Ajker Patrika

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পেছনের কূটনীতি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ মে ২০২৫, ১০: ০৫
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর পাকিস্তানের হায়দরাবাদের উল্লাস। ছবি: এএফপি
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর পাকিস্তানের হায়দরাবাদের উল্লাস। ছবি: এএফপি

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান সংঘাত যখন ভয়াবহ মোড় নিচ্ছিল, তখন আকস্মিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার (১০ মে) ঘোষণা দেন—পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এই ঘোষণা ছিল বিস্ময়কর। কারণ এর কয়েক দিন আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছিলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানকে থামাতে পারব না, সেটা আমাদের কাজও নয়।’

এই অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্পই কেন সবার আগে এই ঘোষণা দিলেন? এটিই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি।

গত ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরে একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। এরপর ভারত বিমান হামলা চালালে পাকিস্তান দাবি করে, তারা ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত সরকার এ দাবি অস্বীকার করেছে, তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের হাতে প্রাপ্ত প্রমাণে দেখা গেছে, কিছু ভারতীয় বিমান সত্যিই ভেঙে পড়েছে।

পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন দুই দেশকেই সংযত থাকতে চাপ দিতে শুরু করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যাতে দুই পক্ষ যুদ্ধ থামাতে সম্মত হয়।

যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগেও ভারত পাকিস্তানি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায়। এর জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা রকেট, গোলা ও ড্রোন হামলা চালায় ভারতের অন্তত ডজনখানেক এলাকায়। এতে দুই দেশের মধ্যেই জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

যদিও ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করেছে, দিল্লি এই বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নেয়। ভারত যুদ্ধবিরতিকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ফল হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে এবং বিষয়টিকে নিজেদের কূটনৈতিক সফলতা বলেই উপস্থাপন করেছে।

কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মূলত একটি খোলা দরজায় ধাক্কা দিয়েছে—অর্থাৎ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কোনো পক্ষেরই স্বার্থে ছিল না। তাই এই সমঝোতা হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার।

ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে তাঁর কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখাতে চাইলেও এটি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো জটিল সংকটে তাঁর অক্ষমতা ঢাকার চেষ্টা বলেই মনে হচ্ছে। কারণ ভারত-পাকিস্তানের এই সংঘাত স্থায়ী হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন দিন। আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে তিন বছরের বেশি সময় ধরে।

এদিকে এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করবে—এমন আশা করা যাবে না। যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাশ্মীরে বিস্ফোরণের খবর এসেছে। সীমান্তেও হামলার অভিযোগ উঠেছে।

আর বড় প্রশ্ন হচ্ছে—এই মার্কিন মধ্যস্থতায় সম্পন্ন যুদ্ধবিরতি কাশ্মীর সমস্যার মূলে থাকা ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বিরোধের কোনো সমাধান দিতে পারবে না। মুসলিমপ্রধান কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বিরোধে লিপ্ত। সেখানে স্বাধীনতাপন্থী আন্দোলনও রয়েছে।

সর্বশেষ এই সংঘাত হয়তো আপাতত থেমেছে, তবে কাশ্মীর ইস্যু আবারও নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে—আরও তীব্রভাবে।

সূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত