Ajker Patrika

স্ত্রীর পাশে

সম্পাদকীয়
স্ত্রীর পাশে

১৯৮১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার কাজী মোতাহার হোসেন বাথরুমে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। ইন্টারনাল হ্যামারেজ হয়েছিল। শরীরের কিছু জায়গায় কালশিটে পড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে নেওয়া হলো। সেবাযত্ন চলল, কিন্তু আসলে তিনি তখন কোমায় চলে গেছেন। শুধু নিশ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া জীবনের কোনো লক্ষণ নেই।

এর আগে, ১৯ সেপ্টেম্বর শনিবার সেগুনবাগানের বাড়িতে তিনি যদুকে ডেকে বললেন, ‘আমাকে ওপরে নিয়ে চল। বড় ছেলের সঙ্গে কথা আছে আমার।’

বড় ছেলে কাজী আনোয়ার হোসেনের কাছে গিয়ে বললেন, ‘তোমার মা বনানী গোরস্থানে আছেন। সে আমাকে ডাকছে। ওইখানে আমার যাওয়া দরকার।’

কাজী আনোয়ার হোসেন বললেন, ‘আজ আমি একটু ব্যস্ত। মঙ্গলবার আপনাকে বনানী নিয়ে যাব।’

বিমর্ষ কাজী মোতাহার হোসেনের মুখ দেখে তাঁর পুত্রবধূ ফরিদা ইয়াসমিন বললেন, ‘তা কেন হবে? আব্বু আজ যেতে চাইছেন, আজই যাবেন। ড্রাইভার নিয়ে যাক, যদু তো সঙ্গে থাকবেই।’

১৯৭৫ সালে বনানী গোরস্থানে পাশাপাশি দুটো কবরের জায়গা কেনা হয়েছিল। তারই একটায় ছিলেন সাজেদা খাতুন। কবর জিয়ারত করে পাশের খালি জায়গা দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘কদিন পর আমি এখানে মাটির নিচে শুয়ে থাকব। আজ একটু ওপরেই শুয়ে দেখি, কেমন লাগে।’

সেখানেই মাটির ওপর তিনি শুয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। সন্ধ্যা হয়ে আসছে দেখে যদু আর ড্রাইভার মিলে তাঁকে জাগিয়ে, অনেক বলে-কয়ে বাড়ি নিয়ে এলেন।

৯ অক্টোবর পর্যন্ত অজ্ঞান অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ছিলেন। কোরবানির ঈদের দিন পিজি হাসপাতালে অনেকেই তাঁকে দেখতে গেলেন। সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ তিনি গায়ের চাদরটা একটু ওপরে টেনে তুলতে চেষ্টা করলেন। তারপর একটু কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইছিল ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পাশে তাঁকে সমাহিত করতে। কেউ চাইছিল নজরুলের পাশে। কেউ চাইছিল ফজলুল হকের পাশে তাঁর কবর হোক। কিন্তু অল্প কয়েক দিন আগে তিনি যে জায়গায় গিয়ে থাকবেন বলে ঘুরে এসেছিলেন, সেখানেই স্ত্রীর পাশে কবর হলো তাঁর।

সূত্র: যোবায়দা মির্যা, সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি, পৃষ্ঠা ১৪৪-১৪৬ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত