Ajker Patrika

বিপ্লবী এক নারী সাহিত্যিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বিপ্লবী এক নারী সাহিত্যিক

১৯০৭ সালে বিক্রমপুরে এক বৈদ্য পরিবারে জন্মান বিপ্লবী ও সাহিত্যিক কমলা দাশগুপ্ত। এরপর পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন।

১৯২৪ সালে ঢাকার ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয় থেকে প্রবেশিকা পাস করে কলকাতায় ফিরে বেথুন কলেজে ভর্তি হন কমলা। ১৯২৮ সালে সেখান থেকে বিএ পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইতিহাসে এমএ পাস করেন। সেখানে পড়া অবস্থাতেই যুগান্তর দলের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সে সময় তিনি দীনেশ মজুমদারের কাছে লাঠিখেলা শিখতে শুরু করেন। ১৯২৯ সালে গান্ধীর অহিংসবাদ ছেড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য রসিক লাল দাসের প্রেরণায় যুগান্তর দলে যোগ দেন কমলা। ১৯২২ সালে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টাকারী বীণা দাসকে রিভলবার সরবরাহ করেন তিনি।

১৯৩২ থেকে ৩৮ সাল পর্যন্ত কমলা দাশগুপ্ত প্রেসিডেন্সি ও হিজলী বন্দিনিবাসে আটক থাকেন এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। ১৯৩০ সালে তিনি বাড়ি ছেড়ে দরিদ্র নারীদের জন্য তৈরি একটি হোস্টেলের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি নেন। দাঙ্গাবিধ্বস্ত নোয়াখালীতে ত্রাণ বিতরণের কাজ করেছেন এই বিপ্লবী। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ছাড়াও ‘মন্দিরা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন কমলা। দেশভাগের পরে লিখেছিলেন আত্মজীবনী এবং একটি গবেষণামূলক বই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আবারও অস্কারে নারী নির্মাতার সিনেমা পাঠাল সৌদি আরব

বিনোদন ডেস্ক
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২৩
‘হিজরা’ সিনেমার দৃশ্য
‘হিজরা’ সিনেমার দৃশ্য

সৌদি আরবের চলচ্চিত্রে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাম শাহাদ আমিন। এই নারী নির্মাতার হাত ধরে সৌদি সিনেমা পৌঁছে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ২০১৯ সালে প্রথম তাঁর নামটি ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হয় ‘স্কেলস’ সিনেমার কল্যাণে। এর আগে বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য বানালেও স্কেলস ছিল তাঁর প্রথম সিনেমা। প্রথম কাজেই ভেনিস, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, তাইপে, সিডনিসহ অনেক শহরের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হন শাহাদ আমিন।

পরের বছর ৯৩তম অস্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য স্কেলস সিনেমাটি পাঠায় সৌদি আরব। ৯৮তম অস্কারেও সৌদি আরবের প্রতিনিধিত্ব করবে শাহাদ আমিনের সিনেমা। তাঁর নতুন সিনেমা ‘হিজরা’ এ বছর ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়। সেরা এশিয়ান সিনেমা হিসেবে নেটপ্যাক পুরস্কারও জেতে। গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলোয় হিজরা সিনেমাকে ঘিরে দর্শক-সমালোচকদের আগ্রহ অনেক। তাই হিজরাকেই ৯৮তম অস্কারের জন্য নির্বাচিত করেছে সৌদি ফিল্ম কমিশন।

শুধু স্কেলস কিংবা হিজরা নয়, এর আগেও নারী নির্মাতার সিনেমা অস্কারে পাঠিয়েছে সৌদি আরব। এ পর্যন্ত অস্কারে ৮টি সিনেমা পাঠিয়েছে দেশটি, তার মধ্যে চারটিই নারী নির্মাতার। সৌদি সিনেমার অস্কারযাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। ওই বছর পাঠানো হয় নারী নির্মাতা হাইফা আল-মানসুরের ‘ওয়াজদা’। ২০১৯ সালেও এ নির্মাতার ‘দ্য পারফেক্ট ক্যান্ডিডেট’ অস্কারের জন্য নির্বাচিত করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

আগের সিনেমাগুলো দিয়ে অস্কারে সৌদি সিনেমার তেমন সাফল্য না এলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন হবে বলে আশা করছে সৌদি ফিল্ম কমিশন। শাহাদ আমিনের হিজরা যেভাবে প্রশংসিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে, তাতে এ প্রত্যাশা একেবারেই অমূলক নয়। সৌদি সিনেমার টার্নিং পয়েন্ট বলা হচ্ছে এ সিনেমাকে।

হিজরা সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে তিন নারী চরিত্রকে ঘিরে। ১২ বছর বয়সী জান্নাত তার দাদির সঙ্গে হজ পালনের জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা হয়। জান্নাতের বড় বোন সারাহও সঙ্গী হয়। যাত্রাপথে নিখোঁজ হয় সারাহ। তাকে খুঁজতে থাকে দাদি ও জান্নাত। ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে দাদির অতীতের গল্পগুলো।

হিজরা নির্মাতা শাহাদ আমিন বলেন, ‘চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমার সবচেয়ে আগ্রহের বিষয় হচ্ছে, সমাজের কণ্ঠস্বরগুলোকে তুলে আনা। হিজরা সিনেমায়ও আমি চেষ্টা করেছি আমার সংস্কৃতি ও সমাজের গল্প তুলে আনতে, আন্তর্জাতিক সিনেমায় যা একেবারেই অজানা বিষয়। সৌদি আরবকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছি। বিভিন্ন প্রজন্মের নারীর কাছে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কী রকম, সেটা দেখিয়েছি।’

সৌদি আরবের সমাজ বিশেষ করে নারীদের সম্পর্কে বহির্বিশ্বের যে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিটি সিনেমায় সেটাকেই চ্যালেঞ্জ করেন শাহাদ আমিন। তিনি বলেন, ‘একজন আরব নির্মাতা হিসেবে, বিশেষ করে একজন নারী নির্মাতা হিসেবে অনেক প্রশংসা পেয়েছি। সে জন্য কৃতজ্ঞতা। তবে সেই সঙ্গে কিছু ভুল ধারণার মুখোমুখিও হতে হয় আমাকে। অনেকে মনে করেন, সৌদি নারীরা, বিশেষ করে আমার মায়ের প্রজন্ম কিংবা আমার দাদির প্রজন্ম বা তারও আগের প্রজন্মের সৌদি নারীরা যথেষ্ট স্বাধীন ছিলেন না। অথচ তাঁরা আমার চেয়েও প্রাণবন্ত ছিলেন, শক্তিশালী চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আমার এই সিনেমা সৌদির সব প্রজন্মের নারীদের গল্প বলে। তাদের স্বাধীনতার দিকটি হাজির করে।’

জেদ্দায় জন্ম নেওয়া শাহাদ আমিন চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট লন্ডনে। নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমি থেকেও নিয়েছেন চিত্রনাট্যের পাঠ। এর আগে ‘আওয়ার ওন মিউজিক্যাল’, ‘লায়লাস উইন্ডো’, ‘আই অ্যান্ড মারমেইড’সহ বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে নিয়মিত সৌদি সিনেমার প্রতিনিধিত্ব করছেন শাহাদ আমিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম

‘জুলাই সনদে নারীর আকাঙ্ক্ষা নিদারুণভাবে অনুপস্থিত’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘জুলাই সনদে নারীর আকাঙ্ক্ষা নিদারুণভাবে অনুপস্থিত’

জুলাই সনদ সবার জন্য হয়নি বলে অভিযোগ করেছে নারী অধিকার সংগঠন ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় জুলাই সনদ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের সব গণতন্ত্রকামী নাগরিকের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। কিন্তু এই সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগতভাবে দেশের জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকে অগ্রাধিকার না দেওয়া এবং একই সঙ্গে অন্যান্য সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না করার অবধারিত পরিণাম যা হওয়ার কথা ছিল, ঠিক তা-ই হয়েছে; জুলাই সনদ সবার জন্য হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বাছাইয়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনসহ, শ্রম, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা বা সুপারিশমালাকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।

নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম মনে করে, সত্যিকারের সদিচ্ছা থাকলে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে এক-তৃতীয়াংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেত। নাগরিক পরিসর থেকে নানানভাবে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে অনেক যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অক্টোবর ২০২৫-এ প্রকাশিত জুলাই জাতীয় সনদে নারীর অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনা হয়নি।

বিবৃতিতে জুলাই সনদের বিষয়ে বলা হয়, ‘এই সনদে বাংলাদেশের নারীর আকাঙ্ক্ষা নিদারুণভাবে অনুপস্থিত। তাই আমরা এই সনদকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর এ ন্যক্কারজনক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো নারীর সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে, ভবিষ্যতের জন্য কোনো অঙ্গীকার রাখেনি এবং মাত্র ৫ শতাংশ দলীয় মনোনয়ন বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে ২০৪৩ সাল পর্যন্ত সময়ক্ষেপণের পথ বেছে নিয়েছে। এটি কেবল হতাশাজনক নয়, এটি নারীর নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক সমতার দাবির প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা যা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশের নারী ভোটাররা এ বৈষম্যের জবাব দেবে।’

বিবৃতিতে তিনটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—রাজনৈতিক দলে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা, যা পর্যায়ক্রমে ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে। শুধু ২০২৬ সালের নির্বাচনেই সাময়িক বিশেষ বন্দোবস্ত হিসেবে সংরক্ষিত ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন নিশ্চিত করা, জুলাই সনদে এমন একটি ধারা যুক্ত করা, যাতে ২০২৫-এর পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নারীর অর্থপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়া মাচাদো

গণতন্ত্রের অগ্রদূত নাকি হন্তারক

আব্দুর রহমান 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। নোবেল কমিটি তাঁকে নোবেল দেওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, ‘ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা এবং একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন।’

কিন্তু যে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কারণে তিনি নোবেল পেলেন, তাতে আসলে তাঁর অবদান কতটা, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। ২০০২ সালে ভেনেজুয়েলার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ দেশটির সম্পদ এবং ভূমি সংস্কার করে নতুন আইন জারি করেছিলেন। সেই আইন দেশটির কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণিকে সুবিধা দিয়েছিল। সেই সময়ে শাভেজ নতুন পেট্রোলিয়াম আইন করেন। ফলে দেশটিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তেল-গ্যাস উত্তোলন কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, শাভেজের নতুন আইন অনুসারে এক্সন মবিল বা শেভরনের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৬ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত রয়্যালটি দিতে হতো দেশটির সরকারকে। শুধু তা-ই নয়, শাভেজের নতুন আইন অনুসারে যেকোনো তেল বা গ্যাসক্ষেত্রের বেলায় বিদেশি বিনিয়োগে সরকারের অংশীদারত্ব থাকত ন্যূনতম ৫১ শতাংশ।

পশ্চিমা দৃষ্টিতে হুগো শাভেজ খুব একটা গণতান্ত্রিক না হলেও তাঁর করা এসব সংস্কার দেশটির সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর, ২০০২ সালে ভেনেজুয়েলায় একটি অভ্যুত্থান হয়। তাতে ক্ষমতাচ্যুত হন শাভেজ। নেতৃত্বে আসেন ব্যবসায়ী নেতা পেদ্রো কারমোনা। তিনি এসেই একটি ডিক্রি জারি করেন, যা ‘কারমোনা ডিক্রি’ নামে পরিচিত। সেই ডিক্রিতে স্বাক্ষরকারীদের অন্যতম ছিলেন মারিয়া মাচাদো। এই ডিক্রির ফলে দেশটিতে ১৯৯৯ সালে গৃহীত নতুন সংবিধান, দেশটির সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং শাভেজের করা যাবতীয় সংস্কার বাতিল হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের হারানো সুযোগ ফিরে পায়।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং তৎকালীন বুশ প্রশাসন এই অভ্যুত্থানের বিষয়ে অবগত ছিল। কেবল তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ফেরি করা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি ভেনেজুয়েলায় যারা হুগো শাভেজবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিল, তাদের অর্থায়ন করত বলে জানা গেছে সিআইএর নথি থেকে। যাহোক, সেই অভ্যুত্থান খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মাত্র ৪৭ ঘণ্টার মধ্যেই শাভেজ তাঁর হারানো ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন।

এরপরও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে মাচাদো ও হুগো শাভেজবিরোধী শিবিরকে অর্থ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে গেছে বলে অভিযোগ আছে। কেবল তা-ই নয়, লাতিন আমেরিকার বেশির ভাগ দেশের মতো ভেনেজুয়েলাও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে এবং ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে ছিল। ২০০৮-০৯ সালে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর শাভেজ দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কিন্তু মাচাদো দিনের পর দিন খোলামেলাভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছেন।

কিছুদিন আগে মাচাদো ইসরায়েলি এক চ্যানেলকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এবং বলি, আমাদের সরকার ইসরায়েলে অবস্থিত দূতাবাসটি জেরুজালেমে স্থানান্তর করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, একদিন ভেনেজুয়েলা ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। সেটি হবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের সমর্থনের অংশ।’ এখানেই শেষ নয়, মাচাদো ইসরায়েলের কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টির কট্টর সমর্থকও।

গত সেপ্টেম্বরে মারিয়া কোরিনা মাচাদো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যারিবীয় অঞ্চলে ভেনেজুয়েলার সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগের জোরালো সমর্থক হয়ে ওঠেন। তিনি ওই সময় দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো

পুরো অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের ‘নিরাপত্তা হুমকি।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে মাচাদো বলেন, ‘এটা জীবন-মরণের প্রশ্ন। ভেনেজুয়েলাবাসীর জীবন শুধু নয়, আমেরিকানদের জীবনও রক্ষা করা দরকার। কারণ, মাদুরো মাদক-সন্ত্রাসবাদের এক সহযোগী কাঠামোর প্রধান।’

ফলে নোবেল কমিটি যখন গাজায় ফিলিস্তিনিদের জীবনের অধিকার অস্বীকার করা এবং নিজ দেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে শামিল থাকা ব্যক্তিকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব ডেমোক্রেসি’ আখ্যা দিয়ে পুরস্কারে ভূষিত করে,

তখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, নোবেল আসলে কাদের দেওয়া হচ্ছে!

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নারীর নিরাপত্তার জন্য জেসমিন পাথেইয়ার ব্ল্যাঙ্ক নয়েজ

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জেসমিন পাথেইয়া শুধু একজন শিল্পী কিংবা উদ্যোক্তা নন; তিনি ভারতের রাস্তায় নারীদের প্রতি হয়রানি এবং লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার এক সাহসী কণ্ঠস্বর। কলেজজীবনে নিজে রাস্তায় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, পরিবর্তন আনার জন্য শুধু ক্ষোভ বা অভিযোগ যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সচেতনতা, সংগঠিত প্রচেষ্টা এবং সমাজের সমর্থন। ২০০৩ সালে তিনি এই উপলব্ধি থেকে শুরু করেন ব্ল্যাঙ্ক নয়েজ নামের একটি সামাজিক আন্দোলন। এটি নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভুক্তভোগীদের সমর্থন দিতে কাজ করে যাচ্ছে।

১৯৭৯ সালের ১১ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন জেসমিন পাথেইয়া। তিনি বেঙ্গালুরুর সৃষ্টি স্কুল অব আর্ট, ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ফাইন আর্টসে স্নাতক সম্পন্ন করেন। কলেজজীবনে রাস্তায় নারীদের প্রতি হয়রানির অভিজ্ঞতা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

ব্ল্যাঙ্ক নয়েজ: উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম

ব্ল্যাঙ্ক নয়েজ মূলত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নারীদের প্রতি হয়রানি, লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতা এবং ভিকটিম ব্লেমিংয়ের বিরুদ্ধে কাজ করে।

এই সংগঠন বিভিন্ন সৃজনশীল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে সচল আছে ব্ল্যাঙ্ক নয়েজ। মূলত এই সংগঠন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। ব্ল্যাঙ্ক নয়েজের কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক নারীর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

এ ছাড়া এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা কমানোর লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

জেসমিন পাথেইয়া ও ব্ল্যাঙ্ক নয়েজ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছে। ২০১৫ সালে ‘টক টু মি’ প্রকল্পের জন্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড অব পাবলিক আর্ট লাভ করে। ২০১৭ সালে সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউর অব দ্য ইয়ার পুরস্কারে ভূষিত জেসমিন। এ ছাড়া তিনি অশোক ফেল ও টিইডি ফেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

জেসমিন পাথেইয়া ব্ল্যাঙ্ক নয়েজের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে চান। তিনি একটি নিরাপদ এবং সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো এই আন্দোলনকে আরও বিস্তৃত করা এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সূত্র: ব্ল্যাঙ্ক নয়েজ ডট ওআরজি, সিআইএস ইন্ডিয়া ডট ওআরজি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত