অনলাইন ডেস্ক
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের নিজ বাড়িতে বসে হারলিন কাপুর (ছদ্মনাম) উদাস কণ্ঠে বলেন, ‘২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আমি রিপোর্টিং নয়, বেশির ভাগ সময় অফিসের ডেস্কেই কাটিয়েছি।’
কাপুর আগে অধিকারভিত্তিক বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতেন। বিশেষ করে, দলিত নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা ও মুসলমানদের হয়রানির মতো বিষয়গুলো নিয়ে। কিন্তু এখন তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘মাঠে গিয়ে রিপোর্টিং করতে এখন অফিস নিষেধ করে। কারণ, সরকারবিরোধী কিছু প্রকাশিত হলেই বিজ্ঞাপন হারানোর ভয়।’
২০২২ সালে উত্তর প্রদেশে ক্ষমতায় বিজেপি আবার ফিরে এলে কাপুরকে অফিস স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তিনি যেন আর বাইরে রিপোর্ট করতে না যান।
‘সংবিধানে স্বাধীনতা থাকলেও বাস্তবে তা মৃতপ্রায়’
ভারতীয় সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার পত্রিকা ও ৪৫০টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিয়ে দেশটির গণমাধ্যম কার্যত উজ্জ্বল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’-এর ২০২৪ সালের সূচকে ভারত ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম অবস্থানে রয়েছে।
জার্নালিস্ট হারলিন কাপুর বলেন, এখন কাউকে দায়ী করা যায় না। কারণ, ভয় আছে—আপনার প্রতিবেদন সরকারবিরোধী হলে হয়রানির শিকার হতে হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কুম্ভমেলার বিশাল পবিত্র জনসমাবেশে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন কাপুর। কিন্তু ভয়ে পিছিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা বলেছে, ‘‘তুমি যদি জেলে যাও, গরমে এক টয়লেট ৪০ জনের সঙ্গে ভাগ করে কীভাবে থাকবে?’’ আমরা ছোট শহরের মানুষ, পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই।’
বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি
একই রাজ্যে বসবাসকারী সাংবাদিক অর্জুন মেনন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘দুই বছর আগে মোদিবিরোধী একটি প্রতিবেদন লেখার পর আমাকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। ট্রল, দেশদ্রোহী আখ্যা—সবই সহ্য করতে হয়েছে। এখন আমি সব কথোপকথন রেকর্ড করে রাখি, আদালতে গেলে যেন প্রমাণ থাকে।’
ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের তথ্যমতে, ২০১৪ সালের পর থেকে অন্তত ১৫ জন সাংবাদিক ভারতের কুখ্যাত ‘আন-ল-ফুল অ্যাকটিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট’ বা ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং ৩৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
নির্বিচার আটক, রায় পেতে বছর কেটে যায়
সিদ্দিক কাপ্পান নামের এক সাংবাদিক ২০২০ সালে এক দলিত কিশোরীর ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা কভার করতে গিয়ে ট্রায়াল ছাড়াই দুই বছর জেলে ছিলেন। তাঁকে ‘উগ্র ইসলামপন্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা’ ও ‘মুসলমানদের সহিংসতায় উসকে দেওয়া’র অভিযোগে আটক করা হয়েছিল।
দিল্লিভিত্তিক সাংবাদিক আকাশ হাসান বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে আমার রিপোর্টের পর গোয়েন্দা ও পুলিশ আমার বাসায় আসে। ফোন জব্দ করে, পাসওয়ার্ড চায়। এখন আমি ভারত ছেড়ে কোথাও যেতে পারি না।’
আকাশ হাসান বলেন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট আমি করতে পারছি না। কারণ, পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় কাজ করে। কঠোর আইনে গ্রেপ্তার হলে বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকে।’
‘আইনকে অস্ত্র করে সাংবাদিকদের দমন করা হচ্ছে’
অবসর নেওয়া সাংবাদিক পরাঞ্জয় গুহঠাকুরতা বলেন, ‘আগের সরকারগুলোও গণমাধ্যম দমন করেছে। কিন্তু মোদি সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অস্ত্র বানিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী ও স্বাধীন সাংবাদিকদের দমন করছে।’
২০২৩ সালে পরাঞ্জয় গুহকেও আটক করেছিল ভারতীয় পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৫-৭৭ সালের জরুরি অবস্থার পর এখনকার মতো ভারতের গণমাধ্যম কখনো এতটা নিগ্রহের মধ্যে পড়েনি।’
স্বাধীনতা পুরোপুরি মৃত নয়
এদিকে দ্য হিন্দু পাবলিশিং গ্রুপের পরিচালক এন রাম বলেন, সবকিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ওয়্যার, নিউজলন্ড্রি, কারাভান-এর মতো কিছু অনলাইন ও ম্যাগাজিন এখনো কঠিন প্রশ্ন তোলে।
জনপ্রিয় ইউটিউবার ও পডকাস্টার রবিশ কুমার, ধ্রুব রাঠি, আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো স্বাধীন কণ্ঠস্বরও মানুষের কাছে আস্থা পাচ্ছে।
দক্ষিণ ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় না থাকায় সেখানে সাংবাদিকদের মধ্যে তুলনামূলক কম ভয় কাজ করে। গত মাসেই তামিলনাড়ুর ভিকাতান ওয়েবসাইটে মোদি ও ট্রাম্পকে একসঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় একটি কার্টুন প্রকাশের পর সরকার ওয়েবসাইটটি বন্ধ করতে চেয়েছিল। তবে আদালত সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
এন রাম বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা মরেনি। কিছু জায়গায় এখনো টিকে আছে এবং আরও অনেকে এই দমননীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের নিজ বাড়িতে বসে হারলিন কাপুর (ছদ্মনাম) উদাস কণ্ঠে বলেন, ‘২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আমি রিপোর্টিং নয়, বেশির ভাগ সময় অফিসের ডেস্কেই কাটিয়েছি।’
কাপুর আগে অধিকারভিত্তিক বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতেন। বিশেষ করে, দলিত নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা ও মুসলমানদের হয়রানির মতো বিষয়গুলো নিয়ে। কিন্তু এখন তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘মাঠে গিয়ে রিপোর্টিং করতে এখন অফিস নিষেধ করে। কারণ, সরকারবিরোধী কিছু প্রকাশিত হলেই বিজ্ঞাপন হারানোর ভয়।’
২০২২ সালে উত্তর প্রদেশে ক্ষমতায় বিজেপি আবার ফিরে এলে কাপুরকে অফিস স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তিনি যেন আর বাইরে রিপোর্ট করতে না যান।
‘সংবিধানে স্বাধীনতা থাকলেও বাস্তবে তা মৃতপ্রায়’
ভারতীয় সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার পত্রিকা ও ৪৫০টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিয়ে দেশটির গণমাধ্যম কার্যত উজ্জ্বল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’-এর ২০২৪ সালের সূচকে ভারত ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম অবস্থানে রয়েছে।
জার্নালিস্ট হারলিন কাপুর বলেন, এখন কাউকে দায়ী করা যায় না। কারণ, ভয় আছে—আপনার প্রতিবেদন সরকারবিরোধী হলে হয়রানির শিকার হতে হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কুম্ভমেলার বিশাল পবিত্র জনসমাবেশে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন কাপুর। কিন্তু ভয়ে পিছিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা বলেছে, ‘‘তুমি যদি জেলে যাও, গরমে এক টয়লেট ৪০ জনের সঙ্গে ভাগ করে কীভাবে থাকবে?’’ আমরা ছোট শহরের মানুষ, পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই।’
বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি
একই রাজ্যে বসবাসকারী সাংবাদিক অর্জুন মেনন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘দুই বছর আগে মোদিবিরোধী একটি প্রতিবেদন লেখার পর আমাকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। ট্রল, দেশদ্রোহী আখ্যা—সবই সহ্য করতে হয়েছে। এখন আমি সব কথোপকথন রেকর্ড করে রাখি, আদালতে গেলে যেন প্রমাণ থাকে।’
ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের তথ্যমতে, ২০১৪ সালের পর থেকে অন্তত ১৫ জন সাংবাদিক ভারতের কুখ্যাত ‘আন-ল-ফুল অ্যাকটিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট’ বা ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং ৩৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
নির্বিচার আটক, রায় পেতে বছর কেটে যায়
সিদ্দিক কাপ্পান নামের এক সাংবাদিক ২০২০ সালে এক দলিত কিশোরীর ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা কভার করতে গিয়ে ট্রায়াল ছাড়াই দুই বছর জেলে ছিলেন। তাঁকে ‘উগ্র ইসলামপন্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা’ ও ‘মুসলমানদের সহিংসতায় উসকে দেওয়া’র অভিযোগে আটক করা হয়েছিল।
দিল্লিভিত্তিক সাংবাদিক আকাশ হাসান বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে আমার রিপোর্টের পর গোয়েন্দা ও পুলিশ আমার বাসায় আসে। ফোন জব্দ করে, পাসওয়ার্ড চায়। এখন আমি ভারত ছেড়ে কোথাও যেতে পারি না।’
আকাশ হাসান বলেন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট আমি করতে পারছি না। কারণ, পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় কাজ করে। কঠোর আইনে গ্রেপ্তার হলে বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকে।’
‘আইনকে অস্ত্র করে সাংবাদিকদের দমন করা হচ্ছে’
অবসর নেওয়া সাংবাদিক পরাঞ্জয় গুহঠাকুরতা বলেন, ‘আগের সরকারগুলোও গণমাধ্যম দমন করেছে। কিন্তু মোদি সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অস্ত্র বানিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী ও স্বাধীন সাংবাদিকদের দমন করছে।’
২০২৩ সালে পরাঞ্জয় গুহকেও আটক করেছিল ভারতীয় পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৫-৭৭ সালের জরুরি অবস্থার পর এখনকার মতো ভারতের গণমাধ্যম কখনো এতটা নিগ্রহের মধ্যে পড়েনি।’
স্বাধীনতা পুরোপুরি মৃত নয়
এদিকে দ্য হিন্দু পাবলিশিং গ্রুপের পরিচালক এন রাম বলেন, সবকিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ওয়্যার, নিউজলন্ড্রি, কারাভান-এর মতো কিছু অনলাইন ও ম্যাগাজিন এখনো কঠিন প্রশ্ন তোলে।
জনপ্রিয় ইউটিউবার ও পডকাস্টার রবিশ কুমার, ধ্রুব রাঠি, আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো স্বাধীন কণ্ঠস্বরও মানুষের কাছে আস্থা পাচ্ছে।
দক্ষিণ ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় না থাকায় সেখানে সাংবাদিকদের মধ্যে তুলনামূলক কম ভয় কাজ করে। গত মাসেই তামিলনাড়ুর ভিকাতান ওয়েবসাইটে মোদি ও ট্রাম্পকে একসঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় একটি কার্টুন প্রকাশের পর সরকার ওয়েবসাইটটি বন্ধ করতে চেয়েছিল। তবে আদালত সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
এন রাম বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা মরেনি। কিছু জায়গায় এখনো টিকে আছে এবং আরও অনেকে এই দমননীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে এই দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় আপাতত দেখা যাচ্ছে না। আধুনিক ইতিহাসে বাণিজ্যে এত বড় বিঘ্ন ঘটানোর পেছনে ট্রাম্পের উদ্দেশ্য পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও মনে হচ্ছে, তিনি চীনের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে আগেরবারের চেয়ে কম আগ্রহী।
১০ ঘণ্টা আগেভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি
১ দিন আগেভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যারা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন।
১ দিন আগেশেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে কূটনৈতিক পর্যায়ে বাগ্যুদ্ধের পর প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশ সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করছে। এতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৩ দিন আগে