিলেন। ‘ররি স্টর্ম অ্যান্ড দ্য হ্যারিকেন’ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ পর্বে বিটলসের চেয়ে প্রভাবশালী ছিল লিভারপুলে—দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ব্যান্ড দলের প্রধান ররি স্টর্ম (১৯৩৮-১৯৭২) মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারা যান। যাই হোক, ম্যাজি বিটের আরেক সফল ব্যান্ড দল ছিল গ্যারি মার্সডেনের ‘গ্যারি অ্যান্ড দ্য পেসমেকার্স’। লিভারপুলে বিটলসের পর দ্বিতীয় প্রভাবশালী এই ব্যান্ড দল।
বিটলসের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবের সমসাময়িককালে লিভারপুল শহরেরই আরেকজন সংগীতশিল্পী ইংলিশ রক এন রোল, পপ সংগীতের জগতে আধিপত্য দেখিয়েছিলেন—তিনি হলেন বিল্লি ফুরি (১৯৪০-১৯৮৩)। তাঁর ভাস্কর্য ম্যাজি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। বিল্লি ফুরি একক ব্যানারেই গান করেছেন বেশি। তাঁর সময়ে ইউকে চার্টে দুই ও তিন নম্বরে ছিলেন ৩৩২ সপ্তাহ। পপ ঘরানার মধ্যে ক্ল্যাসিক মিশ্রণে তিনি স্বতন্ত্র এক ধারা তৈরি করেছিলেন। গানের পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করেছেন। তাঁর বিখ্যাত গান ‘হাফওয়ে টু প্যারাডাইস’। বিটলসের চার সদস্য জন লেলন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার তাঁর সঙ্গে একসময় একসঙ্গে বাজিয়েছেন। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তাঁর সংগীতজীবনের সমাপ্তি হয়। ম্যাজি নদীর তীরে বেড়ে ওঠা এমন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীদের জন্ম হওয়ায় হয়তো লিভারপুলকে বিশ্বসংগীতের রাজধানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
আমাকে লিভারপুল কেবল বিটলসের গানের আকর্ষণে তাঁদের আঁতুড়ঘর পরিদর্শন নয়, পাশাপাশি এর একজন সদস্য জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে নিউইয়র্কে কনসার্ট করেছিলেন—তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোও ছিল অন্যতম কারণ।
বিটলসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘দ্য ক্যাভার্ন স্ন্যাক বার’ নামে ছোট্ট এক টংঘর থেকে। লিভারপুল শিল্প এলাকা হওয়ায় ম্যাজি নদীর তীরে ছোট-বড় অনেক খাবারের দোকান ছিল। আমাদের দেশের চায়ের দোকানের মতো ছোট ছোট টংঘর বা স্বল্প আয়ের মানুষের খাবারের হোটেলের মতো কিছু রেস্তোরাঁও ছিল। সেই সব দোকানের ভেতরে বা এক পাশে লাঞ্চ বা ডিনার করতে আসা ক্রেতাদের বিনোদনের জন্য দোকানিরা এলাকার উঠতি ব্যান্ড দলকে সুযোগ দিত গান পরিবেশনের জন্য। লিভারপুল বন্দরনগরী হওয়ায় এখানে আসা জাহাজের শ্রমিক এবং বন্দরের কাজে জড়িত নানা পেশার অসংখ্য মানুষের বিনোদনের প্রধান আখড়া হয়ে ওঠে এই খাবারের দোকানগুলো। আর শ্রোতাদের তুমুল চাহিদায় দিনে দিনে ম্যাজি বিটের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী—জন্ম নেয় রক সংগীতের কিংবদন্তি সব কৃতি ব্যান্ড শিল্পীর।
লিভারপুলের ১৫-১৬ বছরের চার কিশোর—যারা স্কুলের গণ্ডিও তখন পেরোয়নি—একসঙ্গে গান করার জন্য ‘বিটলস’ নামে ব্যান্ড দল গঠন করে ‘দ্য ক্যাভার্ন’ ক্লাবের ছোট এক অপরিসর জায়গায় বাজাতে শুরু করে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্বতন্ত্র সাংগীতিক স্বরের জন্য আশপাশে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্লাবে ৩০০ বারের মতো তারা পারফর্ম করে আশপাশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে ফেলে। তারা যখন গান গাইত, তখন এই অপরিসর ঘিঞ্জি পানশালায় দুপুরে লাঞ্চের সময় জায়গার সংকুলান হতো না।
তিন গিটারিস্ট জন লেলন, পল ম্যাকর্টনি, জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে পরে রিংগো স্টার ড্রামার হিসেবে যোগ দেন এবং দৃষ্টি কাড়েন সংগীত প্রযোজক-কম্পোজার জর্জ মার্টিন, যাঁকে ‘পঞ্চম বিটলস’ বলা হতো। এই পাঁচজন মিলে পাশ্চাত্য রক এন রোল সংগীত দুনিয়ায় আলোড়ন তোলেন। বিটলসের চার কিংবদন্তি সদস্য, যাঁদের একত্রে ‘ফেবুলাস ফোরসাম’ বলে অভিহিত করা হতো, পরে তাঁরা সংক্ষেপে ‘দ্য ফেব ফোর’ নামে খ্যাতির চূড়ায় আরোহণ করেন।
যাই হোক, লিভারপুলের ম্যাজি নদীর তীরে চমৎকার আকর্ষণীয় এক জায়গা রয়েল আলবার্ট ডক। এর এক পাশেই অবস্থিত পৃথিবীর বিখ্যাত ‘দ্য বিটলস স্টোরি’ জাদুঘর। ম্যাজি নদীর তীর কংক্রিটে বাঁধানো সুন্দর হাঁটার রাস্তা। কয়েক মাইল এই রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া সম্ভব। নদীর তীরে বেশ বাতাসের দাপট ছিল। কয়েক পরতের শীতের পোশাকেও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছিল না বিধায় আধা কিলোমিটারের মতো হাঁটার পর হাতের বাঁয়ে আলবার্ট ডকের দিকে চলে আসি। একটু এগোতেই পেয়ে যাই কাঙ্ক্ষিত সেই ‘দ্য বিটলস স্টোরি’ জাদুঘরের প্রবেশদ্বার। এখানে ঢুকলে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে, তাই চিন্তা করি সকালের নাশতাটা সেরে নেওয়া যাক। সকালে বের হওয়ার সময় ব্যাগে করে ছোট একটা ভেজিটেবল রোল নিয়ে এসেছিলাম, সেটাই পাশের এক বেঞ্চে বসে চুপিচুপি খেতে থাকলাম। চুপিচুপি কারণ হলো, এখানকার সিগাল মানুষের মতোই বেশ চতুর। খাবারের গন্ধ পেলে কোথা থেকে জানি দল বেঁধে এসে হাজির হয়। সুযোগ পেলে হাত থেকে খাবার ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে উড়াল দেয়। আমি ক্যান্টাবরি শহরেই বেশ কয়েকবার দেখেছি এই সিগালদের মানুষের মতো আচরণ করতে। যেমন: বিনে (ডাস্টবিন) ফেলা দেওয়া পিৎজা বা ম্যাকডোনাল্ডের প্যাকেট থেকে ঠোঁট দিয়ে মানুষের মতো নিখুঁতভাবে খুলে খাবার খেতে। সমুদ্রসৈকতে বসে খাবার খেতে গেলে এদের দাপট সবচেয়ে বেশি বোঝা যায়—চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে—ভয়ডর বলতে এদের কিছু নেই। যাক, সিগালদের ফাঁকি দিয়ে সন্তর্পণে নাশতা শেষ করে দ্য বিটলস স্টোরির দিকে রওনা দিই। ১৭ পাউন্ডের টিকিট ছাত্র হিসেবে ডিসকাউন্টে ১২.৫০ পাউন্ড দিয়ে কিনে ঢুকে পড়ি বিটলস মিউজিয়ামে। এখানে বিটলসের সদস্যদের সেই স্কুলের গণ্ডি থেকে পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার নানা ইতিহাস ও স্মারক রেপ্লিকা সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেই ষাটের দশকের দ্য কসবা, ম্যাথিউ স্ট্রিট, এবে রোড স্টুডিও এবং দ্য ক্যাভার্ন ক্লাবের হুবহু পরিবেশ এখানে তৈরি করে রাখা আছে। টিকিট কাটার পর একটা অডিও ডিভাইস দেওয়া হয়, যেটিতে ধারাবর্ণনা করে প্রতিটি বিষয় সুন্দর করে বোঝানো আছে। বিটলসের এমন কোনো বিষয় নেই, যা এই জাদুঘরে রাখা হয়নি। যেকোনো রক সংগীতপ্রেমী ও ‘বিটলস’ ভক্তের জন্য তো অবশ্যই, তা ছাড়া এই জাদুঘর পপুলার সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থভূমি হিসেবে বিবেচিত হবে বৈকি! প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায় পুরো বিটলস স্টোরি দেখতে। প্রস্থানের সময় কানে বাজতে থাকে তাঁদের গান ‘লেট ইট বি’—গুনগুন করে গাইতে গাইতে বেরিয়ে পড়ি লিভারপুল শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ‘ফোর ফেব’-এর স্ট্যাচু দেখার উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন:

ম্যানচেস্টার থেকে খুব সকালে রওনা দিই লিভারপুলের উদ্দেশে। লিভারপুল এই শহর থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রাপথ। ভ্রমণে সঙ্গীসাথি থাকলে একধরনের, আবার কেউ সঙ্গে না থাকলে আরেক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। একা ভ্রমণে কোনো তাড়া থাকে না, যেকোনো জিনিস গভীর অভিনিবেশসহকারে অনুভব করা যায়। এবারের একা যাত্রায় সুদূর কেন্ট থেকে ম্যানচেস্টারে এসে এক ঘনিষ্ঠ ভাইয়ের বাসায় উঠেছি। এখানে রাত্রি যাপন করে সকাল সকাল রওনা দিই বিটলসের আঁতুড়ঘর লিভারপুল শহরে! সেখানে বাস ও ট্রেন দুইভাবেই যাওয়া যায়—ইংল্যান্ডে তাৎক্ষণিক ট্রেনের ভাড়া বিমানের মতো অনেক বেশি পড়ে, তাই বাসই সহজসাধ্য সবার জন্য।
যখন রওনা দিই, ম্যানচেস্টারের জানুয়ারির সকাল তখন কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন। ইউকের যতই উত্তরের দিকে যাওয়া যায়, আবহাওয়া ততই ধূসর রং ধারণ করে। আমি যেখানে থাকি, লন্ডনের পূর্ব দিকে ক্যান্টাবরি শহরে, সেটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ও সাগরঘেরা হওয়ায় সূর্যের প্রচুর আলো পাওয়া যায়। অন্যদিকে ম্যানচেস্টার বা আরও উত্তরে স্কটল্যান্ডে গেলে এই সূর্যের আলোর স্বল্পতা দেখা যায়, যার ফলে এদিকে শীত বেশি অনুভূত হয়। ভোরের যাত্রায় কয়েক পরতের শীত নিবারক পোশাক পরে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হাজির হই লিভারপুলে। যাত্রাপথে ধরা পড়ে ইংল্যান্ডের অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ—মহাসড়কের দুই ধারে সবুজের অবারিত প্রান্তর—মসৃণ পিচঢালাই পথে স্থানে স্থানে চোখে পড়ে ছোট ছোট গ্রাম আর খামারবাড়ি। পুরো ইংল্যান্ডে কান্ট্রিসাইড বা গ্রামগুলো যেন একইভাবে তৈরি। প্রত্যকের দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ির আঙিনা ফুলে ফুলে সাজানো। নিরিবিলি গোছানো। একটা কি দুটো ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ির সামনে পার্ক করা। কোনো কোলাহল নেই, কোনো তাড়াও নেই—জীবন এখানে অনেক শান্ত-নির্মল।
সকাল ৯টায় পৌঁছে যাই লিভারপুলে। আগের রাতেই গুগল করে কী কী দেখব, একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করে রেখেছিলাম। লিভারপুলে বাস থেকে নেমেই তাই গুগল ম্যাপের শরণাপন্ন হই। ম্যাপ ধরে প্রথমেই চলে যাই লিভারপুলের বিখ্যাত ম্যাজি নদীর তীরে। ম্যাজি (Mersey) নদীকে বাংলায় অনেকে মার্সেই নামে লেখে। যদিও এর সঠিক উচ্চারণ হবে ম্যাজি, স্থানীয়রা ‘স’ কে ‘জ’-এর মতো করে। এই নদীর নামেই ‘ম্যাজি বিট’ (Mersey Beat)। গত শতকের ষাটের দশকে পৃথিবী কাঁপানো এক সংগীতের ধারার জন্ম হয়েছিল। ম্যাজি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল তৎকালীন তুঙ্গস্পর্শী ব্যান্ডদল ‘বিটলস’। এখানে এক ছোট অপরিসর পানশালায় ছিল এর আঁতুড়ঘর। লিভারপুলে আগমনের প্রধান কারণ এই বিটলসের আঁতুড়ঘর দর্শন ও এর সদস্যদের স্মৃতিধন্য শহরের অলিগলিতে বিচরণ।
গবেষকদের মতে, ম্যাজি নদীর তীরে ১৯৫৮-৬৪ সালের মধ্যে প্রায় ৫০০ ব্যান্ড দলের জন্ম হয়েছিল; এর মধ্যে ৩৫০টি গ্রুপ নিয়মিত কনসার্ট, বার ও পাবে বাজাত। আরও একটি বিস্ময়কর ঘটনা হলো, পৃথিবীর ইতিহাসে সংগীতবিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ম্যাজি বিট’ (Mersey Beat)-এর জন্মও এই শহরেই, ১৯৬১ সালে। এই ‘মেজি বিট’-এর একেকটি সংখ্যা তখন ৭৫ হাজার কপি পর্যন্ত বিক্রি হতো। এর সম্পাদক ছিলেন বিটলসের সদস্য জন লেলনের বন্ধু-সহপাঠী বিল হ্যারি। তাঁরা একই কলেজে পড়তেন। ১৯৬২ সালে মেজি বিট পত্রিকার আয়োজনে পাঠকদের ভোটে বিটলস সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল, যা বিটলসের উত্থানের প্রথম সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। এর পর থেকেই মূলত এদের স্থানীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু।
বিটলস নিয়ে আসলে বেশি কিছু বলার নেই। এঁদের গান ও ব্যান্ড দলের সদস্যদের প্রভাব গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এমনই ছিল যে ‘বিটলস ম্যানিয়া’য় আক্রান্ত হয়েছিল কয়েক প্রজন্ম। এর রেশ এখনো শেষ হয়নি। অভাবনীয় ব্যাপার হলো, এই শহরে জন্ম নেওয়া একদল কিশোর মিলে গঠন করেছিল বিটলস।
ম্যাজি নদীর তীরে বিটলসের চার কিংবদন্তি সদস্য জন লেলন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার ছাড়াও জন্ম হয়েছিল গ্যারি মার্সডেনের, যাঁর ‘ফেরি, ক্রস দ্য ম্যাজি’ গান আটলান্টিকের দুই পাড়ে এই নদীর খ্যাতি ছড়িয়ে দিয়েছিল। লিভারপুলের আরও অন্যান্য বিখ্যাত পপ সংগীতশিল্পীর জন্ম। যেমন: বিটলসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ররি স্টর্ম অ্যান্ড দ্য হ্যারিকেন’ ব্যান্ড দলের প্রধান ররি স্টর্মের। উল্লেখ্য, বিটলসের যোগ দেওয়ার আগে রিঙ্গো স্টার এই ব্যান্ড দলে ড্রামার হিসেবে ছিলেন। ‘ররি স্টর্ম অ্যান্ড দ্য হ্যারিকেন’ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ পর্বে বিটলসের চেয়ে প্রভাবশালী ছিল লিভারপুলে—দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ব্যান্ড দলের প্রধান ররি স্টর্ম (১৯৩৮-১৯৭২) মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারা যান। যাই হোক, ম্যাজি বিটের আরেক সফল ব্যান্ড দল ছিল গ্যারি মার্সডেনের ‘গ্যারি অ্যান্ড দ্য পেসমেকার্স’। লিভারপুলে বিটলসের পর দ্বিতীয় প্রভাবশালী এই ব্যান্ড দল।
বিটলসের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবের সমসাময়িককালে লিভারপুল শহরেরই আরেকজন সংগীতশিল্পী ইংলিশ রক এন রোল, পপ সংগীতের জগতে আধিপত্য দেখিয়েছিলেন—তিনি হলেন বিল্লি ফুরি (১৯৪০-১৯৮৩)। তাঁর ভাস্কর্য ম্যাজি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। বিল্লি ফুরি একক ব্যানারেই গান করেছেন বেশি। তাঁর সময়ে ইউকে চার্টে দুই ও তিন নম্বরে ছিলেন ৩৩২ সপ্তাহ। পপ ঘরানার মধ্যে ক্ল্যাসিক মিশ্রণে তিনি স্বতন্ত্র এক ধারা তৈরি করেছিলেন। গানের পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করেছেন। তাঁর বিখ্যাত গান ‘হাফওয়ে টু প্যারাডাইস’। বিটলসের চার সদস্য জন লেলন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার তাঁর সঙ্গে একসময় একসঙ্গে বাজিয়েছেন। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তাঁর সংগীতজীবনের সমাপ্তি হয়। ম্যাজি নদীর তীরে বেড়ে ওঠা এমন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীদের জন্ম হওয়ায় হয়তো লিভারপুলকে বিশ্বসংগীতের রাজধানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
আমাকে লিভারপুল কেবল বিটলসের গানের আকর্ষণে তাঁদের আঁতুড়ঘর পরিদর্শন নয়, পাশাপাশি এর একজন সদস্য জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে নিউইয়র্কে কনসার্ট করেছিলেন—তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোও ছিল অন্যতম কারণ।
বিটলসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘দ্য ক্যাভার্ন স্ন্যাক বার’ নামে ছোট্ট এক টংঘর থেকে। লিভারপুল শিল্প এলাকা হওয়ায় ম্যাজি নদীর তীরে ছোট-বড় অনেক খাবারের দোকান ছিল। আমাদের দেশের চায়ের দোকানের মতো ছোট ছোট টংঘর বা স্বল্প আয়ের মানুষের খাবারের হোটেলের মতো কিছু রেস্তোরাঁও ছিল। সেই সব দোকানের ভেতরে বা এক পাশে লাঞ্চ বা ডিনার করতে আসা ক্রেতাদের বিনোদনের জন্য দোকানিরা এলাকার উঠতি ব্যান্ড দলকে সুযোগ দিত গান পরিবেশনের জন্য। লিভারপুল বন্দরনগরী হওয়ায় এখানে আসা জাহাজের শ্রমিক এবং বন্দরের কাজে জড়িত নানা পেশার অসংখ্য মানুষের বিনোদনের প্রধান আখড়া হয়ে ওঠে এই খাবারের দোকানগুলো। আর শ্রোতাদের তুমুল চাহিদায় দিনে দিনে ম্যাজি বিটের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী—জন্ম নেয় রক সংগীতের কিংবদন্তি সব কৃতি ব্যান্ড শিল্পীর।
লিভারপুলের ১৫-১৬ বছরের চার কিশোর—যারা স্কুলের গণ্ডিও তখন পেরোয়নি—একসঙ্গে গান করার জন্য ‘বিটলস’ নামে ব্যান্ড দল গঠন করে ‘দ্য ক্যাভার্ন’ ক্লাবের ছোট এক অপরিসর জায়গায় বাজাতে শুরু করে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্বতন্ত্র সাংগীতিক স্বরের জন্য আশপাশে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্লাবে ৩০০ বারের মতো তারা পারফর্ম করে আশপাশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে ফেলে। তারা যখন গান গাইত, তখন এই অপরিসর ঘিঞ্জি পানশালায় দুপুরে লাঞ্চের সময় জায়গার সংকুলান হতো না।
তিন গিটারিস্ট জন লেলন, পল ম্যাকর্টনি, জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে পরে রিংগো স্টার ড্রামার হিসেবে যোগ দেন এবং দৃষ্টি কাড়েন সংগীত প্রযোজক-কম্পোজার জর্জ মার্টিন, যাঁকে ‘পঞ্চম বিটলস’ বলা হতো। এই পাঁচজন মিলে পাশ্চাত্য রক এন রোল সংগীত দুনিয়ায় আলোড়ন তোলেন। বিটলসের চার কিংবদন্তি সদস্য, যাঁদের একত্রে ‘ফেবুলাস ফোরসাম’ বলে অভিহিত করা হতো, পরে তাঁরা সংক্ষেপে ‘দ্য ফেব ফোর’ নামে খ্যাতির চূড়ায় আরোহণ করেন।
যাই হোক, লিভারপুলের ম্যাজি নদীর তীরে চমৎকার আকর্ষণীয় এক জায়গা রয়েল আলবার্ট ডক। এর এক পাশেই অবস্থিত পৃথিবীর বিখ্যাত ‘দ্য বিটলস স্টোরি’ জাদুঘর। ম্যাজি নদীর তীর কংক্রিটে বাঁধানো সুন্দর হাঁটার রাস্তা। কয়েক মাইল এই রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া সম্ভব। নদীর তীরে বেশ বাতাসের দাপট ছিল। কয়েক পরতের শীতের পোশাকেও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছিল না বিধায় আধা কিলোমিটারের মতো হাঁটার পর হাতের বাঁয়ে আলবার্ট ডকের দিকে চলে আসি। একটু এগোতেই পেয়ে যাই কাঙ্ক্ষিত সেই ‘দ্য বিটলস স্টোরি’ জাদুঘরের প্রবেশদ্বার। এখানে ঢুকলে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে, তাই চিন্তা করি সকালের নাশতাটা সেরে নেওয়া যাক। সকালে বের হওয়ার সময় ব্যাগে করে ছোট একটা ভেজিটেবল রোল নিয়ে এসেছিলাম, সেটাই পাশের এক বেঞ্চে বসে চুপিচুপি খেতে থাকলাম। চুপিচুপি কারণ হলো, এখানকার সিগাল মানুষের মতোই বেশ চতুর। খাবারের গন্ধ পেলে কোথা থেকে জানি দল বেঁধে এসে হাজির হয়। সুযোগ পেলে হাত থেকে খাবার ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে উড়াল দেয়। আমি ক্যান্টাবরি শহরেই বেশ কয়েকবার দেখেছি এই সিগালদের মানুষের মতো আচরণ করতে। যেমন: বিনে (ডাস্টবিন) ফেলা দেওয়া পিৎজা বা ম্যাকডোনাল্ডের প্যাকেট থেকে ঠোঁট দিয়ে মানুষের মতো নিখুঁতভাবে খুলে খাবার খেতে। সমুদ্রসৈকতে বসে খাবার খেতে গেলে এদের দাপট সবচেয়ে বেশি বোঝা যায়—চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে—ভয়ডর বলতে এদের কিছু নেই। যাক, সিগালদের ফাঁকি দিয়ে সন্তর্পণে নাশতা শেষ করে দ্য বিটলস স্টোরির দিকে রওনা দিই। ১৭ পাউন্ডের টিকিট ছাত্র হিসেবে ডিসকাউন্টে ১২.৫০ পাউন্ড দিয়ে কিনে ঢুকে পড়ি বিটলস মিউজিয়ামে। এখানে বিটলসের সদস্যদের সেই স্কুলের গণ্ডি থেকে পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার নানা ইতিহাস ও স্মারক রেপ্লিকা সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেই ষাটের দশকের দ্য কসবা, ম্যাথিউ স্ট্রিট, এবে রোড স্টুডিও এবং দ্য ক্যাভার্ন ক্লাবের হুবহু পরিবেশ এখানে তৈরি করে রাখা আছে। টিকিট কাটার পর একটা অডিও ডিভাইস দেওয়া হয়, যেটিতে ধারাবর্ণনা করে প্রতিটি বিষয় সুন্দর করে বোঝানো আছে। বিটলসের এমন কোনো বিষয় নেই, যা এই জাদুঘরে রাখা হয়নি। যেকোনো রক সংগীতপ্রেমী ও ‘বিটলস’ ভক্তের জন্য তো অবশ্যই, তা ছাড়া এই জাদুঘর পপুলার সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থভূমি হিসেবে বিবেচিত হবে বৈকি! প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায় পুরো বিটলস স্টোরি দেখতে। প্রস্থানের সময় কানে বাজতে থাকে তাঁদের গান ‘লেট ইট বি’—গুনগুন করে গাইতে গাইতে বেরিয়ে পড়ি লিভারপুল শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ‘ফোর ফেব’-এর স্ট্যাচু দেখার উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন:

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

ম্যানচেস্টার থেকে খুব সকালে রওনা দিই লিভারপুলের উদ্দেশে। লিভারপুল এই শহর থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রাপথ। ভ্রমণে সঙ্গীসাথি থাকলে একধরনের, আবার কেউ সঙ্গে না থাকলে আরেক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। একা ভ্রমণে কোনো তাড়া থাকে না, যেকোনো জিনিস গভীর অভিনিবেশসহকারে অনুভব করা যায়। এবারের একা যাত্রায়
১৪ অক্টোবর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

ম্যানচেস্টার থেকে খুব সকালে রওনা দিই লিভারপুলের উদ্দেশে। লিভারপুল এই শহর থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রাপথ। ভ্রমণে সঙ্গীসাথি থাকলে একধরনের, আবার কেউ সঙ্গে না থাকলে আরেক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। একা ভ্রমণে কোনো তাড়া থাকে না, যেকোনো জিনিস গভীর অভিনিবেশসহকারে অনুভব করা যায়। এবারের একা যাত্রায়
১৪ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

ম্যানচেস্টার থেকে খুব সকালে রওনা দিই লিভারপুলের উদ্দেশে। লিভারপুল এই শহর থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রাপথ। ভ্রমণে সঙ্গীসাথি থাকলে একধরনের, আবার কেউ সঙ্গে না থাকলে আরেক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। একা ভ্রমণে কোনো তাড়া থাকে না, যেকোনো জিনিস গভীর অভিনিবেশসহকারে অনুভব করা যায়। এবারের একা যাত্রায়
১৪ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

ম্যানচেস্টার থেকে খুব সকালে রওনা দিই লিভারপুলের উদ্দেশে। লিভারপুল এই শহর থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রাপথ। ভ্রমণে সঙ্গীসাথি থাকলে একধরনের, আবার কেউ সঙ্গে না থাকলে আরেক ধরনের রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। একা ভ্রমণে কোনো তাড়া থাকে না, যেকোনো জিনিস গভীর অভিনিবেশসহকারে অনুভব করা যায়। এবারের একা যাত্রায়
১৪ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে