Ajker Patrika

রহস্যময় আলাস্কা ট্রায়াঙ্গল থেকে ৫৩ বছরে হারিয়ে গেছে ২০ হাজার মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭: ২৩
Thumbnail image

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কথা নিশ্চয় শুনেছেন। আটলান্টিক মহাসাগরের ওই অঞ্চল থেকে রহস্যময়ভাবে হরিয়ে যায় জাহাজ, উড়োজাহাজ। আজ শুনবেন ‘আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলে’র গল্প। ১৯৭০ সাল থেকে ওই এলাকায় নিখোঁজ হয়েছেন ২০ হাজার মানুষ। তেমনি ইউএফও আর বিগ ফুট দেখা যাওয়ার নানা কাহিনি ডালপালা মেলেছে জায়গাটিকে ঘিরে। 

আলাস্কার জুনাও, অ্যাংকোরেজ এবং ছোট্ট শহর বারওয়ের মধ্যে অবস্থিত ত্রিভুজাকার এলাকাটি আলাস্কা ট্রায়াঙ্গল নামে পরিচিতি পেয়েছে। আলাস্কার অন্য সব অঞ্চলের মতো এখানেও জনবসতি কম। কিন্তু মানুষ নিখোঁজের হার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলের দ্বিগুণের বেশি। অসংখ্য অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটার গল্পও শোনা যায় এই এলাকায়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতোই শক্তিশালী তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ ও ভিনগ্রহের প্রাণীদের এর জন্য দায়ী করেছেন কেউ কেউ। এসব তথ্য উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে। সেখানে ধারণা করা হয় ১৯৭০ সাল থেকে গত ৫৩ বছরে জায়গাটি থেকে হারিয়ে গেছেন ৫০ হাজার মানুষ। অবশ্য এই সংখ্যা নিয়ে কিছুটা মতভেদ আছে।

এই এলাকাটি নিয়ে প্রচলিত আছে নানা ধরনের কিংবদন্তি। এর মধ্যে আছে ‘সাসকুয়াচ’ বা ‘বিগফুটে’র মতো প্রাণীদের বিভিন্ন শহরে আতঙ্ক ছড়ানোর গল্পও। যেমন কেনাই পেনিনসুলার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত পোর্টলক নামের এক শহরকে ঘিরে জন্ম নেওয়া সেই কাহিনিটির উদাহরণ টানা যায়। শহরটি ১৯৫০- এর দশকে পরিত্যক্ত হয়। কথিত আছে ‘নানতিনাক’ নামের একটি অচেনা প্রাণী শহরের বাসিন্দাদের আক্রমণ করে মেরে ফেলছিল। 

আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলের সীমানায় পড়েছে ডানালি ন্যাশনাল পার্কসাম্প্রতিক বছরগুলোতেও আলাস্কা ট্রায়াঙ্গল থেকে অনেক মানুষ রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও আলাস্কার কেবল এক শতাংশ এলাকায় মানব বসতি আছে, তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো রাজ্যের তুলনায় এখানে মানুষ নিখোঁজের হার বেশি। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিওর দেওয়া তথ্য বলছে এই সংখ্যা প্রতি লাখে ৪২.১৬ জন। এদিক থেকে এর পরের অবস্থানে অ্যারিজোনা, তবে এর বেলায় সংখ্যাটি লাখে ১২.২৮। এ ক্ষেত্রে দেশের গড় কেবল ৬.৫। 

প্রথম যে অন্তর্ধানের ঘটনা আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলের প্রতি মানুষের মনে কৌতূহলের জন্ম দেয় সেটি ঘটে ১৯৭২ সালে। মার্কিন কংগ্রেসম্যান হেল বোগস, নিক বেগিচ, তাঁদের একজন সহকারী এবং পাইলট একটি সন্দেহভাজন এক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পরে নিখোঁজ হন। অ্যাংকোরেজ থেকে জুনাও যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু ৪০ দিনের অনুসন্ধান অভিযানে কারও শরীর তো পাওয়া যায়ইনি, এমনকি মেলেনি উড়োজাহাজটির কোনো ধ্বংসাবশেষ। 

এবার তুলনামূলক সাম্প্রতিক একটি নিখোঁজের ঘটনা। ২০১৯ সালের জুনে ৩ তারিখ আলাস্কার ফেয়ারব্যাংকসে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হন ৪৩ বছর বয়স্ক শ্যানান ওমান। এক বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফেরার কথা ছিল এই নারীর। কিন্তু সে পরিকল্পনা আর আলোর মুখ দেখেনি। নিজের কাপড়-চোপড় আর প্রিয় কুকুরটাকে রেখেই কোথাও চলে যান তিনি। হেলিকপ্টার ও প্রশিক্ষিত কুকুরের সাহায্যে বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোনো সন্ধান মেলেনি। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন। 

এমনকি উদ্ধারকাজে প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরাও এই এলাকায় নিরাপদ নন। ২০১১ সালে অভিজ্ঞ পর্বতারোহী ও দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকাজে পটু ৪৩ বছর বয়স্ক জেরাল্ড ডিবেরি ফেয়ারব্যাংকসের ৭০ মাইল উত্তরে অবস্থিত হোয়াইট মাউন্টেনসের উদ্দেশে বের হন একটি দল নিয়ে। একজন নিখোঁজ নারীর খোঁজ করাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু অভিযান শেষে আর ঘরে ফিরতে পারেননি ডিবেরি। এক বছর বাদে ইঞ্জিন বন্ধ অবস্থায় তাঁর এটিভি বা অলটেরেইন ভেহাইকলটি খুঁজে পাওয়া গেলেও এর মালিকের খোঁজ মেলেনি আর কখনোই। 
 
২০১১ সালে পার্বত্য এলাকায় নিখোঁজ একজন নারীকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই নিখোঁজ হোন জেরাল্ড ডিবেরিষড়যন্ত্রসহ নানা ধরনের তত্ত্বই এসেছে এই এলাকা থেকে এত বেশি সংখ্যার মানুষের অন্তর্ধানের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে। কিন্তু এমন কোনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি যাতে ভেদ হয় রহস্য। 

মাঠ গবেষক কেন গেরহার্ড হিস্ট্রি চ্যানেলকে বলেছেন যে ত্রিভুজটি একটি ‘ভাইল ভরটিস’ হতে পারে। এমন এলাকার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এসব এলাকায় অনেক বেশি তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি কাজ করে বলে জানান তিনি। গেরহার্ড বলেন, ‘তত্ত্বটি হলো এলাকাটি ভূ-তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তির প্রভাবে অত্যধিক আয়নিত হয়। আর তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তির প্রাচুর্য অস্বাভাবিক কিছু ঘটনার জন্ম দেয়।’ 

ডিসকভারি চ্যানেলের নতুন এক তথ্যচিত্রে এখানে আশ্চর্য সব অভিজ্ঞতা হওয়া মানুষদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এদের মধ্যে আছেন ওয়েস স্মিথ। যিনি কোনো শব্দ না করে অদ্ভুত একটি ত্রিভুজাকার বস্তুকে উড়তে দেখেন। স্মিথ বলেন, ‘এটা এমন যে আপনি যা শিখেছেন, তা মুহূর্তে জানালা গলে হারিয়ে গেল, না হলে এটা কীভাবে সম্ভব হয়?’ 

ইউএফও (আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট) বিশেষজ্ঞ ডেবি জিগেলমেয়ার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারকে বলেছেন যে আলাস্কার বিরল জনসংখ্যা যেন এর মধ্যে ‘পৃথিবীর বাইরের’ কিছু একটার অনুভূতির জন্ম দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। 

'তারা (ইউএফও) যেখানে চায় সেখানে যেতে পারে’ বলেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের ইউএফও দেখা যাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করা মার্কিন প্রতিষ্ঠান মাফনে’র অনুসন্ধানকারী ডেবি, ‘এটাই আলাস্কার আকর্ষণ’। 

আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ২০ শৃঙ্গের ১৭টির অবস্থান। মাফন বিশ্বাস করে যে ভিনগ্রহের বাসিন্দারা আলাস্কার ট্রায়াঙ্গলজুড়ে মার্কিন বিভিন্ন সামরিক প্রযুক্তিতে গুপ্তচরবৃত্তি করার সম্ভাবনা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউএফও দেখার হার বৃদ্ধি পাওয়া এ ইঙ্গিতই নির্দেশ করে। 

ফেয়ারব্যাংকস শহরটিও কিন্তু পড়েছে রহস্যময় আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলের এলাকায়আলাস্কা থেকে মনটানা যাওয়ার পথে সামরিক বাহিনীর ৪৪ জন সদস্যসহ একটি ডগলাস সি-৫৪ স্কাইমাস্টার উড়োজাহাজ হারিয়ে যাওয়াটা এই এলাকার সবচেয়ে বড় রহস্যগুলির মধ্যে একটি। কানাডীয় এবং আমেরিকান কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে বড় যৌথ অনুসন্ধান এবং উদ্ধার অভিযানগুলোর একটি পরিচালিত হলেও কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি ওই উড়োজাহাজ কিংবা এর যাত্রীদের। 

এদিকে ক্রিপ্টোজুলজিস্ট ক্লিফ বারাকম্যান মন্তব্য করেন আলাস্কার প্রান্তরে ‘যেকোনো আকারের যেকোনো কিছু’ লুকিয়ে থাকা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ‘এত চমৎকার আবাসস্থল এবং এত কম লোকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে সাসকুয়াচদের বিচরণের জন্য জায়গাটি আদর্শ।’ এখানে বলে রাখা ভালো, কিংবদন্তির এবং হারিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয় এমন প্রাণীদের বাস্তব অস্তিত্বের খোঁজ করেন যারা তাঁরা ক্রিপ্টোজুলজিস্ট নামে পরিচিত। 

তবে ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন আলাস্কার এই ত্রিভুজাকৃতি এলাকা ঘিরে যে বড় একটা রহস্য আছে তাতে সন্দেহ নেই। রহস্যপ্রেমী হলে রহস্য সমাধানে নেমে পড়তে পারেন! তবে খুব সাবধান! নিজেই আবার রহস্যময় আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে যাবেন না যেন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত