Ajker Patrika

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

সম্পাদকীয়
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ পণ্ডিত, বহু ভাষাবিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ, অভিধানকার ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের 
চব্বিশ পরগনার পেয়ারা গ্রামে।

ছোটবেলায় উর্দু, ফারসি ও আরবি এবং স্কুলে তিনি সংস্কৃত শেখেন। হাওড়া জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পাস করার পর প্রথমে হুগলি কলেজ এবং পরে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্স পাস করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এমএ পাস করেন। আইন বিষয়েও ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করার পর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্।

১৯২৮ সালে চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা করে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ধ্বনিতত্ত্বে মৌলিক গবেষণার জন্য প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। তবে ধর্মের কঠোরতার বাইরে গিয়ে নিজেকে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি ইসলামের প্রকৃত তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ-মাহফিলে বক্তৃতা করতেন।

ভাষাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র ছিল অবাধ বিচরণ। তিনি ১৮টি ভাষা জানতেন।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। দেশ বিভাগের অব্যবহিত পরে ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করলে এর প্রতিবাদে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রথম প্রস্তাবটির প্রতিবাদ করেন। ১৯৪৭ সালের ৩ আগস্ট আজাদ পত্রিকায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা’ নামে তিনি একটি প্রবন্ধ লেখেন।

ভাষা ও সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’, ফরাসি সরকার কর্তৃক ‘নাইট অব দ্য অর্ডারস অব আর্ট লেটার্স’ উপাধিতে ভূষিত হন।

‘জ্ঞানতাপস’ হিসেবে পরিচিত এ মানুষটি ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা উড়ে যাওয়া সেই বিজিবি সদস্য মারা গেছেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এখন হানিফ

সম্পাদকীয়
এখন হানিফ

পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।

২০০৫ সালে হানিফ বিরিয়ানির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি। অনেকে বলেন, কয়েক বছর হানিফের স্বাদে নাকি ভাটা পড়েছিল। এই কথা এখন ডাহা মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয় দোকানের ভিড়ভাট্টা দেখলেই। পুরান ঢাকার খ্যাতনামা সব বিরিয়ানির মধ্যে এখন হানিফ যে তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে, তা আর বলতে হয় না।

ছবি: জাহিদুল ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা উড়ে যাওয়া সেই বিজিবি সদস্য মারা গেছেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমার শৈশব ও নৈতিকতাবোধের ধারণা

সম্পাদকীয়
আমার শৈশব ও নৈতিকতাবোধের ধারণা

আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিল সব গরিব ঘরেরই ছেলে। আমাদের গ্রামে আলাদা কোনো বুর্জোয়া বা সামন্তসমাজ ছিল না। সেখানে বিশ থেকে ত্রিশ জন ভূস্বামী ছিল, যারা অবশ্য সব সময় একসঙ্গে থাকত। কিন্তু আমার বাবা ওদের থেকে পৃথক থাকতেন।

... আমি বাইরের মানুষ বলতে বাবার খামারে কাজ করা ওই গরিব মানুষদেরই দেখতাম। আমি হাইতিয়ানদের কুঁড়েঘরে যেতাম। হাইতিয়ানদের বাড়িতে ওদের সঙ্গে বসে একবার খাওয়ার জন্য আমি বেশ বকা খেয়েছিলাম। আমাকে ঠিক সামাজিকতার প্রশ্নে বকা দেওয়া হয়নি, বকা খেয়েছিলাম স্বাস্থ্যগত প্রশ্নে। আমার বাবা-মার শ্রেণির কোনো অহমবোধ ছিল না। তাদের ঠিক ভূস্বামী মানসিকতাও ছিল না।

আমার ভেতর নৈতিকতার ধারণা এসেছে আমার স্কুল এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে, আমার পরিবার থেকেও। খুব ছোটবেলা থেকেই আমাকে বলা হয়েছে কোনোভাবেই মিথ্যা কথা বলা যাবে না। আমার স্কুলের শিক্ষকেরাও তা-ই বলেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মার্ক্সীয় দর্শন বা নৈতিক আদর্শ থেকে বলেননি, বলেছেন ধর্মীয় নৈতিকতার দিক থেকে। তারা আমাকে শিখিয়েছেন কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। আমাদের সমাজে এইভাবে ধর্মীয় আবহ থেকে ঐতিহ্যগতভাবে সবাই নৈতিকতার শিক্ষা পায়। যদিও তাতে অনেক অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাও থাকে। ধীরে ধীরে আমার ভেতরে ভুল-শুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা জন্ম নিতে থাকে এবং বেশ কিছু তথাকথিত নৈতিকতাকে আমি ভঙ্গ করতে থাকি। ছোটবেলা থেকেই আমার যেমন নৈতিকতার শিক্ষার অভিজ্ঞতা হয়েছে, তেমনি নৈতিকতা ভঙ্গের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তথাকথিত নৈতিকতার নামে মানুষের অনেক অনৈতিক কাজ আমি দেখেছি।

সূত্র: শাহাদুজ্জামান কর্তৃক ফিদেল কাস্ত্রোর অনূদিত সাক্ষাৎকার। ‘কথা পরম্পরা’, পৃষ্ঠা-২২৩।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা উড়ে যাওয়া সেই বিজিবি সদস্য মারা গেছেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাঁড়িভর্তি তেহারি!

সম্পাদকীয়
হাঁড়িভর্তি তেহারি!

মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।

একই নামে ঢাকায় আরও বিরিয়ানির দোকান থাকলেও শর্ষের তেলে তৈরি মামুনের তেহারির স্বাদ পাওয়া যায় কেবল নাজিমুদ্দীন রোডের দুটি, নাজিরাবাজার ও এলিফ্যান্ট রোডের একটি করে শাখায়। মামুন বিরিয়ানি হাউসের নব্য সংযোজন গরু ও খাসির কাচ্চি কিংবা মোরগ পোলাও হলেও তেহারির সুঘ্রাণেই সেখানে ছুটে যান ভোজনরসিকেরা। পুরান ঢাকাবাসীর জন্য হোম ডেলিভারির বিশেষ সুবিধা দেয় এই রেস্তোরাঁটি। বিয়েশাদিতে তেহারির ‘ডেগ’ ভাড়া নেবেন? তা-ও সম্ভব।

ছবি: জাহিদুল ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা উড়ে যাওয়া সেই বিজিবি সদস্য মারা গেছেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রানি ভিক্টোরিয়া যেভাবে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ হয়ে উঠেছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ০১
ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!

তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।

রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।

ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।

এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।

১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।

এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।

চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?

রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।

মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।

এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!

তথ্যসূত্র: টাইম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা উড়ে যাওয়া সেই বিজিবি সদস্য মারা গেছেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত