Ajker Patrika

মূল্যবৃদ্ধিতে রোজায় ভুগছে সারা বিশ্বের মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৬: ৫২
মূল্যবৃদ্ধিতে রোজায় ভুগছে সারা বিশ্বের মানুষ

কোভিড-১৯ মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ঘটনাগুলোর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া। বিশ্বের দক্ষিণ অংশের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রভাব বেশি পড়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে মূল্যবৃদ্ধি এবং পণ্য সরবারেহের ঘাটতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঐতিহ্যবাহী রমজান উদ্‌যাপনে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মুসলিমের ওপর প্রভাব ফেলছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৭৯ দেশের ৩৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ চরমভাবে খাদ্য অনিশ্চয়তায় ছিল এবং ১৪ কোটি মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। ২০২৩ সালেও এই সংখ্যা অপরিবর্তনীয় থাকবে। এশিয়া ও আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ অপুষ্টির শিকার।

ডব্লিউএফপির অর্থনীতিবিদ ফ্রেডেরিক গ্রেব আল জাজিরাকে বলেন, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পরিবারগুলোকে অন্য পণ্য ও পরিষেবায় ব্যয় কমাতে বাধ্য করছে। গরিবদের আয়ের অর্ধেকের বেশিই চলে যায় খাদ্যে।

এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য ও পানীয়র উচ্চমূল্যের কারণে খেজুর, কেক, বিস্কুট ও চিনিযুক্ত শরবতের মতো রমজানের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোতে কি মুসলিমরা খরচ কমাতে বাধ্য হবে, নাকি এসবের বদলে অন্য সস্তা খাবার খাবে? বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের জীবনযাত্রার ব্যয়ে সংকট কেমন? এর সামাজিক পরিণতি কী হতে পারে? দাতব্য সংস্থাগুলো কতটুকু সাহায্য করতে পারে?

সংক্ষেপে এর উত্তরে দাতব্য সংস্থা, সম্প্রদায়ের লোকজন ও মুসলিম পরিবারগুলো বলছে, খাদ্যপণ্যে উচ্চমূল্যে বিপর্যস্ত দেশগুলোর অনেক লোক রমজানের ঐতিহ্য উদ্‌যাপন করতে পারবে না। খাবার খাওয়া থেকে উপহার কেনা, সবকিছু থেকেই হয়তো তারা বঞ্চিত হবে। সাহায্যের বর্ধিত চাহিদা মোকাবিলায় দাতব্য সংস্থাগুলো লড়াই করছে। তবে এই সংকট পবিত্র রমজানে অপ্রত্যাশিত উপায়ে সম্প্রদায়কে একত্র করতে পারে। 

মধ্যপ্রাচ্য: ‘মানুষের কাছে আর অর্থ নেই’ 
বৈশ্বিক প্রভাব ছাড়াও যুদ্ধ, খরা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। এক যুগ আগে নৃশংস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এর মধ্যে গত মাসে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুতে জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গত মাসে তুরস্কের মূল্যস্ফীতি ৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

মিসরে ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৩২ শতাংশে পৌঁছায়। রমজান উপলক্ষে দেশটির সরকার ৩০ শতাংশ ছাড়ে গরিবদের কাছে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোয়ও মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা লেবাননের। চার বছর ধরে দেশটি চরম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটে ভুগছে। গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ১২৩ শতাংশে পৌঁছায়। সেখানে কাজ করা দাতব্য সংস্থা এএনইআরএ বলছে, দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষের কাছে রমজানের ইফতার অপ্রত্যাশিত হবে।

আরেক সংস্থা কেয়ার লেবাননের মুখপাত্র প্যাট্রিসিয়া খোদের বলেন, ‘মানুষের কাছে আর অর্থ নেই।

দাতব্য সংস্থার কাছ থেকে খাবার না পেলে তারা প্রতিবেশীর কাছ থেকে চাল ধার নেয়।’ 

এশিয়া: ‘আমার আয় যথেষ্ট নয়’ 
পাকিস্তানের প্রায় ২০ কোটির বেশি মানুষ ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে বিপর্যস্ত। গত ফেব্রুয়ারিতে ৫০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চে পৌঁছায়। গত বছর বন্যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঋণ সংকটের মধ্যে থাকা দেশটিতে তাই চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। ইসলামাবাদের ইলেকট্রিশিয়ান ৪৫ বছরের বুরহান জানান, তাঁর ছয় সন্তানকে দিনে অন্তত এক বেলা খাবার দিতে পারলেও তিনি কৃতজ্ঞ হবেন। তিনি এখন সরকারের ভর্তুকি দেওয়া আটার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। বুরহান বলেন, ‘আমার আয় যথেষ্ট নয়। বাসাভাড়া ও ইউটিলিটি দিতেই হিমশিম খাচ্ছি।’

শুধু পাকিস্তান নয়, এশিয়ার অন্যান্য অংশেও এই সংগ্রাম চলছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ রমজানে তাদের কেনাকাটার খরচ কমানোর পরিকল্পনা করছে বলে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। ৪৩ শতাংশ বলছে, তারা উপহার কেনার খরচ কমাবে।

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে থাকলেও দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের রমজান উদ্‌যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ডব্লিউএফপি তাদের জন্য সহায়তার বাজেট কমিয়েছে। 

আফ্রিকা: ‘অনেকে তিন বেলা খাবার পায় না’
কেনিয়ায় ১৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশটির মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। কমিউনিটি গ্রুপ কেনিয়া মুসলিম ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ জুমা নগাও বলেন, পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় অনেক কেনিয়ান দিনে তিন বেলা খাবার পায় না। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক ব্যবসায়ী এবার জাকাত দিতে পারবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত