Ajker Patrika

ইরান চায় পানি, তালেবান মারে গুলি

আপডেট : ০২ জুন ২০২৩, ২১: ৩৩
ইরান চায় পানি, তালেবান মারে গুলি

গুলিটি কে আগে মেরেছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ইরানের সেনাদের অভিযোগ-পানি নিয়ে বিরোধের জেরে সম্প্রতি আফগান সীমান্তে তালেবান সেনাদের গুলিতে তাদের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। ইরানি সেনাদের গুলিতে হতাহতের অভিযোগ করেছে তালেবান সেনারাও। 

আফগানিস্তানের বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের সুসম্পর্ক থাকলেও হেলমান্দ নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে এখন তিক্ততা চলছে। সাম্প্রতিক গোলাগুলির ঘটনা তার বড় প্রমাণ। 

হেলমান্দ নদীর পানি দুই দেশের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত থেকে সাড়ে ১১ শ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির উৎপত্তি হয়েছে। পরে তা দেশটির মরুভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হামুন হ্রদে গিয়ে মিশেছে। 

হামুন হ্রদটি আফগানিস্তান ও ইরান দুই দেশের সীমান্তজুড়ে বিস্তৃত। ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশাল এই হ্রদ ওই অঞ্চলের মিঠা পানির অন্যতম উৎস। অঞ্চলটির কৃষি, জীবনযাত্রা এবং বাস্তুতন্ত্র এই হ্রদটিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইরানের কাছে হামুন হ্রদের পানি বর্তমানে জীবন-মরণ প্রশ্ন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রদটি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। কারণ হেলমান্দ নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে এর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে আফগানিস্তান। 

জানা যায়, হেলমান্দ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৭৩ সালেই দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু প্রায় সময়ই এই চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হলে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। 

ইরানের অভিযোগ-বেশ কয়েক বছর ধরে পানির ন্যায্য অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করছে আফগান কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৩ সালের চুক্তিতে যে পরিমাণ পানি দেওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে বর্তমানে অনেক কম পানি পাচ্ছে তারা। নদীর ওপর আফগানদের বাধ নির্মাণ এবং এই পানি শুধু নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহারের মানসিকতাই এর পেছনে দায়ী বলে মনে করছে ইরান। 

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত তাসনিম নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হাসান কাজেমি কোমি অভিযোগ করেন, গত বছর যে পরিমাণ পানি পাওয়ার কথা ছিল তার মাত্র ৪ ভাগ পেয়েছে ইরান। 

তবে আফগান কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলেছে, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং যথেষ্ট বৃষ্টি না হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। দুই দেশের মধ্যে বড় কোনো ঝামেলাও নেই। তা ছাড়া আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও পশ্চিমা শক্তিকে বিদায় করতে বিগত বছরগুলোতে ইরানের বিপুল সমর্থন পেয়ে এসেছে তালেবানেরা। এ ছাড়া আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকদের সঙ্গে ইরানের সুসম্পর্ক রাখার আরেকটি বড় কারণই হলো-হামুন হ্রদের পানি। 

কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ক্ষমতায় আসার পরই পানি নিয়ে ইরানকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে তালেবানরা। তাদের এমন মনোভাব ইরানের পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর ফলে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনার পাশাপাশি ওই অঞ্চলের মানুষের ক্ষোভও দিন দিন বাড়ছে। 

গত ২৯ মে ইরানের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রিভ্যুলিউশনারি গার্ডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ। তিনি জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে-ইরানের কিছু মানুষ মনে করেন-পানির জন্য আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। 

তবে এ ধরনের পরিস্থিতি যুদ্ধ নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত বলে মনে করেন হাজিজাদেহ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত