অনলাইন ডেস্ক
দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাঁদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট-বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।
গত ২৪ জুন ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) ঘোষণা দেয়, বিহার রাজ্যে ৮ কোটির কাছাকাছি সব ভোটারকেই আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন করে ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার সমান।
নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে ভোটাধিকার হারাবেন তাঁরা এবং ইসিআইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের ‘সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিক’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনকি তাঁদের জেল বা দেশ থেকে বহিষ্কারাদেশের মুখেও পড়তে হতে পারে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অক্টোবর বা নভেম্বরে হওয়ার কথা।
এই পদক্ষেপকে অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) পেছনের দরজা দিয়ে বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অতীতে ‘অবৈধ অভিবাসী’ শনাক্ত ও বহিষ্কারের অজুহাতে এনআরসি চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এল, যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মূলত বাংলাভাষী হাজার হাজার মুসলিমকে ‘বাংলাদেশি’ অভিবাসী সন্দেহে আটক করে অনেককেই ভারতে থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আল জাজিরা ইসিআইকে এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে কমিশন এখনো কোনো জবাব দেয়নি।
ভারতের মাথাপিছু আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এখানকার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তবে দেশটির তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য হওয়ায় বিহার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষেত্র। ২০০৫ সাল থেকে রাজ্যটিতে বিজেপি ও আঞ্চলিক দল জনতা দলের (ইউনাইটেড) জোট বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় রয়েছে। যদিও মাঝেমধ্যে বিরোধী জোটগুলোরও শাসন দেখা গেছে।
এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম বিভ্রান্তি, আতঙ্ক ও দলিলপত্র জোগাড় করার হুলুস্থুল শুরু হয়েছে। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ বলছে, এই অল্প সময়ে এত বিশালসংখ্যক মানুষের নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল সম্ভব নয়। ফলে বহু বৈধ ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তাদের বিহার মিত্র রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) রোববার বিহারে বন্ধের ডাক দিয়েছে। প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বিহারের রাজধানী পাটনায় অবস্থান করছেন।
বিরোধীদলীয় নেতারা ও নাগরিক সমাজের একাধিক ব্যক্তি এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এই উদ্যোগ বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার এই মামলাগুলো শোনার কথা আদালতের।
ক্ষমতাসীন দল বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক মুসলিম অভিবাসী ভারতে ঢুকছে বলে দাবি করে আসছে এবং ইসিআইয়ের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। দলটি চাইছে, দেশজুড়ে একইভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হোক। আল জাজিরা বিজেপির মুখপাত্র অনিল বলুনির এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, এই পদক্ষেপ ভারতের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিয়ে গভীর সংকট তৈরি করতে পারে। ২৪ জুনের আদেশে ইসিআই বলেছে, ‘কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তি যেন ভোটার তালিকায় না থাকে’ তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। শহরায়ণ, অভিবাসন, নতুন ভোটার, মৃত ভোটার এবং বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়গুলো এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এর আগে, ২০০৩ সালে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিতই তালিকা হালনাগাদ হয়েছে, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগেও তা করা হয়েছিল। ইসিআই জানিয়েছে, যাঁরা ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় ছিলেন, তাঁদের শুধু পুনরায় ফরম জমা দিলেই চলবে। তবে ২০০৩ সালের পর যাঁরা তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য স্বপ্রমাণসহ নথিপত্র, এমনকি বাবা-মায়ের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে।
ইসিআইয়ের হিসাবে, প্রায় ৭৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ২৯ মিলিয়ন নাগরিককে কেবল যাচাই করতে হবে। কিন্তু স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা ৪৭ মিলিয়নের বেশি হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ইসিআইয়ের কর্মকর্তারা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের একটি ফর্ম দেবেন। এরপর ভোটারদের সেই ফর্মে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। ১ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং বাদ পড়া ব্যক্তিদের আপত্তি জানানোর জন্য আরও এক মাস সময় দেওয়া হবে।
ভারতীয় থিংক ট্যাংক অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের প্রতিষ্ঠাতা জগদীপ চোকার বলেন, ‘২০০৩ সালের পর যাঁরা ভোটার হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখায় এই পদক্ষেপ। তাহলে কি ইসিআই বলছে, বিহারে ২০০৩ সালের পর যত নির্বাচন হয়েছে, সবই প্রশ্নবিদ্ধ?’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিশালসংখ্যক মানুষের সঙ্গে এক মাসে দুবার যোগাযোগ করাই তো এক মহাযজ্ঞ। অথচ এই প্রক্রিয়ার আগে কোনো জনপরামর্শ করা হয়নি।’
টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের সাবেক অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এত বড় একটা সিদ্ধান্ত গোপনে, পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে—এটা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।’
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, লাখ লাখ বৈধ ভোটার নথি দেখাতে না পারায় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। এতে ভারতের গণতন্ত্র বড়সড় এক সংকটে পড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ভোটার শনাক্তকরণ নথি হিসেবে আধার কার্ড, যা ভারত সরকারের দেওয়া একটি বিশেষ পরিচয়পত্র, কিংবা তাদের নিজেদের জারি করা ভোটার আইডি কার্ডও গ্রহণ করবে না। অথচ, এত দিন এই কার্ডগুলো ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এর বদলে ভোটারদের ১১ ধরনের নির্ধারিত নথির যেকোনো একটি জমা দিতে বলা হয়েছে যেমন—জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, বন অধিকার সনদ কিংবা রাজ্য সরকার প্রদত্ত শিক্ষা সনদ।
কিন্তু বিহার ভারতের সবচেয়ে কম সাক্ষরতার রাজ্য। এখানে সাক্ষরতার হার মাত্র ৬২ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় ৭৩ শতাংশ। বিহার সরকারের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, রাজ্যের মাত্র ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষ দশম শ্রেণি পাস। ফলে শিক্ষা সনদ রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। একইভাবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিহারে জন্মনিবন্ধনের হারও অন্যতম সর্বনিম্ন। এখানে ২৫ শতাংশ জন্ম এখনো নিবন্ধিত নয়। অর্থাৎ, এক-চতুর্থাংশ মানুষের পক্ষে জন্ম সনদ পাওয়া সম্ভব নয়।
অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, এটা আসলে রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। যাঁরা বৈধ নাগরিক, তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র পালন করতে পারেনি। তাঁর মন্তব্য, ‘যদি রাষ্ট্রই এসব নথি বিতরণে অক্ষম হয়, তাহলে জনগণকে শাস্তি দেওয়া যায় না।’
ইসিআইয়ের সময় নির্ধারণ নিয়েও সমালোচনা আছে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিহারে বর্ষা চলে আর বর্ষার বন্যা প্রায় প্রতিবছরই ভয়াবহ হয়। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বিহারের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাপ্রবণ। প্রতি বছর ভারতের মোট বন্যায় ক্ষতির ৩০-৪০ শতাংশ হয় বিহারেই। গত বছর বিহারে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই যে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো, সেখানেই নথিপত্র কম থাকে, কারণ বছরের পর বছর বন্যায় গোটা গ্রাম ধুয়ে যায়।’
এ ছাড়া, ইসিআইয়ের এই উদ্যোগে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদ্ধতিতে এক মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জগদীপ চোকার। তিনি বলেন, ‘দেশের গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ভোটাধিকার নির্ধারণে মূল শর্ত ছিল জন্ম তারিখ, কিন্তু এখন তা পরিবর্তন করে জন্মস্থানও চাওয়া হচ্ছে।’
ইসিআই স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হলেও তাদের এই পদক্ষেপ বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকে। গত বছর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর থেকেই বিজেপি বলছে, রোহিঙ্গা ও তথাকথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঢল ভারতে জনমিতিক কাঠামো পাল্টে দিয়েছে। এসব অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দায়িত্বরত সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন, আর শাহ মোদির ঘনিষ্ঠ।
মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড কিংবা দিল্লি—মোদি ও বিজেপির নেতারা প্রায় প্রতিটি রাজ্য নির্বাচনে এই অভিযোগ তুলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজেপি নেতৃত্ব ইসিআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ তোলেন—রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিকেরা বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। যদিও ভারতের আইন অনুযায়ী কেবল ভারতীয় নাগরিকেরাই ভোট দিতে পারেন।
ইসিআই এই অভিযোগ মেনে নিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু করলেও তারা কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করেনি। ফলে সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে যে, এসব বিজেপিরই চাল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বিহারের বাসিন্দা অপূর্বানন্দ বলেন, ‘ইসিআই এখনো বলতে পারেনি, কেন এই সংশোধন জরুরি। তারা কোনো উপাত্তও দেখাতে পারেনি। ফলে এটা আর কেবল প্রশাসনিক বা নিরপেক্ষ সাংবিধানিক কাজ নেই, এর রাজনীতি অত্যন্ত সন্দেহজনক।’
অন্যদিকে বিজেপি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে এবং চায় সারা দেশে তা চালু হোক। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই ভোটার যাচাইকরণ কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক শ্রেণি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। কারণ তাঁদের মধ্যে পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ বা জন্ম সনদ খুব কম জনেরই থাকে। এই শ্রেণিগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিরোধী দল আরজেডি ও কংগ্রেসকে সমর্থন করে।’ সরল ভাষায় বললে, তাঁরা যদি ভোট না দিতে পারেন, তাহলে বিজেপিরই লাভ।
গত কয়েক মাসে মোদি সরকার ও বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে তথাকথিত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের শনাক্ত ও বহিষ্কারের অভিযান জোরদার হয়েছে। অন্তত আটটি রাজ্যে শত শত মানুষকে ধরে আটক করা হয়েছে। এই অভিযান বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরই কেন্দ্রীভূত। হাজার হাজার সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তাড়াহুড়ো করে তাদের বহিষ্কার করেছে। অনেক ভারতীয় মুসলমান নাগরিকও এই অভিযানের শিকার হয়েছে।
অনেকে বলছেন, এটি আসলে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তৈরির মোদি সরকারের পূর্বপরিকল্পনারই অংশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই এনআরসি তৈরি করা হবে এবং ‘প্রত্যেক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’
এই উদ্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলমানরা। কারণ, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিষ্টানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সহজ করা হলেও মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে পাস হওয়া এই আইন মোদি সরকার গত বছরের মার্চে কার্যকর করেছে।
বিহারে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ। এ বিষয়ে অপূর্বানন্দ বলেন, ‘এই যে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে যা হচ্ছে, এটা আসলে এনআরসি কার্যকর করারই আরেক রূপ।’ একই বিষয়ে জগদীপ চোকারের সংস্থাই প্রথম এই উদ্যোগ বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। তিনি বলছেন, এর ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। তাঁর মতে, ‘এভাবে চললে রাজ্যের অর্ধেক মানুষের ভোটাধিকারই বাতিল হয়ে যেতে পারে।’
দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাঁদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট-বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।
গত ২৪ জুন ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) ঘোষণা দেয়, বিহার রাজ্যে ৮ কোটির কাছাকাছি সব ভোটারকেই আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন করে ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার সমান।
নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে ভোটাধিকার হারাবেন তাঁরা এবং ইসিআইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের ‘সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিক’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনকি তাঁদের জেল বা দেশ থেকে বহিষ্কারাদেশের মুখেও পড়তে হতে পারে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অক্টোবর বা নভেম্বরে হওয়ার কথা।
এই পদক্ষেপকে অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) পেছনের দরজা দিয়ে বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অতীতে ‘অবৈধ অভিবাসী’ শনাক্ত ও বহিষ্কারের অজুহাতে এনআরসি চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এল, যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মূলত বাংলাভাষী হাজার হাজার মুসলিমকে ‘বাংলাদেশি’ অভিবাসী সন্দেহে আটক করে অনেককেই ভারতে থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আল জাজিরা ইসিআইকে এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে কমিশন এখনো কোনো জবাব দেয়নি।
ভারতের মাথাপিছু আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এখানকার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তবে দেশটির তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য হওয়ায় বিহার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষেত্র। ২০০৫ সাল থেকে রাজ্যটিতে বিজেপি ও আঞ্চলিক দল জনতা দলের (ইউনাইটেড) জোট বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় রয়েছে। যদিও মাঝেমধ্যে বিরোধী জোটগুলোরও শাসন দেখা গেছে।
এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম বিভ্রান্তি, আতঙ্ক ও দলিলপত্র জোগাড় করার হুলুস্থুল শুরু হয়েছে। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ বলছে, এই অল্প সময়ে এত বিশালসংখ্যক মানুষের নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল সম্ভব নয়। ফলে বহু বৈধ ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তাদের বিহার মিত্র রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) রোববার বিহারে বন্ধের ডাক দিয়েছে। প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বিহারের রাজধানী পাটনায় অবস্থান করছেন।
বিরোধীদলীয় নেতারা ও নাগরিক সমাজের একাধিক ব্যক্তি এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এই উদ্যোগ বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার এই মামলাগুলো শোনার কথা আদালতের।
ক্ষমতাসীন দল বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক মুসলিম অভিবাসী ভারতে ঢুকছে বলে দাবি করে আসছে এবং ইসিআইয়ের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। দলটি চাইছে, দেশজুড়ে একইভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হোক। আল জাজিরা বিজেপির মুখপাত্র অনিল বলুনির এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, এই পদক্ষেপ ভারতের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিয়ে গভীর সংকট তৈরি করতে পারে। ২৪ জুনের আদেশে ইসিআই বলেছে, ‘কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তি যেন ভোটার তালিকায় না থাকে’ তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। শহরায়ণ, অভিবাসন, নতুন ভোটার, মৃত ভোটার এবং বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়গুলো এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এর আগে, ২০০৩ সালে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিতই তালিকা হালনাগাদ হয়েছে, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগেও তা করা হয়েছিল। ইসিআই জানিয়েছে, যাঁরা ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় ছিলেন, তাঁদের শুধু পুনরায় ফরম জমা দিলেই চলবে। তবে ২০০৩ সালের পর যাঁরা তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য স্বপ্রমাণসহ নথিপত্র, এমনকি বাবা-মায়ের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে।
ইসিআইয়ের হিসাবে, প্রায় ৭৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ২৯ মিলিয়ন নাগরিককে কেবল যাচাই করতে হবে। কিন্তু স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা ৪৭ মিলিয়নের বেশি হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ইসিআইয়ের কর্মকর্তারা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের একটি ফর্ম দেবেন। এরপর ভোটারদের সেই ফর্মে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। ১ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং বাদ পড়া ব্যক্তিদের আপত্তি জানানোর জন্য আরও এক মাস সময় দেওয়া হবে।
ভারতীয় থিংক ট্যাংক অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের প্রতিষ্ঠাতা জগদীপ চোকার বলেন, ‘২০০৩ সালের পর যাঁরা ভোটার হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখায় এই পদক্ষেপ। তাহলে কি ইসিআই বলছে, বিহারে ২০০৩ সালের পর যত নির্বাচন হয়েছে, সবই প্রশ্নবিদ্ধ?’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিশালসংখ্যক মানুষের সঙ্গে এক মাসে দুবার যোগাযোগ করাই তো এক মহাযজ্ঞ। অথচ এই প্রক্রিয়ার আগে কোনো জনপরামর্শ করা হয়নি।’
টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের সাবেক অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এত বড় একটা সিদ্ধান্ত গোপনে, পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে—এটা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।’
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, লাখ লাখ বৈধ ভোটার নথি দেখাতে না পারায় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। এতে ভারতের গণতন্ত্র বড়সড় এক সংকটে পড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ভোটার শনাক্তকরণ নথি হিসেবে আধার কার্ড, যা ভারত সরকারের দেওয়া একটি বিশেষ পরিচয়পত্র, কিংবা তাদের নিজেদের জারি করা ভোটার আইডি কার্ডও গ্রহণ করবে না। অথচ, এত দিন এই কার্ডগুলো ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এর বদলে ভোটারদের ১১ ধরনের নির্ধারিত নথির যেকোনো একটি জমা দিতে বলা হয়েছে যেমন—জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, বন অধিকার সনদ কিংবা রাজ্য সরকার প্রদত্ত শিক্ষা সনদ।
কিন্তু বিহার ভারতের সবচেয়ে কম সাক্ষরতার রাজ্য। এখানে সাক্ষরতার হার মাত্র ৬২ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় ৭৩ শতাংশ। বিহার সরকারের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, রাজ্যের মাত্র ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষ দশম শ্রেণি পাস। ফলে শিক্ষা সনদ রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। একইভাবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিহারে জন্মনিবন্ধনের হারও অন্যতম সর্বনিম্ন। এখানে ২৫ শতাংশ জন্ম এখনো নিবন্ধিত নয়। অর্থাৎ, এক-চতুর্থাংশ মানুষের পক্ষে জন্ম সনদ পাওয়া সম্ভব নয়।
অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, এটা আসলে রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। যাঁরা বৈধ নাগরিক, তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র পালন করতে পারেনি। তাঁর মন্তব্য, ‘যদি রাষ্ট্রই এসব নথি বিতরণে অক্ষম হয়, তাহলে জনগণকে শাস্তি দেওয়া যায় না।’
ইসিআইয়ের সময় নির্ধারণ নিয়েও সমালোচনা আছে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিহারে বর্ষা চলে আর বর্ষার বন্যা প্রায় প্রতিবছরই ভয়াবহ হয়। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বিহারের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাপ্রবণ। প্রতি বছর ভারতের মোট বন্যায় ক্ষতির ৩০-৪০ শতাংশ হয় বিহারেই। গত বছর বিহারে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই যে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো, সেখানেই নথিপত্র কম থাকে, কারণ বছরের পর বছর বন্যায় গোটা গ্রাম ধুয়ে যায়।’
এ ছাড়া, ইসিআইয়ের এই উদ্যোগে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদ্ধতিতে এক মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জগদীপ চোকার। তিনি বলেন, ‘দেশের গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ভোটাধিকার নির্ধারণে মূল শর্ত ছিল জন্ম তারিখ, কিন্তু এখন তা পরিবর্তন করে জন্মস্থানও চাওয়া হচ্ছে।’
ইসিআই স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হলেও তাদের এই পদক্ষেপ বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকে। গত বছর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর থেকেই বিজেপি বলছে, রোহিঙ্গা ও তথাকথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঢল ভারতে জনমিতিক কাঠামো পাল্টে দিয়েছে। এসব অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দায়িত্বরত সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন, আর শাহ মোদির ঘনিষ্ঠ।
মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড কিংবা দিল্লি—মোদি ও বিজেপির নেতারা প্রায় প্রতিটি রাজ্য নির্বাচনে এই অভিযোগ তুলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজেপি নেতৃত্ব ইসিআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ তোলেন—রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিকেরা বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। যদিও ভারতের আইন অনুযায়ী কেবল ভারতীয় নাগরিকেরাই ভোট দিতে পারেন।
ইসিআই এই অভিযোগ মেনে নিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু করলেও তারা কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করেনি। ফলে সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে যে, এসব বিজেপিরই চাল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বিহারের বাসিন্দা অপূর্বানন্দ বলেন, ‘ইসিআই এখনো বলতে পারেনি, কেন এই সংশোধন জরুরি। তারা কোনো উপাত্তও দেখাতে পারেনি। ফলে এটা আর কেবল প্রশাসনিক বা নিরপেক্ষ সাংবিধানিক কাজ নেই, এর রাজনীতি অত্যন্ত সন্দেহজনক।’
অন্যদিকে বিজেপি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে এবং চায় সারা দেশে তা চালু হোক। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই ভোটার যাচাইকরণ কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক শ্রেণি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। কারণ তাঁদের মধ্যে পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ বা জন্ম সনদ খুব কম জনেরই থাকে। এই শ্রেণিগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিরোধী দল আরজেডি ও কংগ্রেসকে সমর্থন করে।’ সরল ভাষায় বললে, তাঁরা যদি ভোট না দিতে পারেন, তাহলে বিজেপিরই লাভ।
গত কয়েক মাসে মোদি সরকার ও বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে তথাকথিত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের শনাক্ত ও বহিষ্কারের অভিযান জোরদার হয়েছে। অন্তত আটটি রাজ্যে শত শত মানুষকে ধরে আটক করা হয়েছে। এই অভিযান বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরই কেন্দ্রীভূত। হাজার হাজার সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তাড়াহুড়ো করে তাদের বহিষ্কার করেছে। অনেক ভারতীয় মুসলমান নাগরিকও এই অভিযানের শিকার হয়েছে।
অনেকে বলছেন, এটি আসলে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তৈরির মোদি সরকারের পূর্বপরিকল্পনারই অংশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই এনআরসি তৈরি করা হবে এবং ‘প্রত্যেক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’
এই উদ্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলমানরা। কারণ, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিষ্টানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সহজ করা হলেও মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে পাস হওয়া এই আইন মোদি সরকার গত বছরের মার্চে কার্যকর করেছে।
বিহারে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ। এ বিষয়ে অপূর্বানন্দ বলেন, ‘এই যে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে যা হচ্ছে, এটা আসলে এনআরসি কার্যকর করারই আরেক রূপ।’ একই বিষয়ে জগদীপ চোকারের সংস্থাই প্রথম এই উদ্যোগ বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। তিনি বলছেন, এর ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। তাঁর মতে, ‘এভাবে চললে রাজ্যের অর্ধেক মানুষের ভোটাধিকারই বাতিল হয়ে যেতে পারে।’
জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়। এই আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া র্যাপ গান, মিম এবং গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এখন এই মাধ্যমগুলোই হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে মূলধারার রা
১ দিন আগেমালয়েশিয়ার রাজনীতিতে এক দীর্ঘ ও বর্ণময় অধ্যায়ের সাক্ষী মাহাথির মোহাম্মদ। গতকাল ১০ জুলাই ১০০ বছর পূর্ণ করলেন তিনি। ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল এবং ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দুই দফায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ আজও দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
১ দিন আগেভারত-চীনের মধ্যে ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার (২১০০ মাইল) দীর্ঘ এক সীমান্ত। তবে সীমান্তের এই দৈর্ঘ্যও সুনির্দিষ্ট নয়। সীমান্তে নদী, হ্রদ আর বরফে ঢাকা পর্বত থাকায় এই হিসাবে প্রায় সময় গরমিল দেখা যায়। আর এর প্রভাবে উত্তেজনা বেড়ে যায় দুই দেশের মধ্যে। অনেক সময় সীমান্তে পাহারারত দুই দেশের সেনারা পড়ে...
২ দিন আগেউচ্চপ্রযুক্তির এই প্রতিযোগিতা কেবল যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বেই সীমাবদ্ধ নয়। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এখন উচ্চপ্রযুক্তি অস্ত্র কিনছে চীন থেকে। এসব অস্ত্রের মধ্যে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার ও সমুদ্রপথে ব্যবহারের জন্য উন্নত সেন্সর সজ্জিত যুদ্ধজাহাজ অন্যতম।
৩ দিন আগে