Ajker Patrika

বাংলাদেশি মতুয়া সম্প্রদায়ের ওপর কী প্রভাব ফেলবে ভারতের সিএএ

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

২০১৯ সালে পাস করার পর গত সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর মতে, এই আইনটি বাস্তবায়নের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়। মূলত বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হয়ে যাওয়া হিন্দুরাই এই সম্প্রদায়ের মানুষ। 

এ বিষয়ে ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন আইনের দ্বারা ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন, পারসি, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়ারাও এই আইনের মাধ্যমে কাগজে-কলমে ভারতের স্থায়ী নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। 

একটি তফসিলি বা তালিকাভুক্ত জাতি হিসাবে মতুয়ারা হলো—নমশূদ্র বা নিম্ন বর্ণের হিন্দু উদ্বাস্তু। যারা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে গিয়েছিল। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব আইনের বাস্তবায়ন ভারতের আসন্ন নির্বাচনেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ জনসংখ্যার দিক দিয়ে মতুয়ারা এখন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। এই সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষ উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা এবং নদীয়া, হাওড়া, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহের মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বসবাস করে। 

নমশূদ্ররা পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। উত্তরবঙ্গে রাজবংশীদের পরই এরা রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। 

সামগ্রিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের সিংহভাগই হিন্দু (প্রায় ৯৯.৯৬ শতাংশ)। এই রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১০টি আসন তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। এই ১০টি আসনের মধ্যে ২০১৯ সালে বিজেপি জয় পেয়েছিল চারটি আসনে। এই আসনগুলো হলো—কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, বিষ্ণুপুর এবং বনগাঁও। 

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়—পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়টি হরিচাঁদ ঠাকুর এবং তাঁর বংশধরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাঁরা উত্তর চব্বিশ পরগনার বাসিন্দা। ভারতের রাজনীতির সঙ্গেও তাঁদের দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। 

হরিচাঁদের প্রপৌত্র প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর ১৯৬২ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য হয়েছিলেন। কিছুদিন আগে পর্যন্তও প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরের বিধবা শতবর্ষী পত্নী বীনাপানি দেবী ছিলেন এই সম্প্রদায়ের সৌভাগ্যের প্রতীক। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মতুয়া মহাসংঘতে নিজেদের অবস্থানের সমর্থনে ঠাকুর পরিবারের একাধিক সদস্য রাজনীতিতে তাঁদের ভাগ্য যাচাই করেছেন। 

বিনাপানি দেবীর বড় ছেলে কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর ২০১৪ সালে বনগাঁ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ হয়েছিলেন। তার ছোট ভাই মঞ্জুল কৃষ্ণ ২০১১ সালে গাইঘাটা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হয়েছিলেন। 

এদিকে তৃণমূল সাংসদ ও কাকা কপিল কৃষ্ণ ঠাকুরের আকস্মিক মৃত্যুর পর মঞ্জুলের বড় ছেলে সুব্রত ঠাকুর ২০১৫ সালে বিজেপির টিকিটে বনগাঁ উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেই নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে তৃণমূল থেকে জয়ী হয়েছিলেন তাঁরই চাচি ও কপিল কৃষ্ণের বিধবা স্ত্রী মমতা বালা ঠাকুর। 

তবে মতুয়াদের মধ্যে বিজেপির প্রভাব শক্তিশালী হয়ে ওঠে কয়েক বছরের মধ্যেই। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনেই দেখা যায়—মঞ্জুল কৃষ্ণের ছেলে শান্তনু ঠাকুর বিজেপির হয়ে বনগাঁ লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছেন। বর্তমানে মোদি সরকারের কেন্দ্রীয় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। মঞ্জুল কৃষ্ণের আরেক ছেলে সুব্রত ঠাকুর একই অঞ্চলের গাইঘাটা বিধানসভা আসনে বিজেপি থেকে নির্বাচিত বিধায়ক। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের মতো তফসিলি জাতিগুলোকে নিজেদের পক্ষে টেনে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাঁটিতে বড় আঘাত হানতে চাইছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। আর এ জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে একটি বড় চাল হিসেবে দেখছে দলটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত