Ajker Patrika

টিকা কূটনীতি দিয়ে বিশ্বে অবস্থান পাকাপোক্ত করছে রাশিয়া-চীন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ মে ২০২১, ১২: ০৯
Thumbnail image

গত জানুয়ারিতে বিশ্বে বিভিন্ন ধনী দেশ শুরু করে টিকাদান কার্যক্রম। শুরু থেকেই চলছে ভ্যাকসিনের জন্য হাহাকার। এ নিয়ে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিস  ওই সময় অভিযোগে করেন, পরমাণু অস্ত্রের চেয়েও ভ্যাকসিন পাওয়া কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুচিস ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়টিকে টাইটানিকের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেন যেখানে সবাই বাঁচার জন্য নৌকায় উঠতে চাইছিল। তবে এখন সার্বিয়ার পরিস্থিতি বদলে গেছে। চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদন চুক্তি করেছে দেশটি। এতে বর্তমানে ইউরোপীয় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়েও ভ্যাকসিন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে সার্বিয়া।

কিন্তু এখনও অনেক দেশই ভ্যাকসিন পেতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলো। বার্তা সংস্থা এএফপির হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে এরই মধ্যে ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ পেয়েছে দরিদ্র দেশগুলো। এই দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই এখন ভ্যাকসিনের জন্য চীন এবং রাশিয়ার সাহায্য চাইছে।

গত ২৮ এপ্রিল দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পক্ষ থেকে বলা হয়, চীন এবং রাশিয়া বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করে ভ্যাকসিনের শূন্যতা পূরণ করছে। বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশে এরই মধ্যে লাখ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে চীন এবং রাশিয়া। আর এই ভ্যাকসিন কূটনীতি দিয়ে বিশ্বে নিজেদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করছে দেশ দুটি। এতে একদিকে যেমন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে, পাশাপাশি কৌশলগত প্রভাবও বাড়ছে।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, রাশিয়া এ পর্যন্ত ৭০টি দেশে ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। এই তালিকার মধ্যে বেশিরভাগই এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলো রয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল চীন প্রায় ৯০টি দেশে ভ্যাকসিন রপ্তানি করার পরিকল্পনা করেছে। সেই তুলনায় বিশ্বের ধনী দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো  খুব কম সংখ্যক ভ্যাকসিনই করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহে গঠিত বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সকে দিয়েছে। এদিকে সম্প্রতি ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বিশ্বে ভ্যাকসিন সংকট আরও বেড়েছে। 

বিশ্বের যেসব দেশে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব ছিল সেখানে এখন ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে চীন এবং রাশিয়া । পাশাপাশি সেখানকার স্থানীয়দেরকেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা। আর এভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে পশ্চিমা প্রভাব কমাতে চাইছে চীন ও রাশিয়া। এই দুই দেশই একটি দীর্ঘমেয়াদি খেলা খেলছে।  বিশ্বে নিজেদের সম্মান বাড়ানো ছাড়াও, চীন ও রাশিয়ার বিশ্বস্ত বন্ধুদেশগুলোকে ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে দিচ্ছে। আবার এর মাধ্যমে কিছু কিছু দেশের সমর্থনও আদায় করে নিচ্ছে।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন বলিভিয়ায় পাঠানোর পরই সেখানকানকার সরকারের সঙ্গে কর্মকর্তারা বিরল মৃত্তিকার উত্তোলন এবং পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।

এদিকে কম্বোডিয়া এবং লাওসকে ভ্যাকসিন দিয়েছে চীন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনকে সমর্থন দেওয়ায় এই দুই দেশের প্রতি উদারতা দেখিয়েছে চীন।  

বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন দিয়ে দাপট দেখালেও নিজেদের ঘরে তেমনটি দেখাতে পারছে না চীন ও রাশিয়া। বিশ্লেষকরা মনে করেন,  চীনের বিশাল জনসংখ্যা দেশটির ভ্যাকসিন কার্যক্রমে বাধা তৈরি করতে পারে। এদিকে চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মাত্র ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ । ব্রাজিলে ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ও চূড়ান্ত ট্রায়ালে এমনটি দেখা গেছে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একটি করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৫০ শতাংশের বেশি হতে হবে।

এদিকে রাশিয়াতে  ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা নিয়ে জনগণের সংশয় থাকায় এবং  উৎপাদন কম হওয়ায় দেশটিতে ভ্যাকসিন কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে।  দুই দেশই দিনে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে পারছে। তবে এই সংখ্যাটি ব্রিটেন, ফ্রান্সের চেয়ে তিনগুণ বেশি এবং যুক্তরাষ্টের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ধারণা করছে, রাশিয়া ২০২২ সালের মধ্যে নিজেদের সব জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারবে। তবে সব জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে চীনের আরও সময় লাগবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত