Ajker Patrika

এক জয়িতার গল্প

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর, মানিকগঞ্জ
এক জয়িতার গল্প

নাম তাঁর মল্লিকা ইয়াসমিন। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের জাবরা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। সামাজিক বাধা, অভাব, অনটন ও বঞ্চনার গ্রাস থেকে বেরিয়ে এসে হয়েছেন মানিকগঞ্জের সেরা জয়িতা। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রতিটি ধাপেই তিনি পুরস্কৃত হন। 

১৫ বা ১৬ বছরে বিয়ে হয়ে গেলে একটি কিশোরীর গৃহবধূ হওয়া ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। মল্লিকা ইয়াসমিনের জীবনেও তা–ই হয়েছিল। বৈবাহিক সূত্রে এখন তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা গ্রামের অধিবাসী হলেও তাঁর বাবার বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি (ঢাকাইয়াপট্টি)। বাবা আব্দুর রব ভূঁইয়া আর মা আনোয়ারা বেগম। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় বেশ মেধাবী ছিলেন মল্লিকা।

১৯৯৩ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েই বসতে হয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত মো. ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে যান মল্লিকা এবং এইচএসসি পাস করেন। তবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিএ পরীক্ষা আর দিতে পারেননি তিনি। তার আগেই কোলজুড়ে আসে সন্তান। এর মধ্যে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে ঢাকা থেকে স্বামীর গ্রামের বাড়ি জাবরায় চলে আসেন তিনি পরিবারসহ। ফরিদুল ও মল্লিকা দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে বড় মো. মাইনুল ইসলাম নাবিল সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। ছোট ছেলেও সে প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। 

এ সময় সংসারে শুরু হয় অর্থনৈতিক টানাপোড়েন। মূলত সংসার বাঁচাতে মল্লিকা একটি পথ খুঁজছিলেন তখন। সে জন্য পোশাক তৈরি, পোশাকে রং ও ডিজাইন করার ওপর সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্স করেন তিনি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হাতে-কলমে শিক্ষাও নেন। এরপর ২০০৮ সালে গ্রামে ছোট পরিসরে ‘অ্যাটায়ার ফ্যাশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন মল্লিকা। কাপড় কিনে নতুন ডিজাইনে পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, ফতুয়া, শাড়ি, নকশিকাঁথাসহ শিশুদের পোশাক তৈরি, ড্রয়িং, ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টের শার্ট দিয়ে বাজারজাত শুরু করেন মল্লিকা। এখন এখানে কয়েকজন অভিজ্ঞ কারিগরসহ কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ জন গৃহবধূর। 

বাহারি ডিজাইনে দেশীয় স্টাইল আর পোশাকের মান দেখে ধীরে ধীরে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে মল্লিকার। দেশের বিখ্যাত কয়েকটি ফ্যাশন হাউসে নিয়মিত পোশাক সরবরাহ করতে শুরু করেন তিনি। ফলে ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। কিন্তু অল্প দামে গার্মেন্টস পণ্যের আধিপত্য আর করোনার ধকলে খানিক পিছিয়ে পড়েন মল্লিকা; কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। পরিবারের সহযোগিতায় টিকে গেছেন তিনি।

দেড় লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন মল্লিকা ইয়াসমিন। সে টাকায় ১৬ বছর ধরে পোশাকের ব্যবসার পাশাপাশি করেছেন দুগ্ধ খামার। সে খামারে আছে ১০টি গরু। আছে দেশীয় আদি ঐতিহ্যের পিঠা-পুলির ব্যবসা। 

মল্লিকা ইয়াসমিন এখন এলাকায় খুবই পরিচিত নারী উদ্যোক্তা। তিনি যে শুধু ব্যবসাই করছেন, তা নয়। বুটিকস, দরজি, খাবার, নকশিকাঁথাসহ বিভিন্ন হাতের কাজে শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সময় বের করে এলাকায় বাল্যবিবাহ ও শিশুদের শিক্ষা সুরক্ষা বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করছেন। এসবের পুরস্কার হিসেবে তিনি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জেলার সেরা জয়িতার পুরস্কার পেয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত