Ajker Patrika

সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের অর্ধেকই চট্টগ্রামের জন্য

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ১৫: ৩০
সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের অর্ধেকই চট্টগ্রামের জন্য

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মোট ১০টি সভা করেছে। এসব সভায় সারা দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে। এই উন্নয়ন বরাদ্দের অর্ধেকই ব্যয় হবে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের জন্য।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর। এরপর গত ২৪ মে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছে ১০তম একনেক সভা। এ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ৫০ হাজার ৭৭ কোটি টাকার ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক, যার মধ্যে রয়েছে মেগা প্রকল্পও। প্রকল্পগুলো বৈদেশিক ঋণনির্ভর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরের নাগরিক সমস্যার পাশাপাশি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সমস্যা সমাধানে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের নাগরিক দুর্ভোগ যেমন দূর হবে, নগর-পরিকল্পনার ঘাটতি এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতাও অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি—এমন উপলব্ধি থেকেই সরকার চট্টগ্রামকেন্দ্রিক মহাপরিকল্পনা নিয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তা দেশের স্বার্থেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় প্রতিটি একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো মেগা প্রকল্প নেবে না। তবে বাস্তব চিত্র হলো, এরই মধ্যে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দুটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। এর একটি হলো চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম সড়কসেতু নির্মাণ প্রকল্প। ইউনূস সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভায় অনুমোদিত এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। একনেকের অষ্টম সভায় চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৫ হাজার ১৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প ও ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কাট্টালী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর গড়তে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বিগত সরকার। তাই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে চট্টগ্রামের বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা বলছি, মেগা প্রকল্প নিচ্ছি না, তবু দেশের স্বার্থে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে এগুলো খুব বড় প্রকল্প নয়। তালিকায় অনেক মেগা প্রকল্প ছিল, সেগুলো নিচ্ছি না।’

কোন প্রকল্পে কত টাকা বরাদ্দ

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেকের প্রথম সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি টাকার চার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয় ৪০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে ইউনিসেফ অনুদান হিসাবে ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা দেবে।

২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর একনেকের তৃতীয় সভায় ৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ‘চট্টগ্রাম পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প’-এর জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ওয়াসার এই প্রকল্পে ৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

চলতি বছরের প্রথম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ৮ জানুয়ারি। বর্তমান সরকারের পঞ্চম ওই একনেক সভায় ৪৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদন করা হয়।

সরকারের ষষ্ঠ একনেক সভায় ১৩টি প্রকল্পের জন্য ১২ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দুটি প্রকল্পও রয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হলো, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। একই সভায় ২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন করা হয় বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প।

চলতি বছরের ২৩ মার্চ সরকারের সপ্তম একনেক সভায় ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এই সভায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬২২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ওয়াসার চট্টগ্রাম মহানগরীর কালুরঘাট এলাকায় পয়োশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।

গত ২০ এপ্রিল সরকারের অষ্টম সভায় ১৬টি প্রকল্পের ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকায় চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন (প্রথম পর্যায়) প্রথম সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন হয়। একই সভায় ৩ হাজার ৯২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।

ইউনূস সরকারের নবম একনেক সভায় চট্টগ্রামের ৩৬টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) ও চট্টগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্প দুটির ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ১৩২ ও ৩৯৪ কোটি টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও কর্মীদের সাফল্য উদ্‌যাপনে আবুল খায়ের স্টিলের ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল (একেএস) ৬ ডিসেম্বর তাদের সব কর্মীকে নিয়ে ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে আবুল খায়ের স্টিলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। নামাজ ও খাবারের বিরতির পর একেএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবার উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কোম্পানির সাম্প্রতিক অর্জন ও মাইলফলকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রড একেএস টিএমটি বি৭০০ সি-আরের সফল উৎপাদন। বিশ্বের দ্রুততম রোলিং মিল স্থাপন। একেএস এবং কাউ ব্র্যান্ড কালার কোটেড স্টিলের মর্যাদাপূর্ণ সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন।

এই আলোচনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কর্মীদের সম্মিলিত সাফল্যের প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র পর্বটি উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পী জেমসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ও লেজার শো উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সমাপনী ভাষণে একেএস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান হয়। এরপর নৈশভোজ ও ডিজে সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডসিম্বের) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম জুবায়দুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সলিরে সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকের নিট মুনাফা ছাড়া উৎসাহ বোনাস বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা অর্জন না করলে কোনো ব্যাংকই আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন সংরক্ষণ ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি বা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেই বোনাস দেওয়ার পথও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আনরিয়েলাইজড বা নগদায়ন না করা আয়ের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাই এখন থেকে শুধু নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করতে পারলেই উৎসাহ বোনাস দেওয়ার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো।

আরও বলা হয়, পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। রেগুলেটরি মূলধন বা প্রভিশনের ঘাটতি থাকলে বোনাস দেওয়া নিষিদ্ধ। প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাওয়া ব্যাংকগুলোও সেই সময়কাল মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে দেখাতে পারবে না। বোনাস প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নতি ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান সাফল্য বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে, যেখানে নিট মুনাফা ছাড়া বোনাস না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ বোনাসের জন্য আবেদন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৩
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক নতুন পর্যায়ে এগোচ্ছে। মাত্র একটি ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহারও শুরু করেছে।

এনবিআর জানিয়েছে, শিগগির এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু করা হবে, যাতে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের আওতায় আসে এবং নিবন্ধন ছাড়া আর কেউ ব্যবসা চালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, দেশের বড় একটি অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আগামী বছর এমন একটি মেকানিজম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসার সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৪৪ হাজার; লক্ষ্য আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তা ৩০ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা। শুধু চলতি মাসেই ১ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য—‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’—ধরে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে ভ্যাট দিবস পালিত হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চলবে ভ্যাট সপ্তাহ। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বছরও স্থগিত থাকছে ভ্যাট পুরস্কার।

রিটার্ন জমাদানেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানান মো. আবদুর রহমান খান। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়লেও চলতি অর্থবছরে তা ৪০ লাখে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ২২ লাখ রিটার্ন। ভ্যাট আদায়েও গতি এসেছে—গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই ভ্যাট আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করদাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-রিটার্নে ব্যবহৃত ব্যাংকসংক্রান্ত চারটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান আবদুর রহমান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতারা মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দেখতে পারবেন—এটি ভুল ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাস্তব প্রয়োজন থেকেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ। তবে কারও ওপর হয়রানি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না; মূলত যাঁরা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই কঠোরতা বাড়ানো হবে।

আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; এককভাবে এনবিআর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত