Ajker Patrika

অন্তঃসত্ত্বা নারী ও নবজাতককে কারাগারে দেখতে চান না ব্রিটিশরা

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০: ৪৫
অন্তঃসত্ত্বা নারী ও নবজাতককে কারাগারে দেখতে চান না ব্রিটিশরা

ব্রিটেনের বেশির ভাগ মানুষ অন্তঃসত্ত্বা নারী ও নবজাতকের মায়েদের জেলে না পাঠানোর পক্ষে। ‘লেভেল আপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চালানো জরিপের তথ্য তুলে ধরে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। 

চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যাম্পেইন গ্রুপ লেভেল আপ এবং নারীদের জন্য দাতব্য সংস্থা ওয়ান স্মল থিংয়ের পক্ষে জরিপটি পরিচালনা করেছে সার্ভেশন। 

জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ মানুষ চান না গর্ভবতী নারী ও নবজাতকের মায়েদের বিচারকেরা জেলে পাঠান। তাঁদের মতে, কমিউনিটিভিত্তিক বিকল্প না থাকলে শুধু সে ক্ষেত্রে এটি বিবেচনা করা যেতে পারে। মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ এই মতের বিরোধিতা করেন। তবে ১৯ শতাংশ মানুষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। 

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করেন, একজন মাকে শাস্তি দেওয়ার সময় একটি শিশুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো মূল বিবেচ্য হওয়া উচিত। যদিও শাস্তি দেওয়ার সময় বিচারকদের গর্ভাবস্থা বা মাতৃত্বের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে, আইনে এমন কোনো বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ নেই। 

সম্প্রতি কমিউনিটি ও কারা হেফাজতে রাখার সাজা নিয়ে সংশোধিত নির্দেশিকা প্রণয়নে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের সেন্টেন্সিং কাউন্সিলের পরামর্শতেও এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি হাই প্রোফাইল মামলায় গর্ভাবস্থা এবং কারা হেফাজতে মাতৃত্বের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। 

এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১৮ বছর বয়সী রিয়ানা ক্লিয়ারি কারাগারে কারও সহায়তা ছাড়াই সন্তান জন্ম দেন। আইশা ক্লিয়ারি নামে সেই নবজাতক কারাগারেই মারা যায়। 

এ ছাড়া ২০২০ সালে ৩১ বছর বয়সী লুইস পাওয়েল একটি কারাগারের টয়লেটে একা মৃত কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। জেলের নার্স জরুরি কল পেয়েও সাড়া দেননি। 

সরকারি পরিসংখ্যান দেখা যায়, একজন নারী কারাগারে সন্তান প্রসব করলে মৃত সন্তান জন্মানোর আশঙ্কা সাত গুণ বেশি থাকে। 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শোনা মিনসন বলেন, ‘একটি লঘু কারাদণ্ডের অর্থ হতে পারে একজন নারীর তাঁর বাড়ি, চাকরি ও সন্তানদের হারানো। যদি তিনি গর্ভবতী হন, তাহলে সন্তান এবং নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেন। কারণ, জেলখানার মধ্যে সীমিত জায়গা তাঁর ও শিশুর জন্য নিরাপদ নয়।’ 

সন্তানসহ কারাগারে বাস করেছিলেন ৪০ বছর বয়সী সোফি। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গার্ডিয়ানকে বলেন, ছয় বছর আগে গর্ভাবস্থা ও সন্তান প্রসবের কিছু অংশ কারাগারে কাটিয়েছিলেন। সন্তানের জীবনের প্রথম ১৪ মাস কারাগারে মা এবং শিশু ইউনিটে থেকেছেন। 

সোফি বলেন, ‘আমরা খাঁচায় বন্দী পশুর মতো ছিলাম। আমার শিশু কাঁদলে অফিসাররা রাতে ঘরে একটি লাইট জ্বালিয়ে দেন। এটি একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ।’ 

সন্তানের ওপর কারাগারের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে সোফি বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স এখন ছয় বছর। তার আচরণগত সমস্যা রয়েছে। এর জন্য কারাগারের শৈশবকেই দায়ী করছি। আমি জানি না, কীভাবে ছেলেকে তার জীবনের প্রথম ১৪ মাস সম্পর্কে বলব!’ 

লেভেল আপের সহকারী পরিচালক জেনি স্টারলিং বলেন, যদিও সাজা প্রমাণের ভিত্তিতে হতে হবে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নয়। তবুও এটি আদালতকে জানাতে উৎসাহিত করা উচিত, সাধারণ মানুষ মা ও শিশুকে কারাগারে দেখতে চান না। জেল কখনই একটি শিশুর জীবনের সেরা শুরু হতে পারে না। একটি ছোট বাক্যও আজীবন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এ ব্যাপারে বিচার মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রতিটি নারী কারাগারে মা ও শিশুর যোগাযোগ-সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগ, দেখভাল জোরদার, সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং সামাজিক পরিষেবা সহায়তার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত