Ajker Patrika

পাকিস্তানে পাঠ্যক্রম নিয়ে যা করছে ইমরানের সরকার

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ৩৮
পাকিস্তানে পাঠ্যক্রম নিয়ে যা করছে ইমরানের সরকার

পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই—এটি হয়তো দেশটির হাতেগোনা কয়েকজন লোকই মানবেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলছে অনেক দিন ধরেই। চলতি বছরের শুরু থেকে তার কিছু নমুনাও দেখা গেছে। এবার তা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

ব্রিটিশ সাময়িকী ইকনোমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ ভারত, বাংলাদেশ ও ইরানের চেয়ে শিক্ষা র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। তবে আফগানিস্তানের চেয়ে একটু এগিয়ে আছে দেশটি। পাকিস্তানের ১৫ বছর বয়সী ৬০ শতাংশের কম শিশু পড়তে ও লিখতে পারে। দেশটিতে একজন শিক্ষার্থী গড়ে ৫ দশমিক ২ বছর স্কুলে উপস্থিত থাকে। আর বাংলাদেশে এই হার ৬ দশমিক ২ বছর, পাশাপাশি শিক্ষার হার ৭৪ শতাংশ।

পাকিস্তানে উচ্চবিত্তদের সন্তানেরা অভিজাত স্কুলে ইংরেজি শিক্ষা নেয়। পরে আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। আরেক দিকে দেশটির ২ কোটি ৩০ লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারে না। আর এর মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যাই বেশি।

এ ছাড়া পাকিস্তানের সরকারি স্কুলগুলোয় যেনতেনভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। তবে বেসরকারি মালিকানাধীন স্কুলগুলো এই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছে। আর পাকিস্তানের বেশির ভাগ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ বিভাজনকে ‘শিক্ষাগত বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন। এই বিভাজন থেকে পাকিস্তানকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

ইমরান খানের এই উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে যে প্রক্রিয়ায় তিনি এ সংকট দূর করার চেষ্টা করছেন, তা নিয়ে পাকিস্তানে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পাকিস্তান সরকার চলতি বছরের শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় একক জাতীয় পাঠ্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্রমে তা উচ্চবিদ্যালয়গুলোতেও চালু হবে। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, দেশের শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে এবং শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য এই পাঠ্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এর উদ্দেশ্য আরও বিস্তৃত। পাকিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সামাজিক ও জাতীয় সংহতিও একক জাতীয় পাঠ্যক্রম তৈরির একটি লক্ষ্য।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় এই পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। নতুন পাঠ্যক্রমের কারণে পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের বেশি বিষয়ে পড়তে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণ জ্ঞানের কথা। এ বিষয়টি ইংরেজির বদলে উর্দু ও অন্যান্য স্থানীয় ভাষায় পড়ানো হচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাকিস্তানের আইচিসন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। এটি দেশটির সবচেয়ে সম্মানজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের বিরোধী। এর আগে তিনি বলেছিলেন, যখন আপনি ইংরেজি শেখেন তখন পুরো সংস্কৃতি আপনি গ্রহণ করেন। তখন আপনি ওই নির্দিষ্ট সংস্কৃতির দাস হয়ে যান।

পাকিস্তানের অনেক স্কুলই একক জাতীয় পাঠ্যক্রম চালু করতে চাইছে না। স্থানীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রয়োগের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা সন্তুষ্ট নন। কারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাও চান যে তাঁদের সন্তানেরা ইংরেজি শিখুক এবং চাকরির বাজারে দাঁড়াতে পারুক। দেশটির জাতীয় পাঠ্যক্রম প্রণয়নকারী জাতীয় পরিষদের পরিচালক মরিয়ম চুঘতাই বলেন, এর উদ্দেশ্য ইংরেজি বাদ দেওয়া নয়, স্থানীয় ভাষাকে উন্নত করা। কেউ ইংরেজির গুরুত্ব অস্বীকার করছে না।

আরও অভিযোগ উঠেছে, এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে স্কুলগুলোয় ধর্মীয় শিক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সমালোচকেরা বলছেন, মাদ্রাসাকে স্কুলে পরিণত করার বদলে স্কুলগুলোকে মাদ্রাসায় পরিণত করছে ইমরান খানের সরকার। ইকনোমিস্টের নিবন্ধে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে নতুন একক পাঠ্যক্রম অমুসলিমদেরও ইসলামি শিক্ষা গ্রহণে বাধ্য করছে। নতুন পাঠ্যক্রমে মুসলিম খলিফাদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীকেই তা পড়তে হবে।  

যদিও পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা একটি দেশে ধর্ম শেখানোতে দোষের কিছু নেই।

লাহোরের শিক্ষাবিদ জাসির শাহবাজের মতে, শিশুরা কী পড়াশোনা করছে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কত শিশু আসলে পড়াশোনা করছে বা তারা পড়ে কী বুঝতে পারছে, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।

আগামী বছর থেকে পাকিস্তানের উচ্চবিদ্যালয়গুলোয় এই একক জাতীয় পাঠ্যক্রম চালু হবে। মরিয়ম চুঘতাই বলেন, সরকারের এই উদ্যোগের ফল পেতে সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, যে সময় আপনি একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন, ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু মানুষেরা তাতে ভয় পাবেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত